এই যে মেঘের ক্রন্ধন থামছে না। সারা দিন ঝরছে অবিরত। কখনো হালকা আবার কখনো ভারী! এই বাদলা দিন কি ছোট্টবেলার সেই গ্রামীণ বাদলা দিনের মতো? কখনো না, কোনোভাবেই না।
কলাগাছের ভেলা নিয়ে মাঠে-ঘাটে চষে বেড়ানো পাড়ার দুষ্টু ছেলেরা কোথায়? আজ আর আম–আঁটি দিয়ে বাঁশি বানায় না কেউ।
বাড়িজুড়ে আম-কাঁঠালের ঘ্রাণ এখন বিরল। ব্যাঙের বিয়ের উৎসবে ঘুম ভেঙে যাওয়া, মায়েদের হাতের বৃষ্টিবিলাসী সেসব রান্না আজ কোথায়? খিচুড়ি, বিচি ভাজা, খই, মুড়িমাখা? আজ কেবল বৃষ্টিবিলাসী খাবার বলতে আমরা চা ও কফি খুঁজি।
এমন বাদলা দিনে ঘরে ঘরে হওয়া সেই আড্ডা কোথায়? মা-বোনদের নকশিকাঁথার বুনন গল্প কোথায় হারিয়ে গেল? সবাই এখন যান্ত্রিক। মুঠোফোনই হয়ে উঠেছে নিত্যসঙ্গী। গোল হয়ে বসে লুডু খেলার সেই জায়গাটাও মুঠোফোন নিয়ে নিল।
কালো জামের দেখা নেই পথে-ঘাটে! নেই পানির হইচই চারপাশে। নেই মাছ ধরার তাড়া।
ছোটবেলায় কদম ফুল নিয়ে খেলা হতো। কদমের মোহজুড়ানো রূপ আর ঘ্রাণে আকুল সেই গ্রামেও এখন কদম মেলা ভার। এখনকার শিশুরা কদম, কেয়া, হিজল, জারুল ও গন্ধরাজ বলতে বইয়ের ছবিকে চেনে। বাস্তবে কয়টি ঋতুর পরিচয় তাদের হাতে-কলমে দেওয়া হয়?
ডাহুক পাখিকে মিস না করে কি করে আমার বর্ষা যায়? ভুল করে ঘরে কোলাব্যাঙ ঢুকে পড়ে না। কোথায় সাতরঙা আকাশ? আকাশচুম্বী অট্টালিকার আড়ালে দেখা যায় না রংধনু।
শহরের পাশাপাশি গ্রামের অলিগলিও যেন নিষ্প্রাণ আজ! পাখিরা ভেজা চিকুরে আশ্রয় নিতে আসে না বারান্দায়। বধূরা বৃষ্টির নির্মল পানি সংগ্রহে ব্যস্ত নেই। সিরিয়ালের পার্ট মিস দেওয়া ভারি মুশকিল।
কাদায় মাখানো সেই মেঠোপথ খুব মনে পড়ছে। মনে পড়ছে বৃষ্টিস্নাত সবুজ ঘাস। মায়ের নকশিকাঁথার ফুঁড়ে ভুল করে দিয়ে বকা খেতে মন চাচ্ছে। লুকিয়ে ভাইয়ার সঙ্গে সাইকেলে ঘুরে বেড়াতে ইচ্ছা করছে খুব। ভেজা, কাদায় মাখানো রূপ দেখে মায়ের যে রাগান্বিত চোখ, সেটা আজ বড্ড ফিরে পেতে মন চায়।
‘বর্ষা আসে ফিরে, কিন্তু সেই সোনালি সময় আর আসে না।
যা গেছে তা একেবারেই গেছে।
আছে শুধু মৃদু কিছু রেশ আর স্মৃতির পাতা।
আর কখনো ছোটা হবে না কদমতলে।
মেঘের মালা গেঁথে সাজা হবে কি কবু?
হয়তো হবে, হয়তোবা না!’
বন্ধু, কক্সবাজার বন্ধুসভা