সবার জন্য সমান অধিকার হোক

অলংকরণ: এস এম রাকিবুর রহমান

আমার বাবা মো. রফিকুল ইসলাম সেই সময় পুলিশে কনস্টেবল পদে কর্মরত ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে। ২৫ মাচ৴ ১৯৭১, সময় রাত সাড়ে ১১টা থেকে পৌনে ১২টা। পাকিস্তান বাহিনী হামলা শুরু করল রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে। বাবা ও অন্য পুলিশ সদস্যরা প্রাণপণ লড়ে যাচ্ছেন। কিন্তু পাকিস্তানের ভারী অস্ত্রের সামনে কিছুতেই পেরে ওঠেননি। এভাবে কেটে যায় সারা রাত।

পরের দিন বাবা ও অন্য সদস্যরা আহত অবস্থায় চলে যান মিটফোর্ড হাসপাতালে। সেখানেও হানাদার বাহিনী হামলা করলে বাবা লাফ দেন বুড়িগঙ্গা নদীতে। বাঁশ ও নৌকা ধরে বাবা ওপারে চলে যান। টানা তিন থেকে চার দিন হেঁটে পৌঁছান বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে। সেখানকার থানায় নিজের পরিচয় দিলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাবাকে আশ্রয় দেন। পরের দিন বরিশাল থেকে লঞ্চে করে চলে যান ভোলার দৌলতখানে, বাবার নিজ গ্রামে।

কয় দিন পর সেখানে বাবা এবং সেই সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে পালিয়ে আসা আরও সেনা, বিডিআর ও পুলিশের সদস্যরা মিলে একটা মুক্তিবাহিনী দল গঠন করেন। তাঁদের কমান্ডার ছিলেন সেনাবাহিনীর সুবেদার আবসার। দলটি ভোলা ট্রেজারি (যেখানে টাকা থাকে) লুট হতে রক্ষা করাসহ বেশ কয়েকটি অপারেশন চালায়। পরবর্তী সময়ে তারা বড় একটি দলের সঙ্গে যুক্ত হয়। ৯ নম্বর সেক্টরের অধীন থাকা দলটির কমান্ডার ছিলেন আলী আকবর। শুরু হয় দেশকে স্বাধীন করার লড়াই।

১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলো। বাবার ক্যাম্প ভোলা ওয়াবদা থানায়। সেখানে অস্ত্র জমা দিয়ে তিনি চলে আসেন বাড়িতে। রেডিওতে খবর আসে, যিনি যেখানে কর্মরত ছিলেন, তাঁদের সেখানে যোগ দিতে। বাবা আবার রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে যোগদান করেন।

বাবা ও তাঁর সহযোদ্ধাদের বীরত্বের গল্প শুনে বড় হয়েছি। বুক ফুলিয়ে পরিচয় দিতে পারি, আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। চেষ্টা করি বাবার মতো ভালো মানুষ হওয়ার, দেশের জন্য কাজ করার। যে স্বপ্ন নিয়ে তাঁরা দেশ স্বাধীন করেছিলেন, সবার জন্য সমান অধিকার—সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চাই।

সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক, গাজীপুর বন্ধুসভা