সে বছর সবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। পরিবার থেকে দূরে সেবারই ছিল প্রথম পূজা। বিভিন্ন কারণে বাড়িতে যাওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় দুর্গাপূজা ও শরৎকালীন ছুটিতে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সবাই যার যার মতো বাড়িতে চলে যায়। আমরা কয়েকজন বন্ধু ক্যাম্পাসে থেকে গিয়েছিলাম। চট্টগ্রামে তখন নতুন, রাস্তাঘাট তেমন চিনি না। কোথায় পূজা হয়, তা–ও জানি না। তাই কোথাও ঘুরতে যাওয়া হবে না, এমনটাই ধরে নিয়েছিলাম। মহাষষ্ঠীর দিন দুপুরে হঠাৎ বন্ধু আনোয়ার ও রুবেল আমার বাসায় আসে। বলে, ‘তোদের না আজকে পূজা! তুই তাহলে ঘরে কেন?’ আমি বললাম, ‘কোথায় পূজা হয় চট্টগ্রামে জানি না। তাই ঘর থেকে বের হইনি।’
পরদিন সপ্তমীর অপরাহ্ণে আনোয়ার, রুবেল, শাফিন, সোহাগ, আফতাব, এবি মামুন, হ্যাপী, শীলা—সবাই মিলে আমার বাসার নিচে এসে বলল চল সবাই মিলে পূজা দেখতে যাব। আমি তখন ধুতি পরি আর কপালে সিঁদুরের তিলক আঁকি। পরে শাটল ট্রেনে করে শহরে যাই সবাই মিলে। ক্যাম্পাস থেকে শাটলে শহরে যেতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগে। চট্টেশ্বরী কালীমন্দির, জে এম সেন হল পূজামণ্ডপ, হেমসেন লেন, টেরিবাজার, হাজারীগলি, দেওয়ানজি পুকুরপাড়, দক্ষিণ নালা পাড়া, খলিফাপট্টি ও চেরাগী পাহাড় পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখি। মন খারাপ হবে ভেবে আমাকে সেদিন সঙ্গ দেওয়া বন্ধুরা সবাই মুসলিম। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই প্রথম বর্ষের পূজার স্মৃতি আমার মনে চিরজাগরূক হয়ে থাকবে।
অসাম্প্রদায়িকতা শুধু মুখের বুলি না বানিয়ে আমরা যদি প্রত্যেকের নিজের কাছের মানুষের সঙ্গে উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পারি, সেটাই হবে সম্প্রীতির সৌন্দর্য।
বন্ধু, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা