গভীর জলের যমুনা নদী পার হয়ে যেতে হয় বহুদূর। কিছু মেয়ে সাহস করে নৌকায় উঠে পড়ে। পানির ওপর ভাসমান নৌকায় জীবন অনিশ্চিত জেনেও তারা পাড়ি দেয়। তবে মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য আমরা লাইফ জ্যাকেট রাখি। বিপদ-আপদ তো আর বলে–কয়ে আসে না।
বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত সাড়ে আটটা। মা বললেন, ওই বুড়ো লোকটির সঙ্গে দেখা হয়েছিল কি না। চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের এক বৃদ্ধ, দুই বছর আগে ত্রাণ বিতরণের সময় তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করেছিলেন। মায়ের সেই কথা আজও মনে আছে। বললাম, দেখা হয়নি। কারণ, এ বছর আমরা অন্য একটি চরে যাই। তবে এবারও এক বৃদ্ধ নারী আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে দিলেন। তাঁর নাম জানা হয়নি।
শীতবস্ত্র বিতরণের আগে কারা এগুলো পাবে, সেই তালিকা করতে গিয়ে আরেক নারীকে দেখেছিলাম। কিন্তু বিতরণের দিন চোখে পড়েনি। তাঁর স্বামী প্রতিবন্ধী, তাঁর নিজেরও জন্ম থেকে এক চোখ অন্ধ। কার্ড দিতে গেলে জানান, তিনি একেবারে নিঃস্ব, ঘরে কোনো আসবাব নেই। আমি বলি, চলেন আগে আপনার ঘর দেখি তারপর কার্ড দেব। তিনি আমাকে নিয়ে যান। কিন্তু আর ঘরে ঢুকলাম না। মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ।
কাজ শেষ করতে করতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে। আমাদের কারোরই খাওয়া হয়নি। বিকেলে খাবার টেবিলে কর্মঠ ছেলেমেয়েদের দিকে তাকিয়ে রইলাম, যেন সামনে যা পাবে তা–ই খেয়ে ফেলবে। ওদিকে একজন তরকারি না দিতেই সালাদ দিয়ে খেতে শুরু করেছে।
‘ভালোর সাথে আলোর পথে’ থাকা বন্ধুরা অদম্য, দুঃসাহসিক, কর্মঠ বলেই ওরকম দুর্গম চরে পৌঁছে যায় শীতের উষ্ণতা। বন্যায় পৌঁছে যায় ত্রাণসামগ্রী। মানুষের ভালোর জন্যই যত আয়োজন।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বগুড়া বন্ধুসভা