ক্রমাগত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনযাত্রাও পরিবর্তিত হচ্ছে। নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার এই স্বার্থপর সময়ে এসে অন্যের জন্য কিছু করাই যেন বিলাসিতা। এমন সময়ে নিজের অর্থ, মেধা ও শ্রম ব্যয় করে স্বেচ্ছাসেবা রীতিমতো ‘ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো’ কারবার! অথচ প্রথম আলো বন্ধুসভার বন্ধুরা সারা দেশেই এই ‘মোষ’ তাড়িয়ে বেড়াচ্ছেন। তাঁদের মাথায় সারা দিনের চিন্তা—কখন ও কোথায় কোন দুর্যোগ হলো, ত্রাণ কিংবা চিকিৎসার সহায়তা নিয়ে যেতে হবে; উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। আবার ঈদ কিংবা পূজায় পাশের মানুষটি কেমন আছে, সে চিন্তায় নিজের খরচের টাকা বাঁচিয়ে তাদের জন্যও উৎসবের উপলক্ষ তৈরি করেন। গাছ রোপণ করেন, সেগুলো যত্ন নিয়ে বড় করেন। এই যেমন সিলেটের বন্ধু শাকির একাই প্রায় ৩৫ হাজার গাছ রোপণ করেছেন। ছুটি পেলেই নিজের টাকায় গাছ কিনে শহরের আনাচকানাচে ছায়ায় ভরিয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
শুধু কি তাই! এলাকার কোন মানুষটি অসুস্থ, কে একটু সহায়তা পেলেই নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে—এসব খুঁজে খুঁজে তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসা মানুষগুলোর অধিকাংশই বন্ধুসভার বন্ধু। এত সব বৈচিত্র্যপূর্ণ কাজ ও বিস্তৃত পরিসরের সেবা নিয়ে বন্ধুরা হাজির হন যে আমরাই মাঝেমধ্যে হাঁপিয়ে উঠি—কোনটা রেখে কোনটা দেখব, কোন সংবাদটা আগে প্রকাশ করব!
সারা দেশে যেন ভালো কাজ, নিজেকে গঠন ও দেশের সেবার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন আমাদের বন্ধুরা! অথচ জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ থেকে কিছু নির্দেশনা, কদাচ খানিক অর্থ বা সামান্য উপকরণ সহায়তা ছাড়া আর কিছুই করতে পারি না আমরা। তবু বন্ধুরা অদম্য, অনতিক্রম্য। নিজেকে গড়ে তোলার হার না–মানা প্রত্যয় আর অন্যের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিতে তাঁদের যে প্রতিশ্রুতি, তা আমাদের আরও সাহসী করে তোলে। আমাদের মনে করিয়ে দেয়, বন্ধুরা আছে বলেই বাংলাদেশ এত সুন্দর। সত্য সাহসে অপরাজেয় বন্ধুত্বের আকর বন্ধুসভার ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দেশ ও দেশের বাইরের সব বন্ধুকে জানাই হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা।