সোনার মুকুট চুরি

মুকুটপ্রতীকী ছবি

রাতের শহরে মেঘমালা যেন এক অদ্ভুত রহস্যে ঢাকা। শহরের প্রাচীন জাদুঘরে সেদিন একটি মহামূল্যবান গুপ্তধন প্রদর্শনী চলছিল। এটি ছিল রাজা রুদ্রনারায়ণের রাজ্যাভিষেকের সোনার মুকুট, যা বহু বছর আগে হারিয়ে গিয়েছিল এবং সম্প্রতি জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য আনা হয়।

১৪ বছরের কিশোর গোয়েন্দা নাফিস সেই প্রদর্শনী দেখতে গিয়ে তার গোয়েন্দাগিরি চালাতে ভোলেনি। সে সব সময় রহস্য খোঁজে, আর এই প্রদর্শনী তাকে এক অদ্ভুত আকর্ষণে টানে।

প্রদর্শনীর শেষ রাতেই ঘটে যায় বড় একটি বিপর্যয়। মুকুটটি জাদুঘরের শক্ত সুরক্ষা ভেঙে চুরি হয়ে যায়। খবর ছড়িয়ে পড়তেই পুরো শহর উত্তাল। জাদুঘর কর্তৃপক্ষ জানায়, চোর অত্যন্ত দক্ষ; কোনো আঙুলের ছাপ বা প্রমাণ ফেলে যায়নি।
নাফিসের মনে হলো, এটাই তার সুযোগ। সবার অলক্ষ্যে চুরির রহস্য সমাধানে নেমে পড়ে সে।

প্রথমে নাফিস জাদুঘরে গিয়ে মুকুট রাখা কাচের বাক্সটি পরীক্ষা করে। লক্ষ করে, কাচ ভাঙার চিহ্ন নেই। তবে একটি ক্ষীণ সুগন্ধ ভেসে আসছে। ‘এটা ল্যাভেন্ডারের গন্ধ!’ আপনমনে বলে সে।

নাফিস জানত, শহরের মাত্র কয়েকটি জায়গায় এই সুগন্ধি পাওয়া যায়।
তারপর সে শহরের বিখ্যাত সুগন্ধি দোকান ‘আরোমা হাউস’-এ যায়। দোকানের মালিক তাকে জানায়, সম্প্রতি এক রহস্যময় ব্যক্তি ল্যাভেন্ডারের অর্ডার দিয়েছিল। ‘সে লম্বা ছিলে, গায়ের রং ফর্সা, আর হাতে কালো দস্তানা পরা ছিল,’ দোকানদার বলে।
নাফিস এই তথ্য সংগ্রহ করে দেখে, শহরে লম্বা গড়নের এমন একজন ব্যক্তি আছেন—মিস্টার দুলাল, যিনি প্রাচীন জিনিসের ব্যবসায়ী।

নাফিস দুলালের দোকানে গিয়ে একটি পুরোনো কয়েন সংগ্রহের অজুহাতে কথা বলে। সে দোকানে ল্যাভেন্ডারের গন্ধ পায় এবং দেখে একটি কাচের ছোট বাক্স, যা জাদুঘরের বাক্সটির মতো দেখতে।

নাফিস বুঝে যায়, দুলাল নিশ্চয়ই চুরির সঙ্গে জড়িত। তবে তার কাছে প্রমাণ নেই।
নাফিস দুলালের ওপর নজরদারি শুরু করে। এক রাতে সে দেখতে পায়, দুলাল তার দোকানের পেছনের একটি গুদামে ঢুকে পড়ে। নাফিস চুপি চুপি তার পিছু নেয়। গুদামের ভেতর একটি পুরোনো কাঠের বাক্সের ভেতর মুকুটটি লুকানো ছিল। ঠিক তখনই দুলাল নাফিসকে ধরে ফেলে।
‘তুমি এখানে কী করছ?’ দুলাল হুমকি দেয়। নাফিস আগে থেকেই পুলিশ নিয়ে আসে। তার পরিকল্পনা সফল হয়। পুলিশ এসে দুলালকে আটক করে।

মুকুটটি জাদুঘরে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। নাফিসের সাহসিকতা আর বুদ্ধিমত্তায় শহরবাসী গর্বিত হয়। দুলালকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে আন্তর্জাতিক চোর চক্রের সদস্য। আর নাফিস? সে এখন শহরের নায়ক!

শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়