প্রিয় ভ্যালেন্টাইন,
কেমন আছ জানতে চেয়ে নিজেকে লজ্জিত করতে চাই না। ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখ সবার রঙে–ঢঙে, চলনে–বলনে, মায়ায়-কায়ায় বসন্ত এলেও আমার আর তোমার বসন্ত এল না। এ নিয়ে বেজায় চটেছ জানি, কিন্তু কী করব বল, নিয়তির লিখন যে অন্য।
সবাই পলাশের মাস দেখে ফেলেছে রঙিন চোখে, কিন্তু আমার সর্বনাশ তোমাকে না দেখে। ফাগুনের আগুনে আমিও জ্বলতে চাই, পুড়তে চাই কিন্তু ফাগুন তার আগুন দিয়ে কেন জানি আমায় পোড়ায় না, জলের মতো নিভিয়ে দেয় ওর মিষ্টি, উষ্ণ শীতলতা দিয়ে। সে কি আর বুঝে আমার না পোড়ার জ্বালা, আমার অন্তর্দহন!
যাক গে সে কথা। লিখতে বসেছি আর ভাবছি কি লেখা যায়! এ আমার এক সমস্যা। যখনই তোমায় নিয়ে লিখতে বসি, কলম আর চলেই না আর চললেও থামে না। ব্যাপারটা এমন যে ভালোবাসা প্রকাশ করতে বসলে আর প্রকাশ পায় না। আর একবার প্রকাশ হয়ে গেলে শুধু কলম চলতেই থাকে। মনে হয়, কলমদানির সব কালি শেষ হয়ে গেলেও আমার মনের কলম চলছেই তো চলছে। দেখছি আর শুনছি ফাগুন এসে গেছে, কিন্তু আমার ফাগুন তো সব সময় আমার সঙ্গেই আছে, তাই না বল?
এক আজব দেশে বাস করছি, জানো! এত দিন শুনতাম এরা রোবট কিন্তু আসলেই যে এরা রোবট, তা এই বসন্তে ভালোই টের পেয়েছি। এরা শুধু কাজের পেছনে ছোটে, সেই কাজের পেছনে ছুটতে গিয়ে মায়া–মমতা, ভালোবাসার ধরন-ধারণ সবই ভুলে গেছে। সঙ্গে আমাকেও ভুলতে বসিয়েছে। কিন্তু নেহাত বাঙালি বলে কথা! এত সহজে কি আর আমার পূর্বসূরির চিন্তা-ভাবনা পাল্টাতে পারবে!
তোমার জন্য আমার ভালোবাসা থাকবে ১২ মাস। পাক্কা ১২ মাস আমাদের বসন্ত, ফাগুন—সব কিছুই। এই যে টুক করে বলে ফেলছি ভালোবাসি, দেখলে দিনক্ষণ মেনে ভালোবাসি বলতে হয় না। কিন্তু কবে যে তোমার সঙ্গে দেখা হবে সেই অপেক্ষার পালা আর ফুরাল না বুঝি।
কাজের ভিড়ে থাকলে ভালোবাসার দরজা-জানালা সব যেন অবরুদ্ধ আমার জন্য, তখন হাঁসফাঁস লাগে, দম বন্ধ হয়ে আসে। তাই সুযোগ পেলেই একটু নিশ্বাস নিয়ে নিই। এই যে আবোলতাবোল বকে বুক ভরে নিশ্বাস নিয়ে নিলাম। আবার ভেবো না আমার ভালোবাসা আবোলতাবোল। ওটা তোমার জন্যই বরাদ্দ থাকবে।
কিন্তু ব্যাপার হলো তুমি পৃথিবীর ঠিক কোন জায়গায় লুকিয়ে আছ, তাই এখন খুঁজে দেখার বিষয়।
আজ আর লিখছি না, তোমার অনেক কষ্ট হয়ে গেছে জানি এতটুকু পড়তে। কিন্তু কিছুই করার নেই। এই যে পড়তে পড়তে হাসছ, তাই তো আমার পাওনা, আমার ভ্যালেন্টাইনের পক্ষ হতে উপহার। যেতে যেতে কোনো এক কবিতার একটি চরণ মনে পড়ে গেল, ‘ভালো থেকো ফুল, মিষ্টি বকুল, ভালো থেকো’।
সিউল, দক্ষিণ কোরিয়া