কেয়া ফুলের শুভ্রতার মতো নির্মল চোখ বাড়িয়ে মেয়েটি গাড়ির কাচে উঁকি দিল। হাতে লাল-সাদা গোলাপের গুচ্ছ। বিজয় সরনির লম্বা জ্যামে বসে থেকে অবনী তখন বিমর্ষ মুখে তাকাল। হঠাৎ কী যেন মনে হতেই জানালার গ্লাসটা খুলে দিল। সামনে ফুল হাতে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি; ওর নাম কেয়া। বয়স ১২-১৩ হতে পারে। সদরঘাটের বস্তিতে মা ও ছোট বোনের সঙ্গে থাকে।
সকাল সকাল ফুল হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে শহরতলির গাড়ির ভিড়ে। সারা দিনের চেষ্টায় সেগুলো বেচতে পারলে তবে কিছু পয়সা জোটে। সেটা দিয়ে সংসারের অভাব মেটানো যায় না মোটেও। শুধু এক-আধবেলা খেয়ে না–খেয়ে বেঁচে থাকাটা হয়। অবনীর ইচ্ছা হয়, কোনো একদিন হাত বাড়িয়ে ফুলের পুরো গুচ্ছটা কিনে নেওয়ার। আচ্ছা এমনটা হলে, তখন কি মেয়েটা খুব অবাক হবে? অবাক হলে কি ওর মায়াবী চোখগুলো বড় বড় হয়ে যাবে? নাকি খুশি হবে? ওর হাসিটা কি খুব শান্ত রকমের হবে? অবনী প্রায়ই সিগন্যালের ফুল বিক্রেতা বাচ্চাগুলোর দিকে তাকিয়ে এসব ভাবে।
আজও ভাবছে। তবে আজ কী যেন ভেবে ও খুব চাইছে কেয়ার হাসিটা দেখতে। প্রথম যেদিন রমনায় ওকে ডেকে কথা বলেছিল, সেদিনই ইচ্ছাটা হয়েছিল; তবে আজকের মতো নয়। কোনো এক পরিচিত কারণেই হয়তো ভাবনাটা ভাবনা হয়েই রয়ে যায়। অবনী আবার ভাবে। আচ্ছা, এই কেয়া মেয়েটার হাসির দাম কত? কত দাম দেওয়া গেলে ওর হাসিটা কিনে ওকেই উপহার দেওয়া যায়?
জানা নেই! জানতে মানা না থাকলেও এসব প্রশ্নের উত্তর কেন কারও জানা থাকে না, সেটিও অজানা।
কেয়ারা শহরের ধুলায়, তপ্ত খরায়, অযত্নে বেড়ে ওঠা কোনো এক ফুল গাছের মতন। যুদ্ধ যাদের পরাহত করতে ব্যর্থ হয় প্রতিদিন; তাদের জন্য নির্লিপ্ত দ্বিধাহীন দর্শকের ভূমিকা আমাদের প্রতিনিয়ত কতটুকু সফলতার স্বাদ দেয়?
শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়