আমাদের মায়েরা
আমার মা সবিতা
গত রোববার ছিল মা দিবস। দিনটি উপলক্ষে মায়ের সঙ্গে তাঁদের স্মৃতি ও ভালো লাগার ঘটনা নিয়ে দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য লেখা পাঠিয়েছেন বন্ধুসভার বন্ধু ও পাঠকেরা। বাছাইকৃত লেখা নিয়ে আজকের আয়োজন।
মা উনুনশালে রান্না করত। আমি তার পাশে বই আর খাতা নিয়ে বসে। ঘাড় ঘুরিয়ে মা বলে দিত; আমি শুনে শুনে পড়তাম, লিখতাম। মা কড়াই নামিয়ে রেখে পেনসিলটা ধরত, আমার খাতায় লেখা পড়ত। ভুলগুলো আন্ডার লাইন করে দিত। সঠিক কী হবে, বলে দিত। আমি রেজার দিয়ে মুছে সেগুলো ঠিক করতাম। মা আবার রাঁধত। ডালে কাঁটা ঘোরাত মা। আমাকে বলত, ‘নামতা মুখস্থ বল!’ আমি বলতাম। ভাতের ফ্যান গড়াতে গড়াতে মা বলত, ‘কবিতা আবৃত্তি কর!’ আমি করতাম। রংতুলি ধরে আমাকে আঁকা শেখাত। আবার চটের বস্তায় ছুঁচ আর উল দিয়ে আসন বোনা শেখাত। গলা ছেড়ে গান গেয়ে আমাকে শেখাত। ঘরের দরজা বন্ধ করে নিজে নেচে আমাকে নাচ শেখাত। কবিতা, গল্প লেখা শেখাত।
মন্ত্র পড়ে পূজা করা শেখাল, খেলা শেখাল। বড় হলাম আমি। মা আনাজ কোটা, বাটনা বাটা, রান্না, পরিবেশন করা শেখাল।
আমার বিয়ে হলো। মাকে ছেড়ে বিদেশে এলাম। মাকে মিস করি। কেউ বলে না মায়ের মতো, ‘আর দেরি নয়, বেলা গড়িয়ে গেল। খেয়ে নে! পরে আবার লিখবি!’ আমি কটার সময় খাই, কেউই তার খোঁজ রাখে না। অসুখ হলে কেউ বলে না, ‘আজ আর কাজ করতে হবে না! বিশ্রাম কর! তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠ! এই ফলগুলো খেয়ে নে! বল পাবি দেহে!’ মায়ের মতো ওষুধ কেউই মুখে দেয় না।
নতুন পোশাক পরে সাজলে মায়ের মতো কেউই আমার কড়ে আঙুলে হালকা কামড়ে দিয়ে বলে না, ‘মা ষষ্ঠী তোকে রক্ষা করুন! কুনজর থেকে বাঁচাক!’
অনেক দিন কেটে গেল। আমিও মায়ের মতোই মা হলাম। বুঝলাম, মায়ের মানে কী।
এবার মা এল আমার কাছে, আমার নবজাতাক মেয়েকে দেখতে। বলল, ‘একদম তোর মতো দেখতে হয়েছে।’ এই বলে মা আমার মেয়েকে কোলে নিল। আমি বললাম, ‘মা, তুমি আমাকে যত নিখুঁতভাবে বড় করেছ, ঠিক ততটাই নিখুঁতভাবে আমিও যাতে মেয়েকে বড় করতে পারি, সে রকম সবকিছু আমাকেও শেখাও!’ মা হেসে আমার মাথায় হাত রেখে বলল, ‘মা হলে সব মেয়েই নিজে নিজেই সবকিছুই শিখে যায়। আপন মাতৃত্ব আপনিই শিক্ষা।’
নয়াদিল্লি, ভারত