তরুণ প্রজন্ম যেমন বাংলাদেশ দেখতে চায়

ভোরের সূর্যোদয়, যেন নতুন বাংলাদেশের বার্তা দিচ্ছে। প্রতীকীছবি: আসিফুর রহমান রাসেল

কিছুদিন আগেও বলেছিলাম এই প্রজন্ম দিয়ে কিছু হবে না। এই প্রজন্ম অনলাইন গেমিং ও স্মার্টফোনে আসক্ত। সারা দিন সোশ্যাল মিডিয়ার জগতে পড়ে থাকে। আমাদের এই ধারণা ভুল প্রমাণ করে দিয়েছেন তাঁরা। তরুণেরা দেখিয়ে দিয়েছেন তাঁরা কত সাহসী, কত শক্তিশালী। দেশের জন্য জীবন দিতে মুহূর্তও চিন্তা করেন না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতন করে দেখিয়ে দিয়েছেন।

আন্দোলনের সব শহীদের প্রতি সম্মান রেখে বলছি, আমাদের এই প্রজন্ম বিশ্বমঞ্চে প্রথম সারিতে চলে গেছে। পুরো বিশ্বকে হতভম্ব করে দিয়ে ফ্যাসিবাদী সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে আমাদের ছাত্র আন্দোলনকে সোনালি অক্ষরে লিখে দিয়েছে।

আমরা এমন মানচিত্র চাই, যে মানচিত্র দেখে কবি রফিক আজাদের মতো কেউ বলবে না, ‘আমার ক্ষুধার কাছে কিছুই ফেলনা নয় আজ। ভাত দে হারামজাদা, তা না হলে মানচিত্র খাব।’

নতুন প্রজন্ম এমন মানচিত্র চাই, যে মানচিত্র দেখে পুরো পৃথিবী চিনবে। বলবে, দেশটি উন্নয়নের মডেল। এটা সেই দেশ, যে দেশে কোনো কিছুর ঘাটতি নেই। যারা নতুন বিপ্লবের সাজে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রবে। আমরা আগুনের দেশ চাই না। ছিন্নবিচ্ছিন্ন মাতৃভূমি চাই না। রণক্ষেত্রের দামামা চাই না। হইচইপূর্ণ জনগণ বা শাসক চাই না। গলা চেপে ধরা শাসক চাই না। মিডিয়া বন্ধ করে দেওয়া শাসক চাই না। ধ্বংসলীলার দিকে ঝুঁকে দেওয়া শাসক চাই না। রক্তপাত করা শাসক চাই না। অহংকারী, প্রতিহিংসা, নেতিবাচক, আক্রমণাত্মক, অমানবিক ও ঘুণে ধরা মস্তিষ্কের শাসক চাই না।

আমরা এমন শাসক চাই, যিনি সবার কথা ভাববে। দেশের সম্পদ রক্ষা করবে। যে রক্ষক ভক্ষক হবে না। প্রতিহিংসার রাজনীতি করবে না। যিনি দেশের সবাইকে নিয়ে সোনার বাংলাকে বিশ্বমঞ্চে পরিচয় করে দেবেন। দেখিয়ে দেবেন, আমরাও পারি স্বাধীন জন্মভূমি হিসেবে প্রথম সারিতে থাকতে।

এমন শাসন ও শাসক চাই, যেখানে নির্বাচন হওয়ার পরে বিরোধী দল জয়ী দলকে নিজে হাতে ধরে পুষ্পের মালা দিয়ে চেয়ারে বসাবে। একই খুশিতে হাসবে পুরো পার্লামেন্ট। একই দুঃখে কাঁদবেন সব সদস্য। সবাই একই উন্নয়নের পথে হাঁটবে। একই সুরে গান গাইবে। একই ছন্দে কবিতা বলবে। একই রঙে সাজবে। একই সাগরে ভাসবে। একই রাস্তায় নিশ্চিন্তে পাহারাবিহীন চলবে। একই টেবিলে বসে জনগণ ও দেশের উন্নয়নের কথা বলবে। একই কণ্ঠে বহির্বিশ্বের শত্রুকে দমন করবে।

আমাদের আঁকাবাঁকা মানচিত্রে সব ধর্ম, বর্ণ, বহু রঙের মানুষ, ভিন্নমতের দল, হরেক রকম সুরের গায়ক ও নায়ক, সব সম্প্রদায়ের এবং পুরো দেশের মানুষ একটা নামে পরিচিতি পাবে। তা হলো বাংলাদেশি। আমরা সবাই একই জাতি। পাহাড়ি থেকে সাগরীয়, স্থল থেকে মরুভূমি, মাঠি থেকে ওপরে এবং পুরো মানচিত্রের সবাই একটাই জাতি বাঙালি। একটাই সম্প্রদায়, তা হলো মানুষ। আমাদের সবার রক্ত লাল। সবাই সমান। ভিন্নমতের হলেও দেশের স্বার্থে এক। ভিন্ন রঙের হলেও জাতির বৃহত্তর অর্থে অভিন্ন। বহু ধর্মের হলেও দেশের শান্তি বজায় রাখতে সবাই এক। দেশের যেকোনো স্বার্থে আমরা একতাবদ্ধ। যেখানে প্রতি সেকেন্ডে নির্ভয়ে মানুষ চলাফেরা করবে। নারীরা রাতবিরাতেও নির্ভয়ে চলাফেরা করতে পারবে। কোনো ভয়ের রেশ থাকবে না। অপমৃত্যু হবে না সড়কে। গুলি চলবে না অকারণে। তরুণ প্রজন্ম এমনই দেশ গঠন করতে চাই।

দেশের আইটি প্রতিষ্ঠান হবে গর্বের। সাগরের তীর হবে ভ্রমণের। পাহাড় হবে যাযাবরের স্বর্গের। রাস্তা হবে সবার। প্রতিটা শহর হবে রাজধানী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হবে বিশ্বমানের। আকাশ হবে অহংকারের। নাগরিক হবে নেতৃত্বের। মেয়েরা হবে শ্রেষ্ঠ। তরুণেরা অলিম্পিকের পোডিয়ামে দেশের পতাকা উঁচু করে তুলে ধরবে। শিশুরা হবে সবুজ তৃণ পাতার রঙের। বয়স্করা হবে ইতিহাসের। পতাকা হবে মর্যাদার। আমরা নয়া নব্য বাংলাদেশ তৈরি করতে তত্পর হব। বিনা শপথে দেশকে ভালোবাসব। দেশের বায়ুকে সতেজ রাখব। কলকারখানাকে অত্যাধুনিকে রূপান্তর করব। দেশের মাটিকে সোনালি ফসলে ভরিয়ে দেব।

দেশের শ্রমিক, মাঝি, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, কবি, রাজনীতিবিদ, শিক্ষার্থী, গবেষক, সামরিক বাহিনী, সব গোত্র, সব ধর্ম এবং সব সম্প্রদায়ের মানুষ হাতে হাত রেখে দেশকে সুন্দর সুললিত পরিপাটি করে তুলবে। ঝকঝকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের তালিকার শুরুতে নিয়ে যাবে। সমুদ্রের গভীরের গবেষণা থেকে শুরু করে মহাশূন্যে পরিভ্রমণ করা স্যাটলাইট তৈরিতেও কাজ করবে। বিশ্বদরবারে নেতৃত্ব দেবে। ইঞ্জিনিয়াররা হবে বিশ্বমানের। ডাক্তার হবে মানবতার। নেতা হবে জনতার। জাতি হবে অদম্য।

শিক্ষার্থী, সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম