শিক্ষকের ঋণ শোধ হবার নয়

শিক্ষকপ্রতীকী ছবি

শিক্ষক একটা সভ্য জাতি গড়ার কারিগর। ধৈর্য, সততা ও সাহস নিয়ে যিনি যুদ্ধ করেন একটা সুন্দর সমাজ গড়তে, আজকের শিশুকে আগামী দিনের ভবিষ্যৎ হিসেবে গড়ে তুলতে। মা–বাবার পরই শিক্ষকের অবস্থান সর্বোচ্চ। জন্মের পর মায়ের মুখ থেকে ভাষা শেখার পর এবং হাঁটি হাঁটি পায়ে বাবার হাত ধরে চলার পথ পর্যন্ত মাতা–পিতার স্নেহ-ছায়াতলে আগলে থাকা হলেও এরপর আমাদের শিক্ষার কর্মভার অর্পিত হয় শিক্ষকের কাছে, যিনি আমাদের উত্তম শিক্ষা ও সাহস যুগিয়ে দেশ ও রাষ্ট্রের সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলেন।

আমি শিক্ষাজীবনে বহু শিক্ষকের সাহচর্য পেয়েছি। উত্তম শিক্ষা ও উৎসাহ-অনুপ্রেরণা পেয়েছি বলে আজ লিখতে পারছি। অনেক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কিংবা প্রতিযোগিতায় সেরা ফলাফলে উত্তীর্ণ হয়েছি। আর যেটা পেয়ে সবচেয়ে বেশি আনন্দিত হই, তা হচ্ছে শিক্ষক ও মা–বাবার মুখে ভালো সন্তান হিসেবে উপাধি পাওয়া। কখনো কখনো এমন হয় যে শিক্ষার্থীর সফলতায় শিক্ষকই সবচেয়ে বেশি আনন্দিত হন।

শৈশব থেকে অনেক শিক্ষকের কাছে পড়লেও আমার একজন প্রিয় শিক্ষক আছেন—মাস্টার জাকের হোসেন। সহজ-সরল, সাদাসিধে। নানা সমস্যায় থেকেও মুখে হাসি রেখে চলাফেরা করেন সব সময়। যাঁর কাছে যেকোনো কথা মুখ খুলে বলা যায় সহজে এবং তিনি মন দিয়ে শোনেন। কোনো শিক্ষার্থী বিপদে পড়লে সবার আগে তিনি এগিয়ে আসেন। ক্লাসে পড়ানোর সময় অবহেলা না করে খুব যত্নের সঙ্গে বুঝিয়ে উদাহরণ দিয়ে পড়ান। সব শিক্ষার্থীকে সমান চোখে দেখেন, যেন ওনার ক্লাসে অমনোযোগী শিক্ষার্থীও পড়ার সময় মনোযোগী হয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের ভুল-ক্রটি ক্ষমার চোখে দেখে উৎসাহ বাড়িয়ে দিতে তিনি যেন উদার মনের মানুষ। এ জন্যই তিনি সবার প্রিয় শিক্ষক। এই শিক্ষকের কাছে আমি অনেক ঋণী। মাঝেমধ্যে ভাবি, শিক্ষকের সব ঋণ আমি শোধ করে দেব। কিন্তু, কীভাবে শোধ করব, তা জানা নেই! পৃথিবীর যেকোনো দামি বস্তু এনে দিলেও তা শোধ হবার নয়।

কুতুবদিয়া, কক্সবাজার