প্রিয় বাবা,
আমার ঝঞ্ঝাটময় জীবনে সব সমস্যার একমাত্র নিখুঁত সমাধান তুমি। তোমাকে ঘিরে আমার পৃথিবী সাজে, যেখানে আমি মুক্ত বিহঙ্গের মতো।
তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে বাবা, তোমার হাতের বাহুতে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়া ছোট্ট শিশুটির কথা? তোমার অসীম যত্ন ও ভীষণ আদরে বেড়ে ওঠা, সেই ছোট্ট শিশুটি আজ যৌবন ছুঁয়েছে। তোমার পরম মমতা ও ভালোবাসার আচ্ছাদনে সুদীর্ঘ দুই যুগ পেরিয়েছে। সেই ছোট্ট শিশুটি আজ বুঝতে শিখেছে বাবা। কিন্তু একটা কথা কখনোই বলা হয়নি তোমাকে। ছোট্ট শিশুটি তোমাকে অসম্ভব রকমের ভালোবাসে বাবা।
জন্মলগ্ন থেকে সুদীর্ঘ ১৮টি বছর ছিল আমার জীবনের সোনালি সময়। এই সময়ে আমার একমাত্র ভালো বন্ধু ছিলে তুমি। তোমার হাত ধরে শৈশব-কৈশোরে বেড়ে উঠেছি। তুমি অফিসে গেলে ভীষণ উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করতাম, কখন বাড়ি ফিরবে? গোধূলি ফোরানোর আগেই তোমার দেখা পেতাম।
উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য আজ দীর্ঘ ছয়টি বছর তোমার কাছ থেকে দূরত্ব বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে হাহাকার। শৈশব-কৈশোরের মতো এখন আর তোমার পিঠে খেলা করা হয় না। জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করে, কিন্তু পারি না। বড় হতে গিয়ে যদি বাবার ভালোবাসা ও আদরে দূরত্ব বাড়ে, তাহলে সেই বড় আমি হতে চাই না।
তোমাকে কখনোই ক্লান্ত হতে দেখিনি বাবা। সেই ছোট্ট থেকে দেখেছি, সকালে অফিসে গিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে আমার সব আবদার পূরণে ব্যস্ত হয়ে পড়তে। তোমার সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে লেগে থাকা আমার অসীম ভালোবাসাকে দূরত্ব ঘায়েল করেছে।
বাবা, তুমি আমার মাথার ওপর বটবৃক্ষের ছায়া হয়ে অবিচল পাশে থেকো। তোমার পিঠে চড়ে বসে লেপ্টে থাকা আমার শৈশবের সব আবদার মিটিয়ে দিয়ো। সর্বদা মায়াময় শীতল আবেগে আগলে রেখো নিখাদ ভালোবাসায়। তোমার কাছেই আমার শেখার শুরু। শাসনের অন্তরালে তোমার কাছে প্রথম বুঝতে শিখেছি পৃথিবীর ভালো-মন্দের পার্থক্য। স্রষ্টার দপ্তরে প্রার্থনা—তোমার সার্বিক সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু হোক। সব সময়ই ভালো থেকো।
ইতি
তোমার সেই ছোট্ট শিশু
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