সবুজ কার্পেটে ঘেরা টিলা আর নীলাভ পানির সমারোহে

নীলাদ্রি লেকে লেখকছবি: লেখকের সৌজন্যে

কর্মব্যস্ততায় নিজেকে সময় দেওয়া আজকাল কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। সবাইকে নিয়ে ভাবতে গিয়ে যখন আপন সত্তাকে হারিয়ে ফেলার উপদ্রব দেখতে পাচ্ছিলাম, তখনই ভাবলাম নিজেকে একটু সময় দেওয়া উচিত।

যেই ভাবা সেই কাজ। চলে যাই বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠাপানির জলাবন টাঙ্গুয়ার হাওরে। ৪ অক্টোবর রাত ১০টায় সুনামগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হই। ৫ অক্টোবর সকাল ৯টায় সুনামগঞ্জ থেকে গন্তব্যের দিকে রওনা হই হাউসবোটে। আকাশজুড়ে মেঘ করেছে। সে কী বৃষ্টি! টুপটাপ বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে হাওরে। বৃষ্টিবিলাস করতে করতে হাউসবোট গিয়ে থামল ওয়াচটাওয়ারে। নেমে পড়লাম পানিতে, যেখানে মুহূর্তেই ক্লান্তি ধুয়ে ফেলা যায়। ‘মনকে দিলাম উজার করে, হাওর তোমার মাঝে, তুমি যেন যত্নে রেখো সর্বকালের সাথে।’

বারেক টিলা ঝরনা
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

ঠিক বিকেল পাঁচটার দিকে নীলাদ্রি লেকের দিকে চললাম। চলার পথে দেখা গেল কিছু পাহাড় ও ঝরনা। সবই বাংলাদেশ বর্ডারের বাইরে। বৃষ্টিস্নাত বিকেলে প্রকৃতি দেখতে অদ্ভুত সুন্দর লাগছিল। দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম বাংলাদেশের শেষ সীমানায় অবস্থিত নীলাদ্রি লেক বা চুনাপাথরের খনিতে। সবুজ কার্পেটে ঘেরা টিলা আর নীলাভ পানির সমারোহ। প্রকৃতি তার সব রূপ ঢেলে দিয়েছে এখানে। নীলাদ্রি লেক থেকে দেখা যায় ভারতের মেঘালয়। এ সময় শুরু হয় তুমুল ঝড়-বৃষ্টি। বাধ্য হয়ে ফিরে আসতে হয় বোটে।

পেছনে দেখা যাচ্ছে যাদুকাটা নদী ও সবুজ পাহাড়
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

বৃষ্টি থামার নাম নেই। হেলেদুলে বোট চলছে বারেক টিলার দিকে। পরদিন সকাল হতে না হতেই ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হই। অতিবৃষ্টিতে ভারতের পাহাড় থেকে অথই পানি আসছে যাদুকাটা নদীতে। প্রচণ্ড স্রোতে বোট চলতে পারছে না। বারবার পেছন ফিরে আসছে বোট। তবে প্রকৃতি কখনো নিরাশ করে না। কিছুক্ষণের মধ্যেই আকাশে রোদের হাসি। বোটও স্বাভাবিকভাবে চলতে শুরু করে। পৌঁছে গেলাম যাদুকাটা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা দেশের সবচেয়ে বড় শিমুল বাগানে। সারি সারি দুই হাজার শিমুল গাছ। চারদিকে সবুজ আর সবুজ। আর সময় নষ্ট না করে পাহাড় বেয়ে উঠে পড়লাম বারেক টিলায়। কাছ থেকে ঝরনা দেখার পিপাসা মেটাতে টিলার ঝোপঝাড়ের পথ ধরে এগোতে থাকলাম। সরু এক ঢালু রাস্তা গেছে যাদুকাটা নদীর দিকে। সে পথ ধরেই চলতে থাকি। কিছুদূর যাওয়ার