তারিখটা ১ ফেব্রুয়ারি। মৃদু শীত, কিন্তু কুয়াশাচ্ছন্ন বিকেল। আমার ইন্টার্নশিপ চলাকালীন প্রায়ই নগরীর চৌহাট্টা এলাকায় যাওয়া-আসা হয়। প্রতিদিন সেখানে আড্ডা দিয়ে চা না খেলে সময় ভালো কাটে না। হয়তো অভ্যাসটা বাজেভাবে রক্তের মধ্যে মিশে গেছে।
ওই দিন চা খেতে খেতে বৃক্ষবন্ধু শাকির ভাইয়ের সঙ্গে দেখা। ভাই চা খাওয়ার একটা পর্যায়ে বললেন, ‘চল জাকারিয়া, গাছটা দেখে আসি।’ আমি স্বভাবত এসব ব্যাপারে একটু হেঁয়ালি হওয়ায় প্রথমে ইতস্তত বোধ করলেও পরক্ষণে চলে যাই। গিয়ে দেখি, ভাই তাঁর পরম যত্নে লাগানো গাছগুলো দেখছেন। কত রকমের ফুল গাছের নাম একনাগাড়ে বলে দিলেন, আমি শুনে পুরো থ হয়ে গেলাম।
কিছু নাম মাথায় একদম গেঁথে আছে। যেমন জারবেরা, দোপাটি, নয়নতারা,জিনিয়া, পিটুনিয়া, গাজানিয়া ইত্যাদি।
শাকির ভাই সঙ্গে সঙ্গে বলেন, ‘চল আমরা নার্সারিতে যাই। তোকে কিছু ফুল গাছ দেব, তুই বাসায় লাগাবি।’ আমি তৎক্ষণাৎ বললাম, ‘ভাই, এত বড় বিষয়বস্তুর যত্ন আমার পক্ষে হবে না, তার চেয়ে আমি আমার ছোট ভাইবোনদের ডেকে আনি, ওরা ফুলের ব্যাপারে খুবই সচেতন এবং বাসায় নাকি তাদের বহু সমারোহের ফুল গাছও আছে।’ তাদেরকে ফোন দিয়ে আনলাম।
লিমা, উদয়, অনুপ তিনজনের ফুলের প্রতি যেমন ভালোবাসা, তাদের মনটাও ফুলের মতোই কোমল।
তারপর যেই কথা সেই গাছ। শাকির ভাই আমাদের হরেক রকম ফুল গাছ সম্পর্কে পরিচিত করালেন। আর ওনার গাছের প্রতি যে প্রেম–ভালোবাসা, প্রীতিবন্ধন, সেটি প্রকাশ করলেন। এই কাজের জন্য হলেও মানুষটা সারা জীবন বেঁচে থাকুক।
কথা বলার এক পর্যায়ে শাকির ভাই বলে ওঠেন, ‘যার সহায়তায় ওপরওয়ালা অক্সিজেন দেন, তার যত্ন আর বন্ধুত্ব যদি না করি, তাহলে বিনিময়ে আমরা কষ্ট বিনে আর কিছুই পাব না।’
উনি পরম মমতায় তিনটি ফুলের গাছ আমার ভাইবোনদের উপহার দিলেন। শাকির ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে একটা জিনিস অনুভব করলাম, জীবনটাকে আপনি একভাবে সাজাতে না পারলেও, বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষ ভালো থাকার চেষ্টা করে। কত অদ্ভুত নিয়মে সবাই তার দিনাতিপাত করে। কেউ শখে, কেউ আনন্দে কিংবা পেশা হিসেবে বিভিন্ন বিষয় বেছে নেয়। তার পরও মানুষের বেঁচে থাকার ইচ্ছাটা আমাকে সব সময় ভাবায়। নিজের মধ্যে শক্তি সঞ্চয় হয়।
এভাবেই দিন শেষে নিজ উদ্যমে এগিয়ে যাই, সময় কেটে যায়। আমরা ভালো থাকি, সবাইকে ভালো রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করি।
সভাপতি, এমসি কলেজ বন্ধুসভা