ত্রিশূল

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

সদর দরজার পাশে কায়দা করে লাগিয়ে রাখা ত্রিশূলটা চকচকের পর মেজেঘষে আবার যথাস্থানে রেখে দিল লিপিকা। মেলা থেকে কেনা মহাদেবের ছোট্ট মূর্তিটায় সিঁদুর মাখিয়ে রাখল বেশ করে। কোনো পূজাপাট ছাড়াই মূর্তিটা বেশ আধ্যাত্মিক রূপ ধারণ করে। দুই মেয়ে মর্নিং স্কুলে পড়ে। ওরা ফিরেছে একটু আগে। ওদের খাবারদাবার গুছিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া শেষ। লিপিকা না ফেরা অবধি ওরা দুজনে বাড়িতে, আর কেউ নেই। এবার ও বেরোবে। কলকাতার একটা কলেজে ইংরেজি পড়ায় লিপিকা।

চারতলা বিল্ডিংয়ের একতলায় ওর ফ্ল্যাট। দরজা বিল্ডিংয়ের সামনে দিয়ে। অন্য ফ্ল্যাটে যেতে ভেতরে সিঁড়ি আছে। বাইরে বেরিয়ে যেতেই বড় মেয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। নীল মহাদেব ত্রিশূল সহকারে এক পাশে দাঁড়ানো। তিনি খুব জাগ্রত, এ কথাই জানে লোকজন।

দুর্ঘটনায় প্রীতম মারা যাওয়ার পরে দুই মেয়েকে একা মানুষ করছে লিপিকা। বাড়িতে কোনো কাজের মেয়ে রাখতে ভরসা হয় না। হিউম্যান, বিশেষত গার্ল চাইল্ড ট্রাফিকিং খুব বেশি রকমের বেড়ে গেছে।

অবশ্য আগেও ছিল না, তা নয়। হতো, মানুষ জানত কম। ছোটবেলার কথা মনে পড়ে। ওর মা-বাবা দুজনেই চাকরি করতেন, তিন ভাইবোন বাড়িতে ফিরত নিজেদের মতো। নরেন্দ্রপুরে পৈতৃক বাড়ির দরজার বাইরে লিখে দেওয়া থাকত, ‘কুকুর হইতে সাবধান’। তিনতলা বাড়ির কোথায় কুকুর আছে তা বাইরের লোকের বোধগম্য না হলেও ওই একটি বাক্য যে অনেক অধর্মকে দূরে রাখেনি, তা তো আর বলা যায় না!

ধর্ম নিয়ে মাথা ঘামায় না লিপিকা। শুধু জানে অধর্ম রুখতে কখনো কুকুর আর কখনো ঠাকুর...যস্মিন দেশে যদাচার...।

অ্যাপ ক্যাব আসছে। পেছনে তাকাল লিপিকা, টা টা করল, বারান্দায় দুটি কচি মুখ, হাত নাড়ছে চারটি কচি কচি হাত। রোদ লেগে ত্রিশূলটা ঝিকমিক করছে।

বোয়ালখালী, কধুরখীল, চট্টগ্রাম