কেন মানুষ হাসে

হাসি মানুষের সৌন্দর্য বাড়ায়ফাইল ছবি

হাসি মানুষের সৌন্দর্য বাড়ায়। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব সংস্কৃতির মানুষ হাসতে ভালোবাসে। আবার সব জায়গায় হাসা যায় না। তখন হিতে বিপরীত হতে পারে। হাসলে যেমন স্বাস্থ্য ভালো থাকে, আবার একই কারণে স্বাস্থ্য খারাপও হতে পারে!

ব্রিটিশ নিউরোসায়েন্টিস্ট এবং স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান সোফি স্কট বিবিসিকে বলেন, ‘হাসি একধরনের সামাজিক অনুভূতি। আমাদের হাসির সম্ভাবনা ৩০ গুণ বেশি। যদি আমাদের সঙ্গে পরিচিত কেউ থাকে, তখন আমরা আরও বেশি হাসি। আর যদি ওই মানুষটাকে আমরা পছন্দ করি, হাসির পরিমাণ আরও বাড়ে।’

কেন আমরা হাসি

‘কেউ কিছু বললে, সেটির সঙ্গে আমরা যে সম্মত, তা দেখানোর জন্য হাসি। আবার এটাও বোঝানো যে সে যা ইঙ্গিত করেছে, সেটা আমরা বুঝতে পেরেছি, ’ যোগ করেন সোফি স্কট। তিনি বলেন, মানুষ আবার অন্য অনুভূতি লুকানোর জন্যও মুখোশ হিসেবে হাসার চেষ্টা করে। তারা যে আপসেট না, সেটা বোঝানোর জন্য হাসার চেষ্টা করে। অথবা রাগ, অস্বস্তি কিংবা ব্যথা লুকানোর জন্যও এটা করে। যদি আপনি কাউকে হাসাতে পারেন, তারা নিজেদের সম্পর্কে আপনাকে আরও বেশি করে বলবে।’

তার মতে, দুই ধরনের হাসি রয়েছে। প্রথমটি হলো, স্বতঃস্ফূর্ত হাসি। যদি আপনি মনে করেন যে আপনাকে হাসতেই হবে এবং এটাকে থামাতে পারবেন না, তখন হাসিটা হবে এমন…
হাসি অপনাকে অভিভূত করে, এবং তারপর আপনি সেই হাসিতে চড়তে থাকবেন। এ ধরনের হাসি সাধারণত কারও সঙ্গে কথোপকথনের সময় আসে।
দ্বিতীয়টি হলো, কোনো কথা বা বাক্যের শেষে হাসা। এ ক্ষেত্রে সাধারণত উভয় পক্ষই একসঙ্গে হাসে।

কেন মাঝেমধ্যে মনে হয় হাসি সংক্রামক

যখন আপনি টেলিভিশন দেখেন কিংবা রেডিও শোনেন, হয়তো এটা কোনো লাইভ অনুষ্ঠান, এবং উপস্থাপক হাসতে শুরু করেন, সেটি শোনার পর আপনিও যদি হাসতে শুরু করেন, একে আচরণগত সংক্রামক ঘটনা বলা হয়। সোফি বলেন, ‘এই হাসি সংক্রামক বলার কারণ, এটি আপনি অন্য কারও থেকে গ্রহণ করছেন। কারণ, তারাও একই কাজ করছে। তবে শিশুদের মধ্যে এই ব্যাপার থাকে না। আমরাই তাদের এটা শেখাই।’

‘যদি আমরা শিশু ও তার মা–বাবার দিকে তাকাই, দেখতে পাই যে মা-বাবা চেষ্টা করছেন শিশুটিকে হাসানোর এবং শিশু হাসে। ব্যাপারটা সুন্দর। আর যদি মা–বাবা অন্য কোনো বিষয় নিয়ে হাসে, দেখবেন শিশুটি তাতে যুক্ত হচ্ছে না। কিন্তু শিশুটি কোনো কারণে হাসলে তাতে মা–বাবাও যুক্ত হন। কারণ, সংক্রমণ কাজ করছে, ’ যোগ করেন তিনি।

অতিরিক্ত হাসার খারাপ দিক

সোফি স্কট বলেন, ‘মানুষ যখন হাসে, তখন পাঁজরের খাঁচায় কিছুটা চাপ অনুভূত হয়। বিশেষ করে যখন হাসতে কষ্ট হয়। এটা হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর। আর যদি হৃৎপিণ্ড, রক্তনালি ও ফুসফুসে কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে চাপ আরও বেশি পড়বে। ইতিহাসে এমনও উদাহরণ রয়েছে, যেখানে হাসার কারণে মানুষের মৃত্যু হয়েছে।’

হাসলে স্বাস্থ্যের যে উপকার হয়

স্বাস্থ্যের উন্নতিতে হাসার অনেক উপকারিতা রয়েছে। হাসলে চাপমুক্ত থাকা যায়। হাসা শুরু করলে অ্যাড্রোনালিন হরমোন হ্রাস পেতে শুরু করে। এর ফলে নিশ্বাস, হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ ও রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক হয়। পাশাপাশি শরীর স্বাভাবিকভাবে এন্ডোরফিন সঞ্চালন করে। হাসলে পাঁজর নাড়াচাড়া হয় এবং এ জন্যই এমনটা ঘটে। এতে আমাদের ব্যথার অনুভূতি কমে যায়, কাজে মনোযোগ বসে ও মাংসপেশির ব্যায়াম হয়।