হেমন্তের দিনলিপি

সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে যাওয়ার পথে বউলাই নদের পাড়ে করচগাছে তিনটি ছানা ও দুটি বড় শরৎ পাখি। পাখিদের জীবন নির্ঝঞ্ঝাট। ছবিটি প্রতীকীফাইল ছবি

আকাশ গাঢ় নীল রং ধারণ করেছে। বর্ষার ঘনকালো মেঘেদের কান্নার ইতি ঘটেছে, তবু প্রকৃতিতে এক অদ্ভুত বিষণ্নতা। মনে হয় শ্যামল মেয়ের কান্না ফুরিয়ে যাওয়ায় তীব্র কষ্ট আরও তীব্রতর হচ্ছে। আমি হেঁটে চলছি উদ্‌ভ্রান্তের মতো, কোনো গন্তব্য নেই।

দিনের এই সময়টায় আমি নিজের মতো করে থাকি, রাস্তা ধরে হাঁটি আর মাথায় উদ্ভট সব চিন্তা। এ সময়টায় জাগতিক কোনো কিছুই আমাকে স্পর্শ করতে পারে না, সব দেখি–শুনি, কিন্তু কিছুই যেন আমার চেতনায় পৌঁছায় না। অ্যাকুয়ারিয়ামে মাছ দেখার মতো করে মানুষ দেখি, তাদের গতিবিধি দেখি; কিন্তু কিছু বুঝতে পারি না। এ সময়টায় শহরের রাস্তাগুলো সবচেয়ে ব্যস্ত থাকে, জীবিকার বন্দোবস্ত শেষে মানুষেরা পাখিদের মতো নীড়ে ফেরে। আমি মানুষদের পাখির মতো দেখি। কেবল এই একটা কাজেই মানুষ আর পাখিদের অনেক মিল।

আমার ইচ্ছা করে পাখিদের মতো অমন নির্ঝঞ্ঝাট জীবন যাপন করতে। কিন্তু এমন সরল জীবন, এই উত্তরাধুনিকতাবাদের রমরমা সময়ে সম্ভব হবে না কখনো। আমরা আর কখনো ইতিহাসের রোমান্টিক সময়ে ফিরে যেতে পারব না।

সময়ের পরিক্রমায় জীবনপ্রবাহ আরও জটিল থেকে জটিলতর হবে। মানুষ আরও বেশি একটা ছোট্ট বলয়ের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকবে। হয়ে উঠবে আরও বেশি যান্ত্রিক। মানুষ কখনো আর চিঠি লিখবে না। দূর্বাঘাসের ওপরে জমা শিশিরবিন্দু সকালের রৌদ্রে কেমন চকচক করে, তা আর কাউকে মুগ্ধ করবে না। কিশোরীর কালো চুলের দোলায় তখন আর কারও হৃদয়ে ঝড় উঠবে না।