মায়ের শাসন

গত রোববার ছিল মা দিবস। দিনটি উপলক্ষে মায়ের সঙ্গে তাঁদের স্মৃতি ও ভালো লাগার ঘটনা নিয়ে দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য লেখা পাঠিয়েছেন বন্ধুসভার বন্ধু ও পাঠকেরা। বাছাইকৃত লেখা নিয়ে আজকের আয়োজন।

অলংকরণ: এস এম রাকিবুর রহমান

কয়েক বছর আগের কথা, সবে মাধ্যমিকে উঠেছি। গ্রীষ্মের দুপুর, বাইরে খাঁ খাঁ রোদ! গরমে আম্মুর শরীর ঘেমে একাকার। তার মধ্যেও দুপুরের রান্না চাপিয়েছেন চুলায়। আমি তখন স্কুল থেকে ফিরেছি।

আম্মুর কষ্ট হচ্ছে দেখে বললাম, ‘আম্মু আমি আজ রান্না করি, তুমি বিশ্রাম নাও।’ তিনি মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, ‘তোমার রান্না করতে হবে না, গিয়ে গোসল করে নাও।’ কিন্তু কে শোনে কার কথা। যেহেতু বলেছি রান্না করব, তবে রান্না করেই ছাড়ব।

একপর্যায়ে আম্মু বলে উঠলেন, ‘আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি মাছটা ভেজে নাও, আমি তাহলে সবজিটা কেটে নিই।’ আমি তো মহাখুশি। নিজে নিজেই মাছে মসলা মাখিয়ে ভাজার জন্য কড়াইয়ে তেল দিলাম। এবার মাছ তেলে ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তেল ছিটকানোতে এক দৌড়ে আম্মুর কাছে। আম্মু একগাল হেসে দিয়ে বললেন, ‘এত তাড়াতাড়ি যে তোমার মাছ ভাজা শেষ হবে, তা তো জানতাম না।’ লজ্জায় আর কথাই বলতে পারলাম না তখন।

স্কুলের সামনে হাতে একটা আইসক্রিম ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘আইসক্রিম খেয়ে সোজা ক্লাসে যাও।’ আইসক্রিম পেয়ে আমার কান্নাও উড়ে গেল, সঙ্গে পেটব্যথাও।

এ রকম আরেক দিন হয়েছে। স্কুলে যাব না আমি। প্রতিদিন স্কুলে যেতে ভালো লাগে না। অন্যদিকে আম্মুর কাছে স্কুলে না যাওয়া মানে বিরাট সমস্যা। যাহোক, যেহেতু মন চাচ্ছে না, একটা শয়তানি বুদ্ধি বের করতেই হবে।

সকালের খাবার খেয়ে ড্রেসও পরে ফেললাম, কিন্তু কোনো বুদ্ধি আসছে না। হঠাৎ মনে পড়ল, অসুস্থতার কথা শুনলে আম্মু না করবে না। যেই বলা সেই কাজ—পেটব্যথার কথা বলে ওয়াশরুমে গিয়ে আমি আর বের হই না। অনেকক্ষণ ধরে ডাকার পর দরজা খুলে বাইরে আসতেই আম্মুর ধমক।

বললাম, ‘আমি কি ইচ্ছে করে বের হচ্ছিলাম না, পেটব্যথা করতেছে অনেক।’ আম্মু বললেন, ‘পেটব্যথা স্কুলে গেলেই ভালো হয়ে যাবে।’ অমনি গালে দুটো থাপ্পড় বসিয়ে আমাকে টানতে টানতে স্কুলে নিয়ে গেলেন। আমার সে কী কান্না!

পরে স্কুলের সামনে হাতে একটা আইসক্রিম ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘আইসক্রিম খেয়ে সোজা ক্লাসে যাও।’ আইসক্রিম পেয়ে আমার কান্নাও উড়ে গেল, সঙ্গে পেটব্যথাও।

বন্ধু, কিশোরগঞ্জ বন্ধুসভা