শিশুদের আনন্দের হাসি অনেক ভালোবাসি

ভৈরব বন্ধুসভার ‘সহমর্মিতার ঈদ’ কর্মসূচিতে লেখকছবি: আনাস খান

আমার কাছে ঈদ নয়, ঈদের আগে রমজানের পবিত্র দিনগুলোই যেন আনন্দের। যত বড় হচ্ছি, ঈদ কেন উপভোগ করতে পারি না, তা জানা নেই।

যাহোক, এবার আসি ঈদ আনন্দের কথায়, প্রশান্তির কথায়। আট বছর ধরে নিজ হাতে কাছে থেকে ঈদের চাঁদকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসি। কীভাবে? রঙিন জামা ও রঙিন হাসিতে। তাদের হাতে যখন জামা তুলে দিই, তখন ওদের খুশির সঙ্গে আমার মনটাও নেচে ওঠে।

প্রতিবছর ১০ রমজান ঈদের কেনাকাটা শুরু করি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মার্কেটে কাটাই। এক দোকান থেকে আরেক দোকান। এই কয়েক বছরে দোকানিরাও পরিচিত হয়ে গেছেন। আমাকে দেখলেই বলেন, ‘এই যে আপা আইছে, আজ অনেকগুলা জামা নেবে বাচ্চাদের লাইগ্যা’। ৬ মাসের শিশু থেকে শুরু করে ১৫ বা ১৬ বছরের ছেলে ও মেয়েদের জামাকাপড় কিনি। একটি ঝলমলে রঙিন জামা পছন্দ করি আর একটি মুখের হাসির ঝলক কল্পনা করি ওই জামায়। জামা হাতে পাওয়ার পর ওরা কতটা খুশি হবে ভাবতেই সারা দিনের ক্লান্তি চলে যায়।

জামা দেওয়ার আগে মাপ নেওয়ার জন্য বাড়ি বাড়ি যাই। তখন দেখি ওদের ঘরের অবস্থা করুণ, বাবার আয় দিয়ে সংসার চলে কোনো রকম। জামাকাপড় কি আর জুটবে আদৌ! তখন অনেকেই বলে, ‘আফা এবার আমনেরা জামা দিলে কষ্ট কইরা আর টেহা জোগাড় করুন লাগত না। আফা আমনেরা না দিলে আমার ঘরে সব বাইচ্চার জামা কপালে জুটত না।’ তখন মনে মনে বলি, ‘কেন জুটবে না? আমরা বন্ধুসভার বন্ধুরা আছি তো।’

অসহায় মানুষের করুণ আকুতি ছোটবেলা থেকেই আমাকে খুব ভাবায়। শৈশব থেকে দেখছি জাকাতে বড়দের জন্য শাড়ি, লুঙ্গি ও থ্রি-পিস এগুলো দেয়। ছোটদের জন্য কোনো জামার ব্যবস্থা সরাসরি দেখিনি।

বন্ধুসভার প্রতি আমি এককথায় অন্ধ। নিজেকে আরও বেশি জড়িয়ে নিয়েছি এই ‘সহমর্মিতার ঈদ’ আয়োজনে, অন্যতম মানবিক একটি কাজের জন্য। শিশুদের জামা, কারও কারও ঘরে ঈদের বাজার আবার কাউকে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করার সুযোগ তখন ভীষণ পুলকিত বোধ করি। যদি বন্ধুসভা না থাকত আর আমি বন্ধুসভায় না থাকতাম, তাহলে এ কাজটি করার সামর্থ্য আমার থাকত? হয়তো থাকত বা থাকত না। প্রতিবছর বেতনের একটি অংশ রেখে দিই ওদের জন্য, যাদের আনন্দের হাসি প্রচণ্ড ভালোবাসি।

সভাপতি, ভৈরব বন্ধুসভা