বাবারা আদতে ম্যাজিশিয়ান

লেখকের বাবাছবি: সংগৃহীত

ইদানীং বাবার সঙ্গে কথা কম বলি, দূরত্ব রেখে চলি। জানি ওই দুটি হাত মাথায় থাকলে বড় হয়ে যাব ঠিক। তবু দূরত্ব রাখছি, একা একাই চলছি। ছায়া বড় হচ্ছে, বাবা দেখছে।

বাবার সঠিক বয়সের হিসাব নেই। তবু রোজ একবার করে ওনার বয়সটা হঠাৎ বেড়ে যাচ্ছে। তাই একটু দূরে দূরে থাকি, চোখ কম রাখি, অনায়াসে মেটানো আবদারের বয়স বেড়ে যাচ্ছে।

আমার বাবা হাইপ্রেশারের রোগী। বয়স ৫২ পেরিয়েছে কিছুদিন আগে। তিনি একজন সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক। শূন্যতা ছাপিয়ে গেছে তাঁকে। ঘরভর্তি কাগজ আর দলিল।

বাবা জানেন, আমি মাঝেমধ্যে লিখি, মেঘ আঁকি; তবু তাঁকে একটা কবিতা লিখে দিতে পারি না। মুখ লুকিয়ে পালাই, দূরে আরও দূরে।
জীবনে নিজের সঙ্গে জিততে পারিনি কখনো। এ নিয়ে বাবার কোনো অভিযোগ নেই। কী পেয়েছি, কী চেয়েছি, বাবা মনে রাখেন না। তাঁর স্মৃতি দুর্বল। তবু ঘুম ভাঙলে পড়ে থাকে একরাশ শুভেচ্ছার খাতা।

তিনি আমাকে ফোন করেন, খোঁজ নেন খেয়েছি কি না, ঘুমিয়েছি কি না, শরীর কেমন আছে! এপিটাফের সব সিম্ফনির ঘোর লেগে যায়, অন্ধকার কুয়াশায় বাবা হাঁটেন স্কুলের বাইরে দাঁড়ান আমার শৈশব দেখতে।

বাবার মধ্যে ম্যাজিক আছে। তিনি টেলিপ্যাথি জানেন, বুঝে ফেলেন কী বলতে চাইছি। ইদানীং বাবার থেকে দূরে দূরে থাকছি, দিতে চাইছি কবিতার বৃষ্টি, শূন্য চোখে বাবা তাকিয়ে, প্রত্যাশা নেই, ম্যাজিক আছে।
তিনি জানেন, ঠিক তার ছেলে বড় হবে, মাছেদের ভিড়ে হাঙর হবে; শুধু কবিতা লিখবে কি না বাবা জানেন না।

বাবা ম্যাজিক জানেন সব রকমের। আদতে বাবারাই ম্যাজিশিয়ান। তাই আমরা লুকিয়ে বেড়াই। এই বুঝি বৃষ্টি শুরু হবে, মেঘ করে এসেছে...।

স্মৃতি রোমন্থন শেষ। বাবাকে হঠাৎ বেশি মনে পড়ছে। মনে হয়, বাবারা শক্তের আবরণে নরম প্রাণ। তাঁর কোমলতা পথচলায় আরাম দেয়। বাবা, আপনি সুস্থ থাকুন। আমাদের হয়ে থাকুন।