বাবার প্রতি উৎসর্গ

অলংকরণ: এস এম রাকিবুর রহমান

আমার অপূর্ণ ভালোবাসা,

জীবনের অনেকটা পথ তোমায় ছাড়া চলতে চলতে ঠিক কখন যে তোমার ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়েছে আমার সব আবেগ, বিশ্বাস করো, বুঝতেই পারিনি। আমার সব ভালো লাগা, ভালোবাসার এক ছদ্মনাম হয়ে উঠেছিলে তুমি। কখন, কোথায়, কী প্রয়োজন—তা বলার আগেই বোঝার জন্য যদি তোমাকে আমার মাইন্ড রিডার বলি, তবে খুব একটা ভুল হবে না।

চলার পথে হোঁচট খাওয়ার ভয়ে আমাকে কাঁধে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো সেই অবয়ব আজ ঝাপসা। স্মৃতির পাতায় আজ শুধুই কালসিটে। ভীষণ করেও যদি এখন বলতে চাই, আমি তোমায় অসম্ভব ভালোবাসি। তবে সেই চিৎকার তোমার কান অবধি আর কখনো পৌঁছাবে না। তাই তো মেঘের খামে আজ তোমার নামে আমার ঠিকানাহীন পত্র লেখা। ভালোবেসে যদি শেষবারের মতো তোমায় ছুঁয়ে দেখতে চাই, তবে সেই চাওয়া কি শুধুই ভ্রান্ত আবেগ হবে, নাকি আমার অশ্রু ফোঁটার ন্যায় বর্ষণের আগেই উবে যাবে?

যে রঙিন পৃথিবীতে রোজ নতুন করে ছন্দ সাজাতাম, হেসে-খেলে বেড়াতাম; সেই পৃথিবী যে তোমায় ছাড়া এক সাদাকালো জলছবি হয়ে যাবে, তা আমার ভাবনার অতীত ছিল। আমার ভালো থাকাগুলো কেড়ে নিয়ে তুমি পাষাণ একলা ঘুমাও, জানতে ইচ্ছা করে না, আমার ঘুম হয় কি না? তুমি জানতে না চাইলেও আমার জানাতে খুব ইচ্ছা করে, তুমি ছাড়া আমার রাতগুলো ভীষণ নির্মম হয়ে উঠেছে। সারা দিনের ভ্রান্ত মোহের মুখোশ খেলা শেষে রাত হলে আমার মস্তিষ্কে তোমার চেতনার ঢল নামে। জানি, তুমি বড্ড নিষ্ঠুর। তাই এসব তোমায় ভাবায়নি একবারও। ছলনাময়ী পৃথিবীতে আমায় একলা করে চোখের শেষ পলক ফেলতে কি অশ্রুবিন্দু ঝরেছিল তোমার? ভীষণ জানতে ইচ্ছা করে।

এই যে তোমায় নিয়ে আমার এত প্রশ্ন, এত আক্ষেপ, এত কিছু লিখছি; জানি, এসব তোমার কাছে পৌঁছাবে না। তুমি এখন গভীর ঘুমে মগ্ন, এই ঘুম কখনো ভাঙার নয়। তবু মেঘের খামে তোমায় একটা বার্তা পাঠানোর বড্ড শখ। যেখানে রঙিন তুলিতে লেখা থাকবে—‘তোমার রাজকন্যা তোমায় অসম্ভব ভালোবাসে, বাবা’।

অর্থ সম্পাদক, নোয়াখালী বন্ধুসভা