বিড়ালের দ্বীপ

দ্বীপে মানুষের থেকে বিড়ালের সংখ্যা অনেক বেশিছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

বিড়াল পছন্দ করেন না, এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। গৃহে পালনের জন্য পোষা প্রাণীর মধ্যে বিড়ালই অধিকাংশের পছন্দ। তারা খুবই আদুরে হয়। আমরা তাদের হুলো, মিনি, পুষি কত নামেই না ডাকি।
জেনে অবাক হবেন যে জাপানে এমন কতগুলো দ্বীপ রয়েছে, যেখানে মানুষের থেকে বিড়ালের সংখ্যা অনেক বেশি। এর মধ্যে একটি দ্বীপ তাশিরোজিমা। সেখানে বিড়ালের সংখ্যা মানুষের থেকে তিন গুণ বেশি। এটি জাপানের মিয়গির আইসিনোমাকিতে অবস্থিত একটি ছোট্ট দ্বীপ, আয়তন মাত্র দেড় বর্গকিলোমিটার। এটি আজিশিমার পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগরের ওশিকা উপদ্বীপে অবস্থিত।

১৯৫০–এর দশকে দ্বীপের জনসংখ্যা ছিল প্রায় এক হাজার। কিন্তু বর্তমানে দ্বীপে মাত্র ১০০ জন লোকের বাস। তাঁদের অধিকাংশই আবার বৃদ্ধ। লোকসংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে তাশিরোজিমা দ্বীপের তাশিরো এলিমেন্টারি বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। অথচ এই দ্বীপে গেলে দেখা মিলবে হাজার হাজার বিড়ালের। পুরো দ্বীপে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য বিড়াল। এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে বিড়াল নেই। তাই জাপানি ভাষায় এ দ্বীপকে বলে নেকোজিমা বা বিড়ালের দ্বীপ।

দ্বীপটিতে গেলে দেখা মিলবে হাজার হাজার বিড়ালের
ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

হয়তো ভাবছেন, এ দ্বীপে এত বিড়াল এল কী করে? বহু বছর আগে দ্বীপটির মানুষ মাছ ধরে ও রেশম উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু ইঁদুরের দল জেলেদের মাছ ধরার জাল কেটে ফেলত, কখনো রেশমের শূককীটগুলো নষ্ট করে ফেলত। তাই বিরক্ত হয়ে স্থানীয় লোকজন শহর থেকে কিছু বিড়াল নিয়ে আসেন ইঁদুরগুলো জব্দ করার জন্য। তারপর কিছুদিনের মধ্যে ইঁদুরগুলো চলে গেল বিড়ালের পেটে আর ওই দ্বীপের মানুষের জীবনে শান্তি ফিরে এল। তখন থেকে দিন দিন বিড়ালের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে দ্বীপের মানুষজনও দ্বীপ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। এ দ্বীপে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়, তাই বিড়ালের খাবার পেতে কষ্ট হয় না। আবার বিড়ালের কোনো শত্রু নেই। কারণ, দ্বীপের কোনো মানুষ কুকুর পোষেন না। এমনকি কুকুরকে এখানে আসতে দেওয়া হয় না।

জাপানের মানুষের বিড়ালের প্রতি ভালোবাসা অনেকটা ভিন্ন ধরনের। তাঁরা বিড়ালকে সৌভাগ্যের প্রতীক মনে করেন। তাঁদের বিশ্বাস, বিড়ালকে খাওয়ানো হলে ধনসম্পদ বৃদ্ধি পাবে। ২০১১ সালের সুনামিতে তাশিরোজিমা দ্বীপটির অনেক ক্ষতি হবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু তেমন কোনো বিপদ ওই সময় দ্বীপের মানুষের হয়নি। সে থেকে দ্বীপের বাসিন্দাদের ধারণা, বিড়াল থাকার কারণে কোনো বড় বিপদে তাঁরা পড়েননি।

বন্ধু, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা