প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টের সেই রাতে

মায়ের সঙ্গে লেখকছবি: লেখকের সৌজন্যে

তখন হাইস্কুলে পড়ি। এক গভীর রাতে প্রচণ্ড রকম শ্বাসকষ্ট শুরু হলো আমার। বাবা হার্টের রোগী, ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়েছেন। বাকি আছি আমি আর মা। বোনেরা হোস্টেলে। মা বিছানার পাশে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলেন, ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে শ্বাসটান। শোঁ শোঁ করে শব্দ করা শুরু করলাম প্রতি নিশ্বাসে। ঘড়ির কাঁটা রাত দুটোর ঘরে। একেকটা নিশ্বাস নিচ্ছি আর আল্লাহকে ডাকছি। প্রাণপণ চাচ্ছিলাম, মা যেন আমার কষ্টের তীব্রতা না বোঝেন। প্রতিটি নিশ্বাসে মনে হচ্ছিল, আমার নিশ্বাসের ছিদ্রটা সুইয়ের মতো চিকন হয়ে গেল।

মা আর অপেক্ষা করতে পারলেন না। বললেন, ‘বসে থাকা যাবে না। তুই থাক, আমি দেখি।’ বেরিয়ে পড়লেন একা। অন্ধকার, চারদিকে সুনসান নীরবতা। তখন রাস্তায় এত আলো ছিল না। শীতের রাত, সবাই যখন কম্বল মুড়িয়ে ঘুমে আচ্ছন্ন, মা হেঁটে হেঁটে পুরো পটিয়া উপশহরে ওষুধের দোকান খুঁজে বেড়াচ্ছেন একটা ইনহেলারের জন্য। ইনহেলার দিয়ে ছেলে শান্তিতে নিশ্বাস নেবে, মা তৃপ্তি নিয়ে দেখবেন। আমি এক কাতে কুঁজো হয়ে বিছানায় জবুথবু হয়ে আছি। শ্বাসকষ্টের তীব্রতা প্রতিটি ক্ষণে ক্ষণে, একের পর। এর মধ্যে কত সময় পার হয়েছে জানি না।

রুমের দরজা খোলা ছিল। হঠাৎ দেখি, একটা মুখ চুপচাপ দরজা ধরে আমার দিকে মায়াভরা মুখে সারা জগতের চিন্তা নিয়ে তাকিয়ে আছে। আমি তাঁর ভীতসন্ত্রস্ত চেহারা দেখেই বুঝেছিলাম, মাঝে এত সময় যাওয়াতে উনি ভয়াবহ ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন। এরপর তিনি আমার নড়াচড়া দেখে আশ্বস্ত হয়ে ঘরে ঢুকলেন। ইনহেলার নেওয়ার পর আমার শান্তি আর মায়ের সে রাতের যুদ্ধের ইতি।

পটিয়া, চট্টগ্রাম