আজ বিষণ্নতার ছুটি

আজকাল ‘মন ভালো নেই’ কথাটি একটি সংক্রামক ব্যাধির মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছেছবি: অধুনা

‘বিষাদ ছুঁয়েছে আজ/
মন ভালো নেই/ মন ভালো নেই/
ফাঁকা রাস্তা, শূন্য বারান্দা/
সারাদিন ডাকি সাড়া নেই...।

বিষণ্নতা উপজীব্য করে রোমান্টিক প্রেমের কবি মহাদেব সাহা লিখেছেন এ লাইনগুলো। কবিতা ও সাহিত্যের এমন রোমান্টিক ভাব যদি বাস্তব জীবনে ঘরের ছেলেমেয়েদের মধ্যে চলে আসে, তখন কিন্তু চরম বিপদ। মন ভালো না থাকা একসময় ছিল আকস্মিক ঘটনা। ব্যক্তি, প্রেম বা চাকরিজীবনের অসফলতার জন্য ‘মন ভালো নেই’ বলে কেউ কেউ কিছুদিন চুপচাপ থাকতেন। তবে আজকাল ‘মন ভালো নেই’ কথাটি একটি সংক্রামক ব্যাধির মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। ‘ভাল্লাগে না’ প্রবণতা ভয়ংকরভাবে বেড়েছে; যা শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীদের জীবন বিষিয়ে তুলছে।

অনেক মা–বাবা তাঁদের কর্মজীবনের নানা ব্যস্ততায় সন্তানের খোঁজ রাখতে পারেন না। আর তখনই চরম একাকিত্ব ও হতাশায় সন্তানের মনের গভীরে এক কালো জগৎ তৈরি করে।  যা পরবর্তী সময়ে মাদক গ্রহণ বা আত্মঘাতী প্রবণতায় রূপ নেয়। সন্তানের চরম ক্ষতি হওয়ার পর অনেক মা–বাবার টনক নড়ে। কিন্তু ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে যায়। তাই বিষয়টি সামাজিক ও পারিবারিকভাবে নজরদারি করার পাশাপাশি সন্তানের মানসিক ও শারীরিক সুস্বাস্থ্যের দিকটি খেয়াল রাখা উচিত।

সুস্থ দেহের পাশাপাশি সুস্থ মন যে জরুরি, তা প্রথম অনুধাবন করতে পেরেছিলেন গ্রিক দার্শনিক প্লেটো। তিনি মনকে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন সত্তা হিসেবে গণ্য করেন। তিনি বলেন, দেহের সুস্থতার পাশাপাশি মনের ভেতরেও প্রশান্তি অনুভব করাতে হবে।
শরীর ও মন ভালো রাখতে সুষম মাত্রায় খাদ্যাভ্যাস যেমন জরুরি, তেমনি পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতাও জরুরি। আর এই সচেতনতা বিষণ্ন মন ভালো করে তুলতে পারে।

বিষণ্নতার খারাপ প্রভাব কাটিয়ে উঠতে যুক্তরাজ্যের লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার অ্যাঞ্জি কার্টরাইট ২০১৪ সালের ৩০ আগস্ট প্রথম বিষণ্নতা সচেতন দিবসের প্রচলন করেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল বিষণ্ন মনকে নিজের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে সাহায্য করা। নিজের মনের যত্ন নিজে নেওয়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা।

যদিও মন খারাপের কোনো ওষুধ নেই। তবু একটু সহযোগিতা, একটু ভালোবাসা, একটু সহমর্মিতা ও একটু সাহস দেওয়া কোনো মানুষের বিষণ্নতা দূর করতে সাহায্য করতে পারে। সৌহার্দ্য সময় সুন্দরের দিকে ধাবিত হয়ে বছরের প্রতিটি দিন ভালোবাসায় ভরিয়ে তুলতে পারে।