রাতে পাহাড়ি সৌন্দর্য

রাত শেষে ভোর হলে পাহাড়ে এমন কুয়াশা দেখা যায়। ছবিটি রাঙামাটির সুউচ্চ ফুরমৌন পাহাড় থেকে তোলাছবি: সুপ্রিয় চাকমা

বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকাগুলোতে সন্ধ্যা নামতেই রাত নেমে আসে। চারদিকে সুনসান নীরবতা বিরাজ করে। এখানকার সন্ধ্যা নামার দৃশ্য খুব মনোহর। পাহাড়ের আড়ালে লুকিয়ে থাকা সূর্য জানান দেয় সন্ধ্যা শেষ হয়ে এল। অন্যদিকে ততক্ষণে আবছা উপস্থিতি জানান দেওয়া চাঁদ ধীরে ধীরে ফুটে উঠতে থাকে। চাঁদের নীলাভ মিটিমিটি আলোয় পাহাড়ের প্রকৃতি যেন হেসে ওঠে। সরু পথের দুই পাশে লতাপাতা ও নাম না জানা নানা বৃক্ষের তাজা ঘ্রাণ ভেসে আসে। শীতল বাতাস গায়ে অদ্ভুত পরশ বুলিয়ে দেয়।

রাত যত গভীর হয়, দূরের পাহাড়ি মুরা (জঙ্গল) থেকে ভেসে আসে শিয়ালের আর্তনাদ, বিভিন্ন প্রাণীর হাঁকডাক। মাঝেমধ্যে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা উঁচু বৃক্ষরাজি ও দমকা হাওয়া নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দেয়। পাহাড়কে আলিঙ্গন করে নেমে আসা ছড়ার (ঝিরি) কলকল শব্দ কানে অদ্ভুত সুন্দর সুর তৈরি করে। ঝিরি স্বচ্ছ পানিতে চাঁদের আলোর প্রতিফলন মনের কুঞ্জে কাব্যিকতা ছড়ায়। কখনো অন্ধকারে ঝিঁঝি পোকারা প্রাকৃতিক ঝালর বাতি তৈরি করে। দূরের জঙ্গলের পাহাড়ি ঘ্রাণ নাকে এলে বুঝে নিই, আমরা পাহাড়ে চলে এসেছি। দূরের পাহাড়গুলোর পেছনে লুকোচুরি খেলছে পথচলার সঙ্গী চাঁদটা। আর ক্রমেই নীরব হয়ে পড়ছে পরিবেশ। শীতল হাওয়ায় প্রশান্ত হচ্ছে মন। মনে কাব্যিক ভাবনা আসে—
‘জোছনা রাতে পাহাড়ে লুকোয় শশী
চকোর খুঁজে তারে সারা দিবানিশি,
গিরিজলের শব্দ স্রোতে ভাসে পদ্ম
দুপুর রাতে শিকারে কাব্যের বরশী।’

পাহাড়ে রাতের আকাশ বেশ স্বচ্ছ। এখানে বায়ুদূষণ কম। যার কারণে আকাশে চাঁদের পাশে তারাগুলোর ঝিকিমিকি উপভোগ করা যায়। রাত যত গভীর হয়, পরিবেশ তত ঠান্ডা হতে থাকে। মাটির নিচে যেন কেউ বরফ বসিয়ে দিয়েছে। রাতের ঠান্ডা পরিবেশ অপূর্ব প্রশান্তি সৃষ্টি করে।

পাহাড়ি ধুলোমাখা মেঠোপথ রাতে বেশ নীরব থাকে। এখানে পথিকের সংখ্যা কম। এমন পথে চন্দ্রবিলাস করতে ভয় ও আনন্দের এক অদ্ভুত অনুভূতি তৈরি হয়। স্রষ্টার এমন অপরূপ সৃষ্টি যেমন মনে প্রশান্তি জাগায়, তেমনি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পঙ্‌তিগুলো ভেসে ওঠে প্রকৃতিপ্রেমীদের মনে, ‘এখন আমি একটা পাহাড় কিনতে চাই। সেই পাহাড়ের পায়ের কাছে থাকবে গহন অরণ্য। আমি সেই অরণ্য পার হয়ে যাব, তারপর শুধু রুক্ষ কঠিন পাহাড়। একেবারে চূড়ায়, মাথার খুব কাছে আকাশ, নিচে বিশাল পৃথিবী, চরাচরে তীব্র নির্জনতা।’ (পাহাড়চূড়ায়—সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়)

চান্দগাঁও, চট্টগ্রাম