১০ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা, এক বড় ভাইয়ের জন্মদিনের দাওয়াত ছিল। খাওয়াদাওয়ার পর্ব শেষে সিদ্ধান্ত নিই পূর্বাচলের ৩০০ ফিট যাব। দুই বাইকে করে আমরা চারজন। মোহাম্মদপুর থেকে ৩০০ ফিট। রাস্তা ফাঁকা থাকায় যেতে বেশিক্ষণ লাগেনি।
কিন্তু মন সেখানে টিকল না। বেশ কয়েকবারই জায়গাটিতে যাওয়া হয়েছে। একজন বলল, মাওয়া যাওয়া যায়। সেখানে সারা রাত আড্ডা দিয়ে ভোরে ফিরে আসব। যেই ভাবা, সেই কাজ। বাইক ঘুরিয়ে মাওয়ার উদ্দেশে যাত্রা। পথিমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এসে কিছুক্ষণ বসলে আমাদের সিদ্ধান্তও পরিবর্তন হয়ে যায়। চট্টগ্রামের দিকে যাওয়া যাক। এবার নির্দিষ্ট কোনো গন্তব্য নেই। যত দূর যেতে পারি। ঘড়িতে সময় তখন দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা।
মধ্যরাতে দুটি বাইকে করে চারজনের ছুটে চলা অজানার উদ্দেশে। ফেনীতে যখন পৌঁছাই, তখন ভোররাত চারটা বাজে। সিদ্ধান্ত হলো রাঙামাটি যাব। এরই মধ্যে মুষলধারে বৃষ্টি নামে। বৃষ্টিতে মহাসড়কে বাইক চালানো কঠিন। তাই ফেনীতে ক্ষণিকের জন্য যাত্রাবিরতি দিতে হলো। এই বিরতি শরীরের জন্যও দরকার ছিল, ক্লান্তিভাব দূর করার জন্য। সকাল হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করি।
সকাল হলে আবারও যাত্রা শুরু করি। পথিমধ্যে হঠাৎ এক বন্ধুর চোখ পড়ে সুন্দর এক রাস্তার দিকে। বাইক থামিয়ে ভেতরের দিকে যেতেই দেখি জায়গাটা রাবার বাগান। অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর চারপাশের প্রকৃতি। সেখানে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে এবার পাহাড়ি রাস্তায় আমাদের ছুটে চলা। কিন্তু বেশি গতিতে চালানো যাচ্ছিল না। একটা সময় মনে হলো, রাঙামাটি পৌঁছানো হয়তো সম্ভব হবে না। কারণ, আমাদের আবার ঢাকায় ফিরতে হবে। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে গন্তব্য এবার খাগড়াছড়ির দিকে।
সকাল ১০টায় পৌঁছাই সৌন্দর্যে ভরপুর পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে। সেখানে সকালের নাশতা করে একটু বিশ্রাম নিই। এই ফাঁকে গুগল ম্যাপ দেখে পরিকল্পনা করি কোন কোন দর্শনীয় জায়গায় যাওয়া যায়। সারা রাত বাইক চালিয়ে আমরা অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়ি। তাই দূরের স্পটে যাওয়ার পরিকল্পনা বাদ দিতে হলো। কাছাকাছি ছিল আলুটিলা গুহা। সেখানে চলে যাই। বিশ্রাম ও পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করা—দুটিই হলো। আবারও হঠাৎ বৃষ্টি নামে।
এদিকে বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে, আমাদের ঢাকায় ফিরতে হবে। বৃষ্টি থামার কোনো নাম নেই। ঘড়িতে তখন বেলা তিনটা। আর দেরি করা চলবে না। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই ঢাকার উদ্দেশে রওনা করি। খাগড়াছড়ি টু ঢাকা পুরো রাস্তায় বৃষ্টিতে ভিজে দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় ঢাকায় পৌঁছাই।
অর্থ সম্পাদক, ঢাকা মহানগর বন্ধুসভা