জীবনের ব্যস্ততায় কখনো কখনো নিজেকে হারিয়ে ফেলি আমরা। প্রতিদিনের রুটিনে আবদ্ধ জীবনে একটু একটু করে হারিয়ে যায় নিজের সঙ্গে যোগাযোগ। ঠিক তেমনই একটি সময়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার ব্রেকে সিদ্ধান্ত নিলাম, এবার একা বেরিয়ে পড়ব। বন্ধুদের সঙ্গে নয়, শুধু নিজের সঙ্গে নিজের একটি যাত্রা। একটি বিশ্বস্ত ট্যুর গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঠিক করলাম সিলেট ভ্রমণের।
রাতের ট্রেন যাত্রা ছিল অনন্য। নক্ষত্রখচিত আকাশের নিচে ট্রেনের জানালা দিয়ে দেখা চাঁদের আলো, রাতের নীরবতা, চাকার ছন্দময় শব্দ— সবকিছু মিলে এক অপূর্ব অনুভূতি। হালকা কুয়াশা ভেদ করে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোরবেলা যখন সিলেট পৌঁছালাম, মনে হলো যেন প্রকৃতি নিজেই স্বাগত জানাচ্ছে। পয়লা ফাল্গুন, বসন্তের কোমল স্পর্শে সিলেট যেন আরও মনোরম।
প্রথম দিনের ভ্রমণসূচি ছিল বৈচিত্র্যময়। কচি পাতার সবুজে মোড়া চা-বাগানের অফুরন্ত সৌন্দর্য, রাতারগুলের অপরূপ দৃশ্য, ভোলাগঞ্জের সাদা পাথরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া স্ফটিক স্বচ্ছ জলধারা—প্রতিটি মুহূর্ত স্মরণীয় হয়ে আছে।
দ্বিতীয় দিন ছিল আরও রোমাঞ্চকর। সূর্যের সোনালি আলোয় ভেসে যাওয়া জাফলংয়ের পাহাড়ি সৌন্দর্য, লালাখালের নীল জলে ট্রলার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, তামাবিল সীমান্তের অপার বিস্ময় এবং সন্ধ্যার আলো-আঁধারিতে আগুন পাহাড়ের দুর্দান্ত দৃশ্য—সবকিছু মিলে যেন এক স্বপ্নময় অধ্যায়।
যেমন করে অন্ধকারের আবরণ ভোরের প্রথম কিরণে বিদীর্ণ হয়ে যায়, তেমনই এই ভ্রমণ আমার শহুরে জীবনের দমবন্ধ করা ভারকে লঘু করে দিল। প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্যে প্রতিটি মুহূর্ত যেন নতুন করে বাঁচার প্রেরণা জাগিয়ে তুলল। পাহাড়ের সবুজ, স্বচ্ছ জলধারা, নদীর কল্লোল—সবকিছু মিলে অন্তরে এক অপূর্ব প্রশান্তি এনে দিল।
এই ভ্রমণ থেকে শিখলাম মাঝেমধ্যে নিজের সঙ্গে সময় কাটানো, নিজেকে খুঁজে পাওয়া, নিজের সঙ্গে নতুন করে পরিচয় করা কতটা জরুরি। জীবনের ব্যস্ততার মধ্যেও নিজের জন্য কিছু মুহূর্ত বের করে নেওয়া উচিত। নিজেকে না চিনলে, নিজের সঙ্গে সময় না কাটালে, জীবনের সত্যিকারের সৌন্দর্য উপলব্ধি করা যায় না। প্রকৃতির কোলে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার এই যাত্রা আমাকে শিখিয়ে গেল, সবচেয়ে সুন্দর ভ্রমণ হলো যখন সঙ্গী হয় নিজের অন্তরের অনুভূতি।
শিক্ষার্থী, সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি