কোনো কিছু না করেও দৈনিক আয় ২৫০০০ টাকা!

শোজি মরিমোটো
ছবি: সংগৃহীত

অনেকে কোথাও একা একা যেতে চান না, একজন সঙ্গী হলে ভালো হয়। কিন্তু কাছের পরিচিত কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই ব্যস্ত। আবার পরিচিতদের সঙ্গে সব জায়গায় কমফোর্ট ফিলও হয় না। এমন লোকেরা ক্ষণিকের সঙ্গী হিসেবে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শোজি মরিমোটোকে ভাড়া করেন। তাঁর কাজ কেবল সঙ্গ দেওয়া এবং চুপ থাকা। কেবল ক্লায়েন্ট কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করলেই জবাব দেন শোজি মরিমোটো, অন্যথায় চুপ থাকেন। বিনিময়ে প্রতি সেশনের জন্য ১০ হাজার ইয়ন (প্রায় সাড়ে ৮ হাজার টাকা) নেন এই ব্যক্তি। সঙ্গে ভ্রমণসহ অন্যান্য খরচ তো আছেই।

আপনি যদি কাজ না করেন, তাহলে সমাজের কারও কাছেই মূল্য পাবেন না। এমনকি আমাদের চারপাশে চোখ ভুলালেই দেখা যায়, যাঁরা বেকার, কিন্তু কিছু একটা করার চেষ্টা করছেন, তাঁদেরকেও সমাজ সেভাবে মূল্যায়ন করে না। নানাভাবে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। এমনকি পরিবারের লোকেরাও বিভিন্ন সময় কটু কথা শুনিয়ে থাকেন। মোটকথা, সমাজে মাথা উঁচু করে সম্মানের সহিত বেঁচে থাকতে হলে আপনাকে কোনো না কোনো কাজ করতেই হবে।

কিন্তু জাপানের ৩৮ বছর বয়সী এই ব্যক্তি কোনো কাজ না করেও অর্থ উপার্জন করছেন। এখন এটা তাঁর পেশা। দৈনিক সর্বোচ্চ তিনটি সেশন করেন শোজি মরিমোটো। এতে তাঁর আয় হয় ২৫ হাজার টাকা! তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমি যখনই কোনো অফার পাই, সঙ্গে সঙ্গেই পৌঁছে যাই এবং কিছুই করি না, কেবল ক্লায়েন্টের প্রশ্নের জবাব দিই, রেস্টেুরেন্টে খাই এবং পান করি। যতক্ষণ ক্লায়েন্ট কিছু না বলে আমি কথা শুরু করি না। ক্লায়েন্ট সম্পর্কে সেভাবে আমার জানার ইচ্ছাও নেই। মূলত আমার ক্লায়েন্টরা চায় আমি যেন তাদের সঙ্গে থাকি, এমন জায়গায় যেখানে তারা একাকিত্ব অনুভব করেন।’

শোজি মরিমোটো
ছবি: সংগৃহীত

আবার অনেকের এমন কিছু কথা থাকে, যা সে তাঁর পরিবার কিংবা বন্ধুদের কাছে শেয়ার করতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষকে শোনাতে চান। এমন লোকেরাও শোজি মরিমোটোর সার্ভিস নেন। একবার এক ব্যক্তি টোকিও থেকে ওসাকা যাবেন। নাটক-সিনেমায় দেখা যায়, দূরে কোথাও সফরে গেলে স্টেশনে কেউ না কেউ আসে তাঁকে বিদায় দেওয়ার জন্য। ‘ওই ব্যক্তি সে অনুভূতিটা পেতে চাচ্ছেন। সে জন্য আমাকে ভাড়া করেন। আমি তাঁকে রেলস্টেশনে গিয়ে উষ্ণভাবে বিদায় জানাই,’ যোগ করেন শোজি মরিমোটো।

মানুষকে এই সার্ভিস দেওয়ার ভাবনা কীভাবে মাথায় আসে, শোজি মরিমোটো বলেন, ‘আমি অন্যদের সঙ্গে দলবদ্ধ কাজে ভালো করতাম না। আমার পুরোনো বস একবার বলেছিলেন, তুমি এখানে থাকো বা না থাকো, কোনো কিছু যায়-আসে না। যা আমাকে অনুধাবন করতে শেখায় যে আমি যথেষ্ট ভালো নই। একটা পর্যায়ে আবিষ্কার করলাম, কিছু না করাও কি ভালো নয়? এবং এই সার্ভিস শুরু করি। আরও একটা গল্প আছে। এই সার্ভিস শুরু করার আগে, আমি রাস্তায় মানুষের হাঁটা দেখতে যেতাম এবং চিন্তা করতাম তারা সমাজের সঙ্গে বেশ ভালোভাবেই মানিয়ে নিয়েছে, কেবল আমি ছাড়া। কিন্তু এখন আমি মনে করি, কোনো মানুষকে বাইরে থেকে দেখতে স্বাভাবিক মনে হলেও, তিনি হয়তো নিজের জীবনে কঠিন কোনো সমস্যায় আছেন।’