‘মহাভারত’— নানা চরিত্র, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, ধর্মীয় রীতিনীতি, উঁচু-নিচু জাতপাত, দক্ষ-অদক্ষের লড়াই ইত্যাদি নানা দিক দিয়ে সমৃদ্ধ এই গ্রন্থ নানাভাবে সব সময় আলোচিত একটি গ্রন্থ।
হরিশংকর জলদাসের ‘একলব্য’ উপন্যাসে নিষাদ রাজ্যের রাজা হিরণ্যধনুর পুত্র একলব্য। দাদা অনোমদর্শী, মাতা বিশাখা। যে বালক অস্ত্রশিক্ষা নেওয়ার জন্য বহু পথ পাড়ি দিয়ে নিজ রাজ্য ও রাজ্যের সুযোগ–সুবিধা ত্যাগ করে হস্তিনাপুরে এসেছিল গুরু দ্রোণাচার্যের শিষ্য হয়ে শিক্ষা লাভের আশায়। বন, নদী, শ্বাপদসংকুল উঁচু-নিচু বন্ধুর দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে গুরু দ্রোণের আশ্রমে এসেও শিক্ষার সুযোগ সে পায়নি। গুরুদেব মান্য করা দ্রোণাচার্য নিচু জাত বলে একলব্যকে অস্ত্রশিক্ষা দিতে অসম্মতি জানিয়েছিলেন। ধনুর্বিদ্যা লাভ করতে নিষাদ গোষ্ঠীর একলব্য হতাশ হয়েছিল। সুখী–সমৃদ্ধ জীবন আর অর্জুনকে সর্বশ্রেষ্ঠ ধনুর্বিদ করার প্রবণতায় কালো ও নিচু বর্ণের একলব্যকে শিষ্য হিসেবে গ্রহণ করেননি গুরু দ্রোণাচার্য।
তবু হাল ছাড়েনি একলব্য। নিজেকে শ্রেষ্ঠ ধনুর্বিদ করার লক্ষ্যে গুরুর আশ্রমের অদূরেই বনের মধ্যে একা থেকে নিজের অধ্যবসায়ের শিক্ষাজীবন শুরু করে সে। মাটি দিয়ে গুরু দ্রোণাচার্যের মূর্তি গড়ে তার পদতলে বসে একনিষ্ঠভাবে অনুশীলন করতে থাকে একলব্য।
গোপনে নিজের চেষ্টায় ধনুর শিক্ষা নেওয়াও একদিন দ্রোণাচার্যের কাছে প্রকাশিত হয়ে যায়। তখন গুরু দ্রোণাচার্য গুরুদক্ষিণা হিসেবে একলব্যের ডান হাতের বুড়ো আঙুলটি চেয়ে নেন। গুরুর চাওয়া গুরুদক্ষিণা হিসেবে তা কেটে দেয় একলব্য, যা ইতিহাসের পাতায় আজও জীবন্ত ঘটনা হিসেবে পরিচিতি পায়।
শুধু একলব্যকে নয়, অনেক আগ্রহ থাকার পরও দানশীল কর্ণকেও দ্রোণাচার্য ভালো ধনু শিক্ষা দেননি। শুধু অর্জুনকে জগৎশ্রেষ্ঠ ধনুর্বিদ হিসেবে গড়ে তুলবেন বলে।
গুরু দ্রোণাচার্য একলব্যকে শিষ্য হিসেবে গ্রহণ না করে, কোনো প্রকার শিক্ষা না দিয়েও তার কাছ থেকে গুরুদক্ষিণা নিয়েছিলেন, যা নিকৃষ্টতম উদাহরণ হিসেবে বিশ্ব ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে। এতে করে গুরু–শিষ্যের বৈষম্য, বিশ্বাস ভঙ্গসহ নানাবিষয়ক ধারণা পরবর্তীকালে বিদ্বেষমূলক ঘটনার সৃষ্টি করেছে, যা কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে পরিলক্ষিত হয়। গুরু–শিষ্যের মতো একটি পবিত্র সম্পর্ক সব সময় প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থেকে গেছে গুরু দ্রোণাচার্য আর শিষ্য একলব্যের কাহিনি থেকে।
এই একলব্যের কাহিনিতে যুক্ত হয়েছে মহাভারতের গুরুত্বপূর্ণ অনেক চরিত্র ও ঘটনা। যেসব চরিত্র ও ঘটনা কোনো না কোনোভাবে একলব্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। হস্তিনাপুরের রাজপুত্রদের গুরুর আশ্রমে শিক্ষা গ্রহণ থেকে শুরু করে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ ও পরবর্তীকালে কৃষ্ণের রাজ্য আক্রমণের সময়গুলোয় একলব্যের উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
একনজরে
বই: একলব্য
লেখক: হরিশংকর জলদাস
প্রকাশক: মাজহারুল ইসলাম
প্রকাশনী: অন্যপ্রকাশ
প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ
মুদ্রণ: কালারলাইন প্রিন্টার্স
প্রথম প্রকাশ: একুশের বইমেলা ২০১৬
মূল্য: ৪৫০.০০ টাকা মাত্র
হাজীপুর, নরসিংদী