ক্রেতাদের হাসিমুখে সওদা দিচ্ছিলেন তিনি

নিজ দোকানে বাবুল বণিকছবি: লেখক

সকালের সূর্যের আলো শরীরে মাখানোর কিছু সময় পার হলো মাত্র। গন্তব্য লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুরের একটি কম্পিউটারের দোকান। বাসার সামনে থেকে রিকশায় ১৫ মিনিটের পথ। কাজ সেরে ফিরতি পথে চোখে পড়ল এক লেবু ব্যবসায়ীর কার্যকলাপ। ক্রেতাদের হাসিমুখে সওদা দিচ্ছেন।

এ ব্যবসায়ীর দিকে নজর যাওয়ার তেমন কোনো কারণ ছিল না। তবু কেন যেন চোখ আটকে গেল। হয়তো তাঁর হাসিমুখ আকৃষ্ট করেছে। এর আগেও বেশ কয়েক দিন লোকটিকে দেখেছি। আজ লেবু কেনার ইচ্ছা নেই। তবু রিকশা থেকে তাঁর দোকানের সামনে চলে গেলাম। কথা বলতে ইচ্ছে হলো। দেখলাম মাত্র ১০ টাকা হালি দরে লেবু বিক্রি করছেন।

কথায় কথায় জানতে পারি, রায়পুর উপজেলা শহরের থানা মোড়ে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ হালি লেবু নিয়ে বসেন বিক্রির আশায়। স্থানীয় বাজারের সবচেয়ে বড় লেবু ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত তিনি। নাম বাবুল বণিক। এক ক্রেতা জানালেন, তিনি বেশ সৎ ও বিনয়ী। বাবুল বণিক বললেন, একসময় করতেন মসলার ব্যবসা। সেই ব্যবসায় স্থবিরতার দরুন লোকসান গুনলেও লেবু ব্যবসায়ে দেখেছেন রুটি-রুজির পথ।

৬০ বছর বয়সী বাবুল বণিকের জন্ম রায়পুর ইউপির শাঁখারি বাড়িতে। জীবনের দীর্ঘ একটি সময় মসলার রসনা বিলাসী হয়ে চালিয়েছেন ব্যবসা। স্থানীয় হাঁটবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে মসলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। করোনা মহামারির বছর কয়েক আগে থেকে উপজেলার থানা মোড়ে প্রতিদিন বসছেন লেবু নিয়ে। নিজের বাগানে সামান্য হলেও বেশির ভাগ লেবু ক্রয় করেন পাইকারি দরে। স্থানীয় বাহার মোল্লারহাট ও দেবীপুর এলাকার এক লেবুচাষির কাছ থেকে প্রতি বস্তা পাইকারি দরে ক্রয় করে হালি হিসেবে বিক্রি করেন।

দুই মেয়ে ও স্ত্রী মিলিয়ে চারজনের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বাবুল বণিক। তবে অসৎ উপায়ে কোনো আয় করেন না। কৃত্রিম উপায়ে দাম বাড়ান না। চেষ্টা করেন ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যে দাম রাখতে। তিনি জানান, প্রতিদিন প্রতি হালি ১০ টাকা দরে ২৫০ থেকে ৩০০ হালি লেবু বিক্রি হয়। কোনো কোনো দিন বিক্রি কম হয়। এ নিয়ে তাঁর মধ্যে কোনো দুশ্চিন্তা কাজ করে না। তিনি বলেন, ব্যবসায় এমন হবেই। বছরের এ সময় প্রতি হালি লেবুর ক্রয়মূল্য পাঁচ থেকে সাত টাকা হলেও তিন থেকে পাঁচ টাকার বেশি মুনাফা করেন না তিনি। ২০ হালির বেশি লেবু কোনো ক্রেতা ক্রয় করলে নিজ থেকে দেন সাধ্যমাফিক মূল্যছাড়।

জীবনের ৬০ বছর বয়সে এসেও জীর্ণশীর্ণ দোকানঘরে সততার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করা মানুষটির সততায় মুগ্ধ মেঘনাপাড়ের এ জনপদ।

রায়পুর, লক্ষ্মীপুর