অসমাপ্ত স্বপ্ন

গিটার

শখের গিটার ছেড়ে গোপাল লেনের শেষ বাড়ির দ্বিতীয় তলার শিক্ষিকার ছেলেটা কম্পিউটারে মনোযোগ দিয়েছিল। সে পড়াশোনার সুবাদে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে। এখন কয়েক ডিজিটের বেতনের চাকরি করে। মাঝেমধ্যে আউটসোর্সিং করে মোটামুটি ভালো আয়ও হয়। সংসারের হালটা মজবুতভাবে ধরেছে সে, তবে এখনো একা থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

লক্ষ্য বা শখ যা–ই হোক, গিটারের তারগুলো এখন ছিঁড়ে গেছে। ফ্ল্যাটের এক কোনায় অবহেলায় পড়ে আছে। বাসা পরিবর্তন হয়েছে, নিজের নামে একটা বাসা হয়েছে। সবকিছু নতুন করে নিয়েছে কিনে। কিন্তু পুরোনো গিটারটা স্থান পরিবর্তন করেনি। সম্পর্কের টানাপোড়েনে পুরোনো আর শৈশব-কৈশোরের জিনিসগুলো আগের বাসায় রয়ে গেছে।

নতুন বাসার নতুন আলমারিতে একটা ইউকুলেল কিনে রেখেছে সুবোধ। মাঝেমধ্যে একটু আধটু টুং টাং করে, চেষ্টা করে সুর তুলতে। কিন্তু হয় না। জীবনের স্রোতে সাংসারিক চাপ সামলাতে গিয়ে গিটারের তার ছেঁড়ার সঙ্গে সঙ্গে হয়তো আগের সুরটাও ছিঁড়ে গেছে।

শত আবদার ও অনুরোধেও ছেলেটা এখন আর সুর তুলতে পারে না। গান গাওয়াও আর হয় না। সুর হয়তো হয়, কিন্তু তাতে প্রাণ আসে না, আনন্দ আসে না। চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ে, আর গিটারের তারে ঝংকার।

বাইক চালিয়ে হয়তো বহুদূর গিয়ে নিজেকে খোঁজে ছেলেটা; তবু গিটারে সুর তুলতে পারে না। ইউকুলেলটা প্রতিদিন ধরে ছেলেটা অন্ধকারে প্রতি রাতে হাতের আঙুলে আওয়াজ তোলে। তাতে সুর বাঁধে। তবে সে সুর কানে না গিয়ে মনে আঘাত আনে। তীব্র অভাবে বড় হওয়া ছেলেটা দেখেছে এই শহরের কঠিন বাস্তবতাগুলো। বয়স হয়তো সুর আটকে দিয়েছে, না হয় মন।
ভ্রমণ ছেলেটা ভালোই করে। প্রকৃতির মধ্যে নিজেকে খোঁজে। অর্থ দিয়ে সময় কিনে তা নিজের জন্য ব্যয় করে। একান্তই নিজের জন্য। তবু দুঃখ এখনো সুরটা আর ওঠে না।

পুরান ঢাকার অলিগলি পথ পাড়ি দিয়ে আধুনিকতার ছোঁয়ায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে সুবোধ। পায়ের নিচে মাটি আর মাথার ওপর ছাদ হয়েছে। নিজের একটা যানবাহন হয়েছে। সমাজে একটা পরিচয় হয়েছে। শুধু গিটারের তালে সুর তুলে মঞ্চ কাঁপানোর স্বপ্নটা অসমাপ্ত রয়ে গেছে।

বন্ধু, নরসিংদী বন্ধুসভা