খেয়াল রাখতে হবে, এ বসন্তে আমাদের ত্বক যেন সুরক্ষিত থাকে এবং যেকোনো বৈরী ঋতু মোকাবিলা করতে পারে।
এবারের শীত বেশ জাঁকিয়ে এসেছিল। শীতের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে শীতপ্রেমীরাও কখন গ্রীষ্ম আসবে এই অপেক্ষায় ছিল। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ঋতুতে যে গরম হবে, সেটি নাকি বেশ প্রকটভাবেই হবে, মানে গরমের তীব্রতাও খুব বেশি থাকবে।
এই যে আবহাওয়ার এত তারতম্য, এতে আমাদের ত্বকে এর প্রভাব ফেলে ভীষণভাবে। সে ক্ষেত্রে আমরা যেটি করতে পারি, তা হলো এ ধরনের আবহাওয়ার তারতম্যের সঙ্গে আমাদের ত্বক যেন খাপ খাইয়ে নিতে পারে। প্রথমেই খেয়াল রাখতে হবে, এ বসন্তে আমাদের ত্বক যেন সুরক্ষিত থাকে এবং যেকোনো বৈরী ঋতু মোকাবিলা করতে পারে।
প্রথমত, এ শীতে আমাদের ত্বক খুব শুষ্ক, রুক্ষ বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেটাকে আমরা কীভাবে পুনরুদ্ধার করব। অনেক সময় দেখা যায় ত্বকের শুষ্কতা, রুক্ষতা এবং সেই সঙ্গে আসন্ন বসন্তে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে আমাদের অয়েল গ্ল্যান্ড থেকে হয়তো বেশি তেল নিঃসরণ করতে পারে, দেখা দিতে পারে ব্রণ।
অনেক সময় শীতে অনেকে সানস্ক্রিন ব্যবহার করে না, যে কারণে যাদের মেছতা থাকে, সেটাও হয়তো বেড়ে যায়। যাদের ত্বকে এ ধরনের ব্রণ ও মেছতা একসঙ্গে থাকে, তাদের ক্ষেত্রে আমরা যে চিকিৎসা করতে পারি, সেটি হচ্ছে ‘হাইব্রিড স্কিন কেয়ার’ এবং ‘হাইব্রিড ট্রিটমেন্ট’। হাইব্রিড স্কিন কেয়ারে প্রথমেই লক্ষ্য রাখতে হবে, যে ক্লিনজারটি ব্যবহার করা হবে, তা যেন স্কিনকে হাইড্রেটেড রাখে এবং অবশ্যই তা স্কিনকে রুক্ষ করবে না। আর তা বোটানিক্যাল অর্গানিক হলে ত্বকের জন্য বেশ আরামদায়ক হয়। সে ক্ষেত্রে ক্যামোমাইল এক্সট্রাক্ট যুক্ত ফেস ক্লিনজার যদি আমরা ব্যবহার করি, সেটি ত্বককে ক্লিন করার পাশাপাশি অয়েল বা সেবামকেও নিয়ন্ত্রণ করে, ত্বককে রাখে হাইড্রেটেড এবং পরবর্তী যে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করব, সেটির জন্য ত্বককে প্রস্তুত করবে। তবে ময়েশ্চারাইজারের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে হাইড্রেশন। মনে রাখতে হবে যে হাইড্রেটেড ত্বক সব সময় সুরক্ষিত, সেখানে ব্রণের আশঙ্কা কম থাকে এবং যদি অন্য কোনো সমস্যাও থাকে, সেটিকে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
সে ক্ষেত্রে হায়ালুরনিক যুক্ত কোনো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া যাদের একটু ম্যাচিউর স্কিন, তারা পেপটাইড রিচ কোনো সিরাম ব্যবহার করতে পারেন; যেটি স্কিন রিপেয়ারের সঙ্গে সঙ্গে এন্টি–এজিংয়ে সাহায্য করে। অর্থাৎ ইলাস্টিন, কোলাজেনকে বাড়িয়ে দেবে। যার ফলে ত্বকের এজিং সাইনকে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে। এ ছাড়া পরবর্তী সময়ে এক্সফোলিয়েশন খুবই দরকার। কারণ, শীতে ত্বকের মৃত কোষ একটি আরেকটির সঙ্গে লেগে থাকে। এ থেকে মুক্তি পেতে আমরা আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড বা বিটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড–জাতীয় কোনো এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার করতে পারি বা আমরা স্লিপিং মাস্ক ব্যবহার করতে পারি। কেননা স্লিপিং মাস্ক খুব ভালো এক্সফোলিয়েটর হিসেবে কাজ করে।
এ পর্যায়ে কিছু হাইব্রিড প্রোডাক্টের কথা বলছি, যা একই সঙ্গে অয়েল কন্ট্রোল, ময়েশ্চারাইজড, হাইড্রেটিং এবং স্কিন গ্লোয়িং করবে।
আরবিউটিন যা ত্বকের ব্রণ, দাগ বা মেছতাকে কমাতে সাহায্য করে। লিকোরেশ এক্সট্রাক্ট, গার্ডেন পি এক্সট্রাক্ট এগুলোতে এন্টি–অক্সিডেন্ট থাকায় তা কোলাজেন বুস্ট করে, পোর কমাতে সাহায্য করে। নিয়াসিনামাইড ত্বকের বেরিয়ার রিপেয়ার করে, স্কিন লাইটেনিংয়ে সাহায্য করে এবং অয়েল কন্ট্রোল করে। স্লিপিং মাস্ক একই সঙ্গে নাইট কেয়ার রুটিনেও কাজ করে। ময়েশ্চারাইজার কাজ করে রিপেয়ার এবং পোর মিনিমাইজার হিসেবে। সব সময় বলা হয়, এ সময়ের ময়েশ্চারাইজারগুলো যেন একটু লাইট ওয়েট হয়। কারণ, আমরা শীতে একটু ভারী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে থাকি। এক্সফোলিয়েটরের ক্ষেত্রে স্লিপিং মাস্ক এবং এ ছাড়া যদি কেউ কোনো ট্রিটমেন্ট নিতে চায় কেমিক্যাল পিল এবং ফিজিক্যাল পিল, যাকে আমরা বলি হাইড্রা ফেসিয়াল, ডুয়ো ফেসিয়াল বা মাইক্রোডারমাব্রেশন ত্বকের এক্সফোলিয়েশনে দারুণ কাজ করে। এর সঙ্গে যদি ব্লু লাইট থেরাপি নেওয়া হয়, তাহলে একনি প্রন স্কিন এবং রেড লাইট থেরাপি যেটি সেনসিটিভ স্কিনের ক্ষেত্রে টনিকের মতো কাজ করে।
আমাদের যেহেতু কনসার্ন এখন হাইড্রেশন ধরে রাখা, হারিয়ে যাওয়া হাইড্রেশনকে ফিরিয়ে আনা এবং সেটিকে ধরে রাখা। পি আর পি ট্রিটমেন্টটি হতে পারে ভালো একটি উপায়। এটি ত্বকের পি এইচ ব্যালেন্স রক্ষা করতে, রিপেয়ারে এবং সেই সঙ্গে হাইড্রেশনে সাহায্য করে পোর মিনিমাইজিংয়ে হেল্প করে। এখনকার খুব জনপ্রিয় ট্রিটমেন্ট হচ্ছে স্কিন বুস্টার। এখানে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড থাকে। আমরা সবাই জানি হায়ালুরোনিক অ্যাসিড হচ্ছে ওয়াটার ম্যাগনেট, যা পানি ধারণক্ষমতা রাখে। এখানে যে হায়ালুরনিক অ্যাসিডটি ব্যবহার করা হয়, সেটি ক্রস লিংক না; সে কারণে খুব লাইট ওয়েট হয় এবং স্কিনে অ্যাবজর্ব হয়ে যায়। এটি একাধারে আমাদের ফাইন লাইনকে সফট করে, এন্টি–এজিংয়ে হেল্প করে, স্কিনে হাইড্রোথেরাপি হিসেবে কাজ করে। আমাদের স্কিনের টোনকে ইমপ্রুভ করে, টেক্সচার ইমপ্রুভ করে এবং ইয়ুথফুল অ্যাপিয়ারেন্সে সাহায্য করে।
যদিও অনেকে ফিলারের সঙ্গে স্কিন বুস্টারকে মিলিয়ে ফেলতে পারেন। সে ক্ষেত্রে একটু জানিয়ে দিচ্ছি যে ডার্মা ফিলার সাধারণত স্কিন ভলিউমিনাইজিং, কন্টোরিং, অগমেন্টেশন—এসব ক্ষেত্রে লাইন ইরেজারে ব্যবহার করা হয়। স্কিন বুস্টারকে বলা হয় সুপারভার্সেটাইল ট্রিটমেন্ট। এটি একাধারে স্কিনের হাইড্রেশন, কমপ্লেক্সন ইমপ্রুভমেন্ট, ব্রাইটেনিং এবং ফাইন লাইনকে হালকা রিমুভ করে এন্টি–এজিং ট্রিটমেন্ট হিসেবে কাজ করে।
এন্টি–এজিংয়ের ক্ষেত্রে যে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে সেটি হচ্ছে সানস্ক্রিন। এটি আমাদের সানবার্ন, সানড্যামেজ—সবকিছু থেকে ত্বককে রক্ষা করে। যাদের ড্রাই স্কিন, তারা সিকা বেইজড সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন, যা ময়েশ্চারাইজার এবং প্রটেকশন দুটোর কাজই করবে, রিপেয়ারও করবে। আর যারা একটু গ্লোয়িং স্কিন চান, সব সময় অফিসে যান বা বাসায়ও একটু স্কিনকে উজ্জ্বল রাখতে চান, তারা ইল্যুমিনেটিং সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন; যা একই সঙ্গে প্রাইমারের কাজও করবে। সানস্ক্রিনের যে তথাকথিত ব্যবহারে স্কিন একটু ডাল বা ডার্ক লাগে, সে রকম ভাবছেন বা অয়েলি হয়ে যায়—সে ক্ষেত্রে রাইস ওয়াটার এক্সট্রাক্ট, সি উইড, ভাইটামিন ই, বোটানিক্যাল এক্সট্রাক্ট যুক্ত, নিয়াসিনামাইড যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন। এটি হচ্ছে হাইব্রিড কসমেসিউটিক্যাল প্রোডাক্ট। যেহেতু সানস্ক্রিন আমরা অনেকটা লম্বা সময় ধরে ব্যবহার করি এবং বারবার রিঅ্যাপ্লাই করি। এটি মেকআপ প্রটেক্টর হিসেবে কাজ করবে আবার সান প্রটেক্টর তো অবশ্যই, স্কিন লাইটেনিংয়েও সাহায্য করে। সুতরাং যাদের পিম্পলের স্পট বা মেলাজমা থাকে, তারা এ ধরনের সানক্রিন ব্যবহারের ফলে দেখবেন যে ধীরে ধীরে স্কিনের দাগও হালকা হয়ে যায়।
স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া সম্পাদক, বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