গঞ্জের পথ

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

আমার অস্থির আর ছোট্ট কদমের বিপরীতে বাবা ছিলেন সব সময় ধীরস্থির। চোরকাঁটায় ধরাশায়ী আমি হঠাৎ চিৎপটাং হতে চাইলে আচমকা কোথা থেকে যেন বাবার প্রশস্ত হাত আমার পতন রোধ করত অবলীলায়। ভাবতাম এমনই তো হওয়ার কথা। আজন্মকাল আমাকে পতন থেকে বাঁচিয়ে দেবে বাবা কিংবা বাবার মতোই কেউ।

পথচলাতে বাবা দেখাতেন গঞ্জের পথ, গুদারাঘাট আর একহারা মগড়া-নদীর ঢেউ। তিরতির কাঁপনের তরঙ্গায়িত, স্নিগ্ধ ও গুঞ্জরিত সে ঢেউ! ঢেউয়ের দোলায় তরতরিয়ে সামনে এগিয়ে যেত ডিঙিনৌকার দল। কোশার দুলুনির সঙ্গে মিতালি করে হারিয়ে যেত আমার শরীরে তেতে থাকা ভাদ্দুরে উত্তাপ। হাঁটতে হাঁটতে আনমনে পেরিয়ে যেতাম বখশির মোড়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা বুড়ো অশ্বত্থকে। গঞ্জ আর কতদূর? উত্তরে বাবা হাসতেন। জলে ভেজানো ঠান্ডা ছাতাটা আরেকটু মেলে ধরতেন মাথার ওপর। উৎসাহ জাগিয়ে বলতেন, এই তো দুই কদম আর।

গঞ্জে যাওয়ার সে পায়ে হাঁটার পথ হারিয়ে ফেলেছি আজ অনেক দিন। পথকে খুঁজে বেড়াই, কিন্তু পথ আমাকে খোঁজে না, দেখা দেয় না বহু দিন। খুঁজে পাই না বাবার সেই অনাবিল ছোঁয়া, স্নিগ্ধ পরশ, খুঁজে পাই না অশ্বত্থের মখমলি পুরোনো সেই পাতা। হা-হুতাশ করি, বাবা তুমি কোথায়? জানি না, কোথায় আছে তোমার আজন্ম মেলে ধরা, জলসিক্ত সেই ছাতা।

পূর্ব রামপুরা, ঢাকা