তারুণ্য
এগিয়ে যাচ্ছে বন্ধুসভা
লেখাটি ২০২৪ সালের জুনে প্রকাশিত বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের ‘তারুণ্য’ ম্যাগাজিনের দশম সংখ্যা থেকে নেওয়া।
এমন এক সময় আমরা বন্ধুসভার দায়িত্ব নিই, যখন করোনা মহামারি মোকাবিলা করে দেশ আবারও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। মহামারির স্বাভাবিক বাস্তবতায় আগের দুই বছর বন্ধুসভার সাংগঠনিক কার্যক্রমের অধিকাংশই ছিল অনলাইনকেন্দ্রিক। বন্ধুরা চাচ্ছিলেন এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আগের মতো স্বতঃস্ফূর্তভাবে সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে। ২০২২ সালের ১৫ মার্চ নতুন জাতীয় পর্ষদ আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়, বন্ধুদের মধ্যে আবারও কীভাবে প্রাণের সঞ্চার করা যায়, গতিশীল করা যায় বন্ধুসভার কার্যক্রম। তাই জাতীয় পর্ষদের প্রথম সভাতেই সিদ্ধান্ত হয়, ২০২২-২৩ সময়কালে যত বেশি সম্ভব সশরীর কার্যক্রমের মাধ্যমে বন্ধুদের উজ্জীবিত করতে হবে, বন্ধুদের স্বেচ্ছাসেবা, সাংস্কৃতিক মনন বিকাশের পাশাপাশি তাঁদের নিজেদের আত্মোন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
নতুন কমিটির দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই আট ধাপে সব বিভাগের বন্ধুসভার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ দায়িত্বশীলদের নিয়ে অনলাইনে সাংগঠনিক বৈঠক করে। দেশ ও দেশের বাইরের সব বন্ধুসভার প্রতিনিধিরা বৈঠকে অংশ নেন। নানা বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি তখন সারা দেশ থেকে জাতীয় বন্ধু সমাবেশ আয়োজনের দাবি জোরালো হয়। কিন্তু গ্রীষ্মকাল চলে আসায় সময়টা সমাবেশের জন্য উপযোগী ছিল না। সিদ্ধান্ত হয়, বিভাগীয় বন্ধু উৎসব করা হবে। সেই মোতাবেক ২০ মে ঢাকা বিভাগের বন্ধুসভাগুলোকে নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিভাগীয় বন্ধু উৎসব। এতে পাঁচ শতাধিক বন্ধু অংশ নেন। বন্ধুদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে উৎসব পরিণত হয় মিলনমেলায়। ২০২২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় বন্ধু উৎসবের দ্বিতীয় ধাপে ময়মনসিংহ শহরের জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি মিলনায়তনে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় বিভাগীয় বন্ধু উৎসব। এতে ময়মনসিংহ বিভাগের ৯টি বন্ধুসভার আড়াই শতাধিক বন্ধু অংশগ্রহণ করেন।
বিভাগীয় বন্ধু উৎসবের আগেই ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার উদ্যোগে স্বাধীনতা উৎসবে অংশগ্রহণ, ক্যামব্রিয়ান বন্ধুসভার আয়োজনে স্বাধীনতা দিবসের আয়োজন বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ। এরই মধ্যে বিডি জবসের সঙ্গে সারা দেশের বন্ধুদের নিয়ে অনলাইনে তিন পর্বের ক্যারিয়ার-বিষয়ক কর্মশালা, উচ্চশিক্ষায় ভর্তি প্রস্তুতি নিয়ে অনলাইনে তিন পর্বের বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
২০২৩ সালের ২৬ মার্চেও মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্যাপনে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি প্রথম আলো বন্ধুসভার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। এ ছাড়া সারা দেশের বিভিন্ন বন্ধুসভা স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, পাঠচক্র, আলোচনা সভা, সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের সহায়তা করেছে। এর মধ্য দিয়ে বন্ধুরা নিজেদের মধ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের মহিমাকে লালন ও ধারণ করার চর্চা করেন।
