দূর থেকেই ভালোবেসে যাব

চিঠিছবি: পেক্সেলস

তানু,

তোমাকে চিঠি লিখব ভেবে টেবিলে যখন বসেছিলাম, তখন সূর্য সবে মাথার ওপর থেকে পশ্চিম দিকে ধাবিত হতে শুরু করেছে। আর এখন সন্ধ্যা হবে। ঘড়িতে ৫টা ২৫ বাজে। একটা শব্দও লিখতে পারিনি।

বেকার মানুষ, বাসায় কোনো কাজ নেই। গতকাল ঢাকা থেকে আপুর বাসায় এলাম। চিলেকোঠার ঘরে বসে আছি। সিলিং ফ্যানের শব্দ ছাড়া কোনো আওয়াজ নেই। এসব কেন বলছি? পুরোটা সময় কেবল তোমাতেই ডুবে ছিলাম। প্রায়ই এমন হয়। তোমাকে নিয়ে ভাবতে বুকের ভেতর শূন্য লাগে। বজ্রপাতের মতো প্রবল দহনে বেঁচে থাকার ইচ্ছা হারিয়ে যায়। তারপরও কোনো এক অজানা কারণে পৃথিবীর প্রান্তরে হাসিমুখ নিয়ে ঘুরি।

ফেসবুক প্রোফাইলে গিয়ে তোমার ছবি দেখলে নিস্তার পাই; অন্য দিনগুলোর মতো ভালো অনুভব করি। কিন্তু শরৎ সম্মোহনে অজানা কম্পাঙ্কের মতো ক্রমে মন খারাপ বেড়েই চলেছে। এই অনুভূতি কেন! মান-অভিমান, প্রতিশ্রুতি, এমনকি নিতান্ত প্রত্যাখ্যানের গল্পও আমাদের মধ্যে নেই। তোমাকে কতটা ভালোবাসি কথাটা আজও বোঝাতে পারিনি।

তবে কি মায়ের কথাই সত্যি? মা বলত, কিছু সম্পর্ক ভাড়া করা বাড়ির মতো। তুমি তাকে যতই সাজাও, সে কখনো তোমার হবে না। আসলেই নিজেকে চিনতে পারিনি আমি। ভিতু, বোকা, ঘরকুনো, মন কী চায় বুঝি না। কিন্তু তোমাকে ভালোবাসি, এই বোধ প্রবল। নিশ্চয়ই কথাগুলো শুনে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছ। আচ্ছা, তোমাকে একটা প্রশ্ন করি। তুমি কি কখনো রাজহংস দেখেছ? জানো, দুধের সঙ্গে জল মিশিয়ে দিলে রাজহংস দুধটুকু খেয়ে জল ফেলে রাখে। না, প্রসঙ্গ বদলাতে প্রশ্নটা করিনি। বিবেচনা করে দেখো, আমরা মানুষেরাও রাজহংসের মতো। প্রদীপের আলোটুকু নিয়ে তার ছায়ার প্রতি শত শত অভিযোগ জমা করি। তাই বলতে দ্বিধা নেই, কথাটা তোমাকে বললেও আমার মতো সম্ভাবনাহীন সো-কলড ভালো ছেলেকে ভালোবাসতে না।

দোষারোপ করার উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলছি না। তোমার বিন্দুমাত্র দোষ নেই। প্রত্যেক মানুষ নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী ভালোবাসার মানুষ বেছে নেয়। হয়তো তোমার কাছে আমি সেই যোগ্যতা অর্জন করতে পারিনি। আদৌও কোনো দিন পারব না! তুমি সব সময় বলো...থাক বাদ দিই।

জানো, আমরা মানুষকে সান্ত্বনা দিতেই পারি। যে যায়, সে তোকে কোনো দিন ভালোবাসেনি। কিন্তু আমি তো হঠাৎ তোমাকে ভালোবাসিনি। তোমাকে সেই-ই প্রথম দিন থেকেই ভালোবাসি। ১৪ ডিসেম্বর। বিশ্বাস করো, তার পর থেকে প্রতিদিন কেবল একটি কারণ খুঁজতাম। যে কারণটির জন্য আমাকে তুমি ভালোবাসতে পারো। আমিও জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো।

দেখো, ভালোবাসলেই তো হয় না। ভালো থাকতে হয়, ভালোবাসার চেয়ে ভালো থাকাটাই জরুরি। হয়তো তুমি আমার কাছে ভালো ছিলে না। আমিও চাই তুমি সব সময় ভালো থাকো। তোমার সমকক্ষ একজনকে ভালোবাসো, যাকে তোমার পরিবার মেনে নেবে। যে মানুষটা যথেষ্ট ম্যাচিউরড হবে, সব সময় তোমাকে বুঝতে পারবে। এমন কেউ আসুক তোমার জীবনে।

জানি, এ শহরে আবার আমাদের দেখা হবে। আবার তোমাকে চলে যেতে দেখব। সেই দিনটার কথা ভাবলে একটু বেশিই খারাপ লাগে। আরও বেশি খারাপ লাগবে নিয়তির উদারতায় সফলতার কাছে পৌঁছালে। ওই দিন তোমাকে ছাড়া কেমন করে উদ্‌যাপন করব! ভাবতেই দুই চোখ জলে ভিজে যাচ্ছে। জানি, আমার এ আবেগের মূল্য তোমার কাছে নেই।

আজীবন তুমি আমার কাছে তানু হয়েই থাকবে। দূর থেকেই ভালোবেসে যাব। এ নিয়ে তোমাকে দশখানা চিঠি লিখলাম। আজও একটা চিঠির উত্তর আসেনি। ভালো থেকো তুমি।

বরগুনা সদর, ৮৭০০