বন্ধ ফেসবুকে লস মেটার, বুক ধুকপুকানি কেন আমাদের!

ফেসবুকরয়টার্স
এই একটা ছোট ঘটনাই প্রমাণ করে আমরা কতটা সজাগ এ ব্যাপারে। শরীরে আঘাতের পর সে খবর যত দ্রুত আমাদের মস্তিষ্কে পৌঁছায়, ফেসবুক বন্ধ হওয়ার পর আমাদের উদ্বেগও যেন তত দ্রুত ছড়ায়।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে ফেসবুক ব্যবহার করতে গিয়ে এক নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হই। মুঠোফোনে দেখি, ফেসবুক থেকে আপনাআপনি লগআউট করে দিয়েছে আমাকে। ভেবেছিলাম, হয়তো এমনি কোনো সমস্যা। আবার লগইন করতে গিয়ে কোনোভাবেই ঢুকতে পারছিলাম না। বারবার একই জিনিস দেখাচ্ছিল। ল্যাপটপে ঢুকতে গিয়েও একই অবস্থার শিকার। ঠিক সে সময়েই গ্রাম থেকে কল আসে একটা। এলাকার একজনে জানতে চায়, ফেসবুক সম্ভবত হ্যাক করে ফেলেছে তার। ফেসবুকে ঢুকতে পারছে না। আমার কান খাড়া হয় তখন। হেসে দিয়ে বলি ভয়ের কিছু নেই, আমারও একই অবস্থা। সমস্যা নেই, অপেক্ষা করো। ঠিক হয়ে যাবে।

এই একটা ছোট ঘটনাই প্রমাণ করে আমরা কতটা সজাগ এ ব্যাপারে। শরীরে আঘাতের পর সে খবর যত দ্রুত আমাদের মস্তিষ্কে পৌঁছায়, ফেসবুক বন্ধ হওয়ার পর আমাদের উদ্বেগও যেন তত দ্রুত ছড়ায়। প্রায়ই তো আমরা পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসের সংকটে পড়ি। সেটা কিন্তু সহজেই মানিয়ে নিই নিজেদের সঙ্গে। এতটা প্রতিক্রিয়া দেখাই না। কিন্তু এই এক ফেসবুক বন্ধে আমাদের বুকে ধুকপুকানি শুরু হয়। অস্থির হয়ে যাই। কেন? আমরা কি নিজেকে এই প্রশ্ন করেছি কখনো?

যাঁরা ফেসবুক থেকে আয় করেন, ব্যবসা করেন, তাঁদের এক পাশে সরিয়ে রেখে আমরা যাঁরা সাধারণ মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করি, তাঁদের এমন উদ্বেগের ঠিক কী কারণ থাকতে পারে?

আমাদের তো তেমন ক্ষতির কিছু দেখছি না আসলে। এটা ঠিক, অনেক মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে, ছবি রাখা আছে, স্মৃতি আছে অনেক—এ-ই তো। কিন্তু এত উদ্বেগ! এটাকে একটু বেশি বাড়াবাড়িই বলা যায়। কিংবা বলা যায়, ফেসবুকের প্রতি আমাদের অতিরিক্ত আসক্তি এই উদ্বেগের জন্য দায়ী। আমরা ব্যাপারটা ঠিক সহজে নিতে পারি না। মুহূর্তের মধ্যে হুলুস্থুল কাণ্ড বাঁধিয়ে দিই ফেসবুকে ঢোকার চেষ্টা করে। অন্যদিকে এর রেশ দেখা যায় ফেসবুক সচল হওয়ার পর মানুষের নানা প্রতিক্রিয়াও।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর মধ্যে এই এক ফেসবুকেই মানুষ মনে হয়, তার সর্বোচ্চ অবসর সময় ব্যয় করে। এক সপ্তাহের জন্য ফেসবুক বন্ধ হলে কী হবে, সেটা কল্পনা করা কঠিন। তবে অনেকেই ব্যাপারটা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। হয়তো মানুষ আবার সেই খেলার মাঠে ফিরে যাবে, বন্ধুদের আড্ডায় যাবে নাকি বিকল্প কোনো মাধ্যমে জড়িয়ে যাবে, সেটা বলা মুশকিল। তবে বড়সড় একটা পরিবর্তন আসবে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। ই-কমার্স, কনটেন্ট ক্রিয়েটরসহ আরও নানা অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের জন্য রীতিমতো বড়সড় হুমকিই হয়ে দাঁড়াবে ব্যাপারটা।

গতকাল রাত ৯টা থেকে ১০টা ২৩ মিনিট পর্যন্ত মেটার প্রতিষ্ঠান ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও ইনস্টাগ্রাম অচলের জেরে মার্ক জাকারবার্গকে রাজস্ব হারাতে হয়েছে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার। সেখানেই শেষ নয়। সেই প্রভাব পরেছিল মেটার শেয়ারেও। সে সময়ের মধ্যে ১ দশমিক ৫ শতাংশ দাম কমেছিল মেটার। ড্যান ইভস নামে নিউইয়র্কের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে খবরটি জানিয়েছিল ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল। অন্যদিকে আমাদের ওপর প্রভাব পরেছিল বুকের ধুকপুকানি!

সদর, নেত্রকোনা