২০২২ সালের ৮ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত দেশ ও দেশের বাইরের বিভিন্ন বন্ধুসভা সহমর্মিতার ঈদ কার্যক্রমের আওতায় দেশব্যাপী ঈদের উপহারসামগ্রী বিতরণ করে। সুবিধাবঞ্চিত ৩ হাজার ৭৪৯ শিশুকে নতুন জামা ও ৩ হাজার ৯৭১টি পরিবারকে ২৮ লাখ ১০ হাজার ১৭৪ টাকার খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়। জাতীয় পর্ষদও ২৯ এপ্রিল মাঝরাতে এবং দিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঈদের উপহারসামগ্রী বিতরণ করে। পাশাপাশি ময়মনসিংহের বন্ধু শামীমের কিডনির চিকিৎসার জন্য আরও ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৬০০ টাকা সহায়তা করা হয়।
২০২৩ সালের এপ্রিলেও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ‘সহমর্মিতার ঈদ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশ ও দেশের বাইরের বন্ধুসভাগুলো দেশব্যাপী ঈদের উপহারসামগ্রী বিতরণ করে। সুবিধাবঞ্চিত ৩ হাজার ৪৬৬ শিশুকে নতুন জামা ও ৩ হাজার ৪১০টি পরিবারকে ২৪ লাখ ৮৯ হাজার ২৮৮ টাকার খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের ৩০ মার্চ থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করেন বন্ধুরা।
বন্ধুদের এ কাজকে উৎসাহ দিতে ২০ মে জাহাঙ্গীরনগরে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিভাগীয় বন্ধু উৎসবে ‘সহমর্মিতার ঈদে সেরা দশ’ বন্ধুসভাকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। এ ছাড়া করোনা মহামারির ভয়াল কাল পেরিয়ে ছাপা কাগজে প্রথম আলোর ৫০ লাখ পাঠক উদযাপন উপলক্ষে সারা দেশের প্রায় ১৫ হাজার বন্ধু ফেসবুক প্রোফাইল ফ্রেম পরিবর্তন করেন। নির্মাণ করে বিশেষ ভিডিও ডকুমেন্টারি, যার ভিত্তিতে সেরা ৫টি ভিডিও চিত্রকে পুরস্কার প্রদান করা হয়।
সংগঠনকে গতিশীল রাখতে হলে কার্যক্রম চলমান রাখতে হবে। বন্ধুরাও কাজের মধ্যে থাকতে চান। তাই বন্ধু উৎসবের এক সপ্তাহ পরই ‘বল উন্নত মম শির’ শিরোনামে প্রথম আলো কার্যালয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মজয়ন্তী উদযাপন করে ঢাকা মহানগর বন্ধুসভা। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের ২৫ মে কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষেও আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর বন্ধুসভা।
২০২২ সালের ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে ‘পৃথিবী একটাই, আসুন পৃথিবী বাচাই’ শিরোনামে বিশেষ ফেসবুক লাইভের আয়োজন করা হয়। ফাহমিনা বর্ষার সঞ্চালনায় আলোচক হিসেবে ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শিমুল চন্দ্র সরকার ও চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসাইন খান। একই মাসে চার পর্বে জুম অ্যাপের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় ফ্রিল্যান্সিং ও ক্যারিয়ার গাইডলাইন-বিষয়ক কর্মশালা। বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে ২০২৩ সালেও ৭ জুন অনলাইনে ‘গাছ-নদী-পাখি সুরক্ষায় তরুণদের করণীয়’ শিরোনামে বিশেষ আলোচনা সভা করা হয়। এ ছাড়া ২০২২ সালের ১৫ জুন বাজেট ২০২২-২৩ নিয়ে প্রত্যাশা, প্রাপ্তি ও ভবিষ্যৎ ঝুঁকি নিয়ে বিশেষ লাইভ করা হয়। রুবাইয়্যাত সাইমুম চৌধুরীর সঞ্চালনায় এতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাজমুল এইচ পলাশ।
