আশা-নিরাশার দোলাচল

প্রতীকী ছবি
আমাদের বুঝতে হবে যে পৃথিবী খুব সুন্দর। সুন্দর আমাদের জীবন। চলার পথের বাঁকে বাঁকে ভুল করে, লোভ করে, মাত্রাতিরিক্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষায় আমরা মানুষেরাই এত সুন্দর পৃথিবী ও জীবনকে জটিল ও অসুন্দর করে তুলি।

আশা-নিরাশা, প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির দোলাচলে মানুষের জীবন কেটে যায়। বেশির ভাগ মানুষ কখনোই একটা নির্দিষ্ট বস্তু কিংবা মানুষে তৃপ্ত থাকতে পারে না। যেমন যার কাছে যে জিনিস অথবা মানুষ মূল্যহীন, অন্যের কাছে সে জিনিস আর মানুষ কিন্তু অমূল্যও হয়ে থাকে। একজন যে বস্তুকে অপ্রয়োজনীয় ভেবে অবহেলায় ঘরের কোণে পুরোনো আসবাবের মতো অযত্ন করছে, কিংবা যাকে নিখাদ প্রেমের বিনিময়ে কেবল তাচ্ছিল্যের সঙ্গে ঘৃণায় দূরে ঠেলে দিচ্ছে; অন্যদিকে সেই অবহেলিত বস্তু বা সেই তাচ্ছিল্য পাওয়া মানুষের প্রেমের আকাঙ্ক্ষায় অন্য কেউ হয়তো হাহাকার করে মরছে। পারিপার্শ্বিকতা নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় এটাই যেন মানবজীবনের স্বাভাবিকতা।

আসলে পৃথিবীটা বড় অদ্ভুত জায়গা। পৃথিবীর চেয়ে বেশি অদ্ভুত মানুষ ও মানুষের মনমানসিকতা। বেশির ভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই কোনো কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হয়ে গেলে কাঙ্ক্ষিত জিনিস কিংবা মানুষকে কিছুদিনের ভেতর পুরোনো লাগতে শুরু করে। প্রিয় জিনিস হোক বা মানুষ, তার প্রতিও কয়েক দিনের মধ্যেই চলে আসে অনীহা। আবারও মনে ও মস্তিষ্কে নতুন কিছু প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা পেয়ে বসে। মানুষের ছোট জীবনটা বেশির ভাগ সময়ই বিপরীতমুখী চলনে যাপিত হয়। সরলপথে সহজভাবে জীবনে অনেক ক্ষেত্রেই বস্তু বা আবেগ–অনুভূতির স্থান হয় না। অনেক জটিলতা কাটিয়ে ঝড়ঝাপটা সয়ে জীবনে সফলতা আসে। তারপরও যেন কিছু অপূর্ণতা রয়ে যায়, যা নিরাশার অন্ধকারে বিষণ্নতায় হৃৎপিণ্ডকে অহেতুক ঘুণপোকার মতো কুড়ে কুড়ে খায়।

আমাদের বুঝতে হবে যে পৃথিবী খুব সুন্দর। সুন্দর আমাদের জীবন। চলার পথের বাঁকে বাঁকে ভুল করে, লোভ করে, মাত্রাতিরিক্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষায় আমরা মানুষেরাই এত সুন্দর পৃথিবী ও জীবনকে জটিল ও অসুন্দর করে তুলি। জীবনে চাওয়ার কোনো শেষ নেই। অধিক আকাঙ্ক্ষায় জীবন খুব অস্থির হয়ে ওঠে। আকাঙ্ক্ষার অপ্রাপ্তিতে পৃথিবী হয়ে ওঠে বিষাদময়। মন তখন বিষণ্নতার আঁধারে ডুবে যায়। মনে রাখতে হবে, জীবন বিধাতার দেওয়া এক নিয়ামত। অল্পে সন্তুষ্ট থেকে এবং সব সময় নিজের চেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে নিজেকে ভাবতে জানলে জীবন চলার পথ সরল ও মসৃণ হয়। সততার সঙ্গে চলে নিজের রুচিবোধ সুন্দর ও শুদ্ধ রেখে ইচ্ছা করলেই জীবনকে স্বার্থক ও সুখী করে তোলা খুব বেশি কঠিন নয়। পৃথিবী ও প্রকৃতি তখন অনেক সুন্দর হয়ে ধরা দেয় অন্তরে ও বাইরে।

তাই অপ্রাপ্তির অপূর্ণতা গুনে হতাশ না হয়ে ছোট ছোট প্রাপ্তি নিয়ে পূর্ণতার আনন্দে জীবনের পথ চলার কৌশল শিখতে হবে। মনে নেতিবাচক ভাবনা না এনে ইতিবাচক বোধকে লালন করতে হবে। মনটাকে অস্থির না করে বরং বোঝাতে হবে যে নিজের যা আছে, তাকে মূল্য দিয়ে সযত্ন আগলে রাখাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। বোধ ও বিবেককে উপলব্ধি করাতে হবে, আমার যা আছে, তা হয়তো আর দশজনের কাছে নেই। নিরাশা নয়, প্রাপ্তি–অপ্রাপ্তিকে সঙ্গে নিয়ে দুচোখে সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন সাজিয়ে একবুক আশায় সুস্থ মনে শুদ্ধ জীবনে সুখে-দুঃখেই বাঁচতে হবে।

সেক্টর ১৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০