বাবার শেষ ফ্লাইটে ছেলে কো-পাইলট

১৯৯৪ সালে বিমানে পাইলটের আসনে রোবেন ফ্লাওয়ার ও তাঁর ছেলেছবি: সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইনসের সৌজন্যে

একজন মানুষ ঠিক কতটুকু বড়? এ নিয়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটা বিখ্যাত উক্তি আছে। তিনি বলেছেন, মানুষ তাঁর স্বপ্নের সমান বড়। মার্কিন বিমান পরিবহন সংস্থা সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইনসের পাইলট রোবেন ফ্লাওয়ার ও তাঁর ছেলে জুনিয়র রোবেন ফ্লাওয়ারের স্বপ্নও ঠিক তেমনই। বাবার মতো ছেলেও যে একই প্রতিষ্ঠানের পাইলট। তাঁরা একই সঙ্গে বিমান চালানোর স্বপ্ন পূরণ করেছেন। ৩০ বছর আগে তোলা একটি ছবির হুবহু আরেকটি ছবিও নতুন করে তুলেছেন।

চলতি বছরের শুরুর দিকে দাদির ঘরে পুরোনো ছবির অ্যালবাম দেখছিলেন ৩০ বছর বয়সী জুনিয়র রোবেন ফ্লাওয়ার। হঠাৎ একটি ছবির দিকে তাঁর দৃষ্টি আটকে যায়। ১৯৯৪ সালে এটি তোলা। তখন বাবা রোবেন ফ্লাওয়ার পাইলট। তিনি ককপিটে নিজের সিটে বসে হাসিমুখে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছেন। পাশের সিটেই বসে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে ছোট্ট রোবেন ফ্লাওয়ার। ছবিটা দেখেই ফ্লাওয়ার জুনিয়রের ইচ্ছা হলো, এই ছবি পুনরায় তোলা হলে কেমন হয়!

বাবার শেষ ফ্লাইটে ছেলে কো-পাইলট
ছবি: সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইনসের সৌজন্যে

বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে জুনিয়র রোবেন ফ্লাওয়ারও পাইলট হয়েছেন। চাকরিও পেয়েছেন একই প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু তখনো পেশাগত জীবনে তাঁর বিমান চালানো হয়নি। অন্যদিকে সিনিয়র রোবেন ফ্লাওয়ারের অবসরের সময় ঘনিয়ে এসেছে। বাবার সঙ্গে বিমান চালানোর ইচ্ছার কথা সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইনসকে জানালে তারাও সেই সুযোগ করে দিতে দেরি করেনি। আর সুযোগটি এমন দিনে এল, যেদিন ছিল বাবার শেষ ফ্লাইট ও ছেলের প্রথম ফ্লাইট! ঠিক একই রকম ছবি পুনরায় তুলে রাখলেন এই বাবা-ছেলে জুটি।

ছোটবেলা থেকেই বাবাকে অনুসরণ করতেন রোবেন ফ্লাওয়ার। বাবার সঙ্গে তাঁর অফিসে যেতেন, গল্প শুনতেন। বড় হয়ে সেই বাবার সঙ্গে প্রথম বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা জানিয়ে জুনিয়র রোবেন ফ্লাওয়ার সিএনএন ট্রাভেলকে বলেন, ‘বাবার সঙ্গে বিমান চালানোটা আমার স্বপ্ন ছিল। সম্ভবত এই পেশায় আমার ১ নম্বর লক্ষ্য ছিল এটি।’

স্বপ্ন পূরণের দিন
ছবি: সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইনসের সৌজন্যে

স্বপ্ন পূরণের সুযোগটি এসে যায় এ বছরের মার্চে। যুক্তরাষ্ট্রের নেবরাসকা অঙ্গরাজ্যের ওমাহা শহর থেকে ফ্লাইটটি শিকাগোয় যায়। যেখানে বাবা প্রধান পাইলট ও ছেলে কো-পাইলট। সিনিয়র রোবেন ফ্লাওয়ার বলেন, ‘এটি ছিল দারুণ এক অনুভূতি। পাশের সিটের দিকে তাকানো এবং সেখানে আমার ছেলেকে দেখা, আমার পাশে, আমার শেষ ফ্লাইটে।’ ছেলে বলেন, ‘ওই মুহূর্তটা (ছবি তোলা) পুনরায় তৈরি করাটা দারুণ কিছু। এটি স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মুহূর্ত।’

মজার ব্যাপার হলো ফ্লাওয়ার পরিবারে কেবল তাঁরা দুজনই পাইলট নন, আরও পাঁচজন পাইলট রয়েছেন। সিনিয়র ফ্লাওয়ার বলেন, ‘পরিবারে আমরা সাতজন পাইলট। আমি, আমার এক ভাই, ভাইয়ের এক ছেলে ও আমার তিন ছেলে এবং আমার একজন কাজিন। আর এটা দারুণ কিছু যে সবাই পাইলট হতে চায়।’ শুরুটা হয়েছিল সিনিয়র রোবেন ফ্লাওয়ারের হাত ধরে। বাকিরা তাঁকে অনুসরণ করেন।