এ সময় নানা স্বাদের বাহারি ফলে ভরে ওঠে পুরো দেশ। সারা দেশের বন্ধুরাও এ সময় দেশি ফল চেনা ও জনপ্রিয় করার উৎসবে শামিল হয়। তাই জুনে ফল উৎসব বন্ধুদের নিয়মিত একটি কার্যক্রম। ১৫ জুন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢাকার বিভিন্ন বন্ধুসভাকে নিয়ে ‘ফল উৎসব ২০২২’ আয়োজন করা হয়। সারা দেশের অন্যান্য বন্ধুসভাও এ উৎসবের আয়োজন করে। আর ২০২৩ সালের ১৯ মে ‘আস্বাদে দেশি ফল, অর্থ-পুষ্টি উভয় সচল’ প্রতিপাদ্যে জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের উদ্যোগে ‘ফল উৎসব’ অনুষ্ঠিত হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ ছাড়া সারা দেশের বিভিন্ন বন্ধুসভা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে ফল উৎসবের আয়োজন করে। এসব উৎসব আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য, বন্ধুদের মধ্যে সম্প্রীতি এবং একে অপরের প্রতি সহমর্মিতার বন্ধন আরও মজবুত করা। ২০২২ সালের ১৭ জুন ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার আয়োজনে প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘বন্ধু, এসো বর্ষায়’ শিরোনামে বর্ষাকালকে বরণ করে নেন বন্ধুসভার বন্ধুরা।
২০২২ সালের জুন মাস যেমন উৎসবের ছিল, তেমনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দেয় নানা দুর্যোগ। ৪ জুন সীতাকুণ্ডের বি এম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের সেবা দিতে নিরলসভাবে কাজ করেছেন চট্টগ্রাম বন্ধুসভার বন্ধুরা। জাতীয় পর্ষদ থেকে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেওয়া হয়। হঠাৎ পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় মাসব্যাপী সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কুড়িগ্রাম, কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার্ত মানুষের পাশে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় বন্ধুসভা। বন্ধুরা নিজেদের স্বেচ্ছা অনুদানে প্রায় ১১ লাখ টাকার ত্রাণসহায়তা প্রদান করেন।
প্রথম আলো বন্ধুসভা বিশ্বাস করে, গাছ বাঁচলে, বাঁচবে দেশ। তাই প্রতিবছর বর্ষাকালে দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ করেন বন্ধুরা। ২০২২ সালে ‘পৃথিবী একটাই, আসুন গাছ লাগাই’ শিরোনামে আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাস (জুলাই-আগস্ট) জুড়ে সারা দেশের ৬৫টি বন্ধুসভা মোট ৩০ হাজার ৯৫৬টি গাছের চারা রোপণ করেছে। মোট গাছের মধ্যে ১৩ হাজার ৭৪৮টি বনজ, ৯ হাজার ৫১০টি ফলদ ও ৩ হাজার ৯৩৮টি ঔষধি। বন্ধুরা কেবল চারা রোপণেই সীমাবদ্ধ থাকেন না, বৃক্ষে পরিণত হওয়া পর্যন্ত নিয়মিত পরিচর্যা করেন। ২০২৩ সালেও ‘প্লাস্টিকমুক্ত পৃথিবী চাই, গাছ লাগাই, গাছ বাঁচাই’ প্রতিপাদ্যে জুলাই ও আগস্ট মাসজুড়ে দেশব্যাপী ২০ হাজারের বেশি বৃক্ষরোপণ করেছেন বন্ধুরা। কর্মসূচিকে আরও গতিশীল করতে ১ আগস্ট সিলেট, জয়পুরহাট ও গাইবান্ধা বন্ধুসভার সভাপতিকে নিয়ে বৃক্ষরোপণ বিষয়ে বিশেষ ফেসবুক লাইভ হয়।
২০২২ সালের আগস্ট মাসজুড়েও ছিল বন্ধুদের ব্যাপক ব্যস্ততা। ৬ আগস্ট (২২ শ্রাবণ) ‘যাহা দিলাম তাহা উজাড় করিয়াই দিলাম’ শিরোনামে প্রথম আলো কার্যালয়ে রবীন্দ্রনাথের মহাপ্রয়াণ দিবস উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হয়। ২০২২ সালে রবীন্দ্রজয়ন্তী উদযাপন সম্ভব না হলেও ২০২৩ সালের ৮ মে ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার আয়োজনে ‘মহিমা তব উদ্ভাসিত’ শিরোনামে রবীন্দ্রনাথের জন্ম উৎসব উদ্যাপিত হয়।
ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার এ যুগে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আজকাল অনেক মিথ্যা তথ্য দ্রুত ছড়িয়ে যায়। সাধারণ সেগুলোর সত্যতা যাচাই না করেই শেয়ার দিয়ে দেয়। এ থেকে বন্ধুদের সচেতন করতে ২০২২ সালের ১৪ আগস্ট অনলাইন তথ্যের সত্যতা যাচাই কৌশল কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। প্রশিক্ষক ছিলেন সাংবাদিক ও ফ্যাক্ট চেকিং বিশেষজ্ঞ দিল আফরোজ জাহান। পরদিন ১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবসে ‘মহাশোকে মহাশক্তি অবিরাম’ শিরোনামে প্রথম আলো কার্যালয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে বন্ধুসভা। ২০২৩ সালের ১৫ আগস্টেও ‘মুজিবের রক্তশোকই চিরন্তন চেতনা’ শিরোনামে কারওয়ান বাজারে বন্ধুসভাকক্ষে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া সারা দেশের বিভিন্ন বন্ধুসভা বঙ্গবন্ধু স্মরণে আলোচনা সভা, বিনা মূল্যে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও পাঠচক্র করে। ২০২৩ সালের ১৭ মার্চ জাতির জনকের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর বন্ধুসভা চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।
বিতর্ক মানুষকে যুক্তিবাদী করে গড়ে তোলে, ভালো মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। তাই প্রথম আলো বন্ধুসভা বন্ধুদের মধ্যে বিতর্কের চর্চা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি অন্য শিক্ষার্থীদেরও এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। ২০২২ সালের ২৫ আগস্ট রংপুরে প্রথম আলো বন্ধুসভার আয়োজনে স্কুল বিতর্ক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এ উৎসবের আয়োজনে ১৬টি দল অংশ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধুসভার আয়োজনে বিতর্ক ও উপস্থাপনাবিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। ১৫ অক্টোবর লালমনিরহাটে দেড় শ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে বিতর্ক ও উপস্থাপনাবিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। ২০২৩ সালেও বিতর্ক চর্চার এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। একই বছরের ১ থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত মোট ৯টি পর্বে অনলাইন বিতর্ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় দেশের ৫৪টি জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অসংখ্য শিক্ষার্থী অংশ নেন। এর ফাঁকেই চলে আরও একটি অনলাইন বিতর্ক প্রতিযোগিতা। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৩ উপলক্ষে ১ থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত চলে জাতীয় নারী বারোয়ারি বিতর্ক প্রতিযোগিতা, যেখানে সারা দেশের অসংখ্য নারী বিতার্কিক অংশ নেন। বিতর্ক নিয়ে ২০২৩ সালে আরও কয়েকটি আয়োজন হয়। এর মধ্যে ১৭ মে জাতীয় পর্ষদের তত্ত্বাবধানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যারিয়ার ও বিতর্কবিষয়ক কর্মশালা, ২৫ মে জাতীয় পর্ষদের তত্ত্বাবধানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার আয়োজনে বিতর্ক, নেতৃত্ব ও সংগঠনবিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
২০২২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় জাতীয় পর্ষদের উদ্যোগে বাচিক উৎকর্ষ ও আবৃত্তি কর্মশালা। অনলাইনে সপ্তাহে ২ দিন করে দুই মাসব্যাপী চলে এই কর্মশালা। সারা দেশের বন্ধুদের আগ্রহের ভিত্তিতে ২০২৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসজুড়ে আবারও অনুষ্ঠিত হয় ‘শুদ্ধ উচ্চারণ ও আবৃত্তি কর্মশালা’। সপ্তাহে দুই দিন করে অনলাইন জুম অ্যাপের মাধ্যমে ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়। এ বছরের নভেম্বরে ‘এসো কবির কবিতায় অবগাহন করি’ শিরোনামে কবিতা নিয়ে অনলাইনে বিশেষ আলোচনা সভার প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় পর্ষদের সহসভাপতি সাইদুল হাসানের সঞ্চালনায় কবিদের গল্প ও কবিতা আবৃত্তি শোনার একটি ধারাবাহিক এ আয়োজনের দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হয় ২১ নভেম্বর এবং তৃতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হয় ২০২৪ সালের ৬ জানুয়ারি।
শরৎকালে কাশফুল ফোঁটে। এ সময়ে আকাশের সৌন্দর্য সবাইকে আকৃষ্ট করে। একই সময়ে দেশে উদ্যাপিত হয় শারদীয় দুর্গোৎসব। সব মিলিয়ে চারদিকে উৎসব উৎসব আমেজ থাকে। সেই আমেজে শামিল হতে ২০২২ সালের ১২ অক্টোবর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে দেড় শতাধিক বন্ধুর অংশগ্রহণে ‘শারদ উৎসব’ শিরোনামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ।
অনেক দিন ধরেই বন্ধুদের চাওয়া ছিল বিভিন্ন বন্ধুসভাকে নিয়ে ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করা। বিভিন্ন কারণে সেটি সম্ভব না হলেও ২০২২ সালের ১৪ অক্টোবর ঢাকার কয়েকটি বন্ধুসভাকে নিয়ে প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজন করে জাতীয় পর্ষদ। মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়াতে এই টুর্নামেন্টে অংশ নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, ঢাকা মহানগর ও বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ।
প্রতিবছরের নভেম্বর বন্ধুসভার জন্য ব্যস্ততম মাস। জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের নির্দেশনায় এ মাসে প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একটি করে ভালো কাজের অংশ হিসেবে ২৭ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর সারা দেশের বন্ধুরা অসংখ্য সেরা কাজ করেন। সারা দেশের ৭৯টি বন্ধুসভা মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে সম্পূর্ণ নিজেদের অর্থায়নে দরিদ্রদের দোকান, ছাগল, রিকশা, ভ্যান কিনে দেওয়াসহ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়। ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে সচেতনতা কার্যক্রম চালায়, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, আদিবাসী জনগোষ্ঠী, সুবিধাবঞ্চিত নারীদের নিয়ে স্বাস্থ্যসচেতনতা অনুষ্ঠান, সুরক্ষা ও শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ, বিশেষ সম্মাননা প্রদান করে। গ্রন্থাগার ও বই পরিষ্কার, অন্ধদের মধ্যে সাদাছড়ি বিতরণ, সাঁকো বানিয়ে দেওয়া, হাজার তালগাছের চারা রোপণ করেন বন্ধুরা। ৪ নভেম্বর প্রথম আলোর পাঠক উৎসবে বন্ধুসভার স্টলে ছবি তোলার প্রতিযোগিতা, কনটেন্ট রাইটিং প্রতিযোগিতা, নতুন বন্ধু সংগ্রহ ও সার্বক্ষণিক লাইভ মিউজিকের ব্যবস্থা থাকে। এ ছাড়া পাঠক উৎসবের পুরোটা সময় বন্ধুসভার ৭০-এর বেশি বন্ধু স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ৪ নভেম্বর থেকে ১০ নভেম্বর সারা দেশের ৮৯টি বন্ধুসভা প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পাঠক সমাবেশ, গুণীজন সম্মাননা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ১১ নভেম্বর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে ‘বন্ধুত্বে অহর্নিশ বন্ধুসভার ২৪’ শিরোনামে বন্ধুসভার জন্মদিন উদযাপন করে জাতীয় পর্ষদ। এতে ঢাকার বিভিন্ন বন্ধুসভার শতাধিক বন্ধু অংশ নেন।
২০২২ সালের শেষ চমক ছিল বার্ষিক সভা ও আনন্দ আড্ডা ‘এসো মিলি জলধারায়’। ৩০ ডিসেম্বর লঞ্চযোগে ঢাকা-চাঁদপুর-ঢাকা ভ্রমণ। সারা দেশের ৫৫টি বন্ধুসভার সাত শতাধিক বন্ধু এতে অংশ নেন।
অন্যদিকে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে প্রথম আলো ও বন্ধুসভার রজতজয়ন্তী উপলক্ষে আরও বিশেষ রঙিন সময় পার করেন সারা দেশের বন্ধুরা। ৪ নভেম্বর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত জাতীয় পর্ষদের তত্ত্বাবধানে সারা দেশের ৬৪টি জেলাসহ ৭০টির অধিক স্থানে প্রথম আলোর রজতজয়ন্তী আয়োজন করে স্থানীয় বন্ধুসভাগুলো। ১১ নভেম্বর বন্ধুসভার রজতজয়ন্তী উৎসবে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে ঢাকাসহ সারা দেশের ৫৬টি বন্ধুসভার চার শতাধিক বন্ধু উপস্থিত ছিলেন। সারা দিন উৎসবে আর আনন্দে মেতে বন্ধুত্বের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে ফিরে যান বন্ধুরা।
২০২২ সালের ১৩ নভেম্বর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে ‘চলো জ্যোৎস্নায় ভিজি’ শিরোনামে কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উদ্যাপন করা হয়। এতে নানা আয়োজনে বাংলা কথাসাহিত্যের রাজপুত্রকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন বন্ধুরা।
২০২২ সালের নভেম্বরে জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির সঙ্গে জাতীয় পর্ষদের নেতৃত্বে একটি অসাধারণ প্রচারণা অভিযান পরিচালনা করা হয়। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার বিশেষ ছয়টি অভীষ্ট বিষয়ে যুবসমাজ ও নারীদের সচেতন করতে ‘এসডিজি: যুব ও নারীদের বলিষ্ঠ প্রতিনিধিত্বের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট ও চট্টগ্রামে বিশেষ প্রচারাভিযান পরিচালনা করা হয়। এর অংশ হিসেবে একটি আন্তবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা, রেডিও পডকাস্ট, ভিডিও ডকুমেন্টারি নির্মাণ, তরুণদের নিয়ে শোভাযাত্রা, নাটিকা, নাচ, গান, আলোচনা সভাসহ নানা আয়োজন করা হয়। ১৯ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন শতাধিক তরুণ, ২৬ নভেম্বর সিলেট শিল্পকলা একাডেমি, ২৯ নভেম্বর চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমিতে এবং ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সারা দেশের বন্ধুসভাসহ বিভিন্ন সেক্টরের তরুণ, যুবক, নারী ও তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিদের নিয়ে এই প্রচারাভিযান অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেড় হাজারের বেশি বন্ধু ও অন্য অতিথিরা যুক্ত হন।
২০২২ ও ২০২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে বন্ধুসভার শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের পাশাপাশি জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের তত্ত্বাবধানে সারা দেশের বিভিন্ন বন্ধুসভা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নানাভাবে স্মরণ করে। ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসেও একইভাবে জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের তত্ত্বাবধানে সারা দেশের বিভিন্ন বন্ধুসভা মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি নানা আয়োজনের মাধ্যমে গভীর শ্রদ্ধা জানায়। এ ছাড়া ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর বন্ধুসভাকক্ষে ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার আয়োজন করে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান ‘শাবাশ বাংলাদেশ’।
২০২২ সালের শেষ চমক ছিল বার্ষিক সভা ও আনন্দ আড্ডা ‘এসো মিলি জলধারায়’। ৩০ ডিসেম্বর লঞ্চযোগে ঢাকা-চাঁদপুর-ঢাকা ভ্রমণ। সারা দেশের ৫৫টি বন্ধুসভার সাত শতাধিক বন্ধু এতে অংশ নেন। অনুষ্ঠানে বর্ষসেরা ১০ বন্ধুসভার নাম ঘোষণা ও সম্মাননা প্রদান এবং বৃক্ষরোপণে সেরা ১০ বন্ধুসভার নাম ঘোষণা ও সম্মাননা প্রদান করা হয়। বন্ধুদের কেউ কেউ বলছিলেন, এ আয়োজন বন্ধু সমাবেশের স্মৃতি ফিরিয়ে আনল।
২০২২ সালে ডিসেম্বরে অন্যান্য কাজের পাশাপাশি সারা দেশে নতুন কমিটি গঠনের কাজও চলতে থাকে। এর ভিত্তিতে ২০২৩ সালের জানুয়ারির ১ তারিখ সব কমিটির অনুমোদন দিয়ে দেয় জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ। নতুন বছরের কাজ মূলত সেদিন থেকেই শুরু হয়ে যায়। এর ফাঁকেই চলতে থাকে শীতবস্ত্র বিতরণ ও জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী সংবর্ধনায় বন্ধুসভার বন্ধুদের স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম। ১ থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশের অন্তত ৩০টি জেলায় বন্ধুদের নিজস্ব অর্থায়ন ও প্রথম আলো ট্রাস্টের সহায়তায় শীতার্তদের মধ্যে কম্বল, শাল, টিকাসহ বিভিন্ন শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। আর জাতীয় পর্যদের তত্ত্বাবধানে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে দেশের ৬৪ জেলায় অনুষ্ঠিত জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী সংবর্ধনা বাস্তবায়নে কাজ করেন বন্ধুরা।
২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো বন্ধুসভার ওয়েবসাইট ও ছাপা কাগজে নিয়মিত লেখালেখি করেন, এমন বন্ধুদের নিয়ে আয়োজন করা হয় ‘লেখক বন্ধু উৎসব’, যেখানে রেজিস্ট্রেশনের ভিত্তিতে সারা দেশের বন্ধুরা অংশ নেন।
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সারা দেশের নতুন কমিটি ঘোষণার পর আগের বছরের ধারাবাহিকতায় ফেব্রুয়ারির শুরুতেই আট ধাপে আটটি বিভাগীয় অঞ্চল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বন্ধুদের নিয়ে অনলাইনে সাংগঠনিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সব বিভাগের বন্ধুসভার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ দায়িত্বশীল বন্ধুরা বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।
শীত শেষে বসন্ত নিয়ে আসে ভালোবাসার বার্তা। সেই সবার মধ্যে ভালোবাসার বার্তা ছড়িয়ে দিতে ২০২৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোর কার্যালয় সভাকক্ষে ‘বাতাসে বহিছে প্রেম’ শিরোনামে ঢাকা মহানগর বন্ধুসভা আয়োজন করে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এর কয়েক দিন পরই ২১ ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সারা দেশে ভাষাসৈনিক ও ভাষাশহীদদের নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে প্রথম আলো বন্ধুসভা। ওই দিন রাতেই জাতীয় পর্ষদের উদ্যোগে ‘বাংলা ভাষার জন্য ভালোবাসা’ শিরোনামে ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমে সারা দেশের বন্ধুদের মধ্যে বাংলা ভাষার তাৎপর্য তুলে ধরা হয়।
প্রথম আলোর একটি পাঠক সংগঠন হিসেবে বন্ধুসভার অন্যতম কাজ বন্ধুদের লেখালেখি এবং বেশি বেশি পড়ায় উৎসাহ দেওয়া। ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো বন্ধুসভার ওয়েবসাইট ও ছাপা কাগজে নিয়মিত লেখালেখি করেন, এমন বন্ধুদের নিয়ে আয়োজন করা হয় ‘লেখক বন্ধু উৎসব’, যেখানে রেজিস্ট্রেশনের ভিত্তিতে সারা দেশের বন্ধুরা অংশ নেন। ২ জুন প্রথম আলোর কার্যালয়ে সভাকক্ষে বন্ধুসভার উদ্যোগে আয়োজিত এ উৎসবে সারা দেশের শতাধিক বন্ধু অংশগ্রহণ করেন। দিনব্যাপী তাঁরা লেখালেখি বিষয়ক বিভিন্ন কর্মশালা এবং আলোচনায় অংশ নেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২৯ জুলাই আয়োজন করা হয় ‘কবিতা উৎসব ২০২৩’। ‘যে কবিতা শুনতে জানে না, সে আজন্ম ক্রীতদাস থেকে যাবে’ স্লোগানে প্রথমবারের মতো এ আয়োজন করা হয়। দুটি উৎসবেই অংশগ্রহণকারীদের প্রশিক্ষণ দেন দেশসেরা কবি ও লেখকেরা। ২০২৩ সালের আগষ্ট মাসে শুরু হয় স্পোকেন ইংলিশ কর্মশালা। জাতীয় পর্ষদের উদ্যোগে অনলাইনে সপ্তাহে দুই দিন করে তিন মাসব্যাপী এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রায় ৮০ জন নিয়মিত শিক্ষার্থী ইংরেজিতে কথা বলায় প্রাথমিক দক্ষতা অর্জন করেন।
সারা দেশের তরুণদের ক্রমবর্ধমান মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার কথা বিবেচনায় নিয়ে এ বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের কাজ করার পরিকল্পনা ছিল। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠান ইউনিমেড ইউনিহেলথ। তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৮ আগস্ট কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে বন্ধুসভার আয়োজনে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় ‘মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিষয়ক কর্মশালা’। দেশসেরা মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের অধীন এ কর্মশালায় সারা দেশের ৮৩টি বন্ধুসভা থেকে ৮৩ জন বন্ধু টিওটি (ট্রেইনিং ফর দ্য ট্রেইনার্স) প্রশিক্ষণে অংশ নেন। এর ধারাবাহিকতায় পরবর্তীকালে ১০ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ১১ সেপ্টেম্বর অতীশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১২ সেপ্টেম্বর ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, ১৭ সেপ্টেম্বর গাজীপুর, ১৮ সেপ্টেম্বর ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ৩০ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাষানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ২৪ নভেম্বর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, ১ ডিসেম্বর দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ২ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ৮ ডিসেম্বর ভৈরব ও ৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিষয়ক কর্মশালা’ অনুষ্ঠিত হয়।
এভাবেই ২০২২ ও ২০২৩—এই দুই বছরে জাতীয় পর্ষদের নেতৃত্বে সারা দেশের বন্ধুসভাগুলো আবারও যেন নতুন প্রাণ ফিরে পায়। সতেজ এক স্পন্দনে নব উদ্যমে দেশব্যাপী ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় বন্ধুদের আবেগ আর ভালোবাসায় ভরে উঠেছিল সারা দেশ। সত্যি বলতে, এই পর্ষদের অধীন চেষ্টা করা হয়েছে, নানামুখী ব্যতিক্রমী সব কাজের মাধ্যমে বন্ধুদের যত বেশি ব্যস্ত রাখা যায়। অনলাইন-অফলাইন– সব মাধ্যমেই বন্ধুদের নতুন নতুন আইডিয়া আর কর্মসূচির মধ্য দিয়ে গতিশীল এক বন্ধুসভা গঠনে কাজ করেছে এই পর্ষদ। পর্ষদের সব সদস্যের মেধা ও শ্রমের পাশাপাশি মহানগর বন্ধুসভার সক্রিয় সহযোগিতা এবং সারা দেশের বন্ধুদের ভালো কাজের মধ্য দিয়ে দুটি বছর সফলভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি আমরা। আর কে না জানে! ভালো কাজ, শুধু ভালো কাজ করলেই এগিয়ে যাবে আমার, আমাদের—সবার বন্ধুসভা; এগোবে দেশ, আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ।
সাধারণ সম্পাদক (২০২২-২০২৩), বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদ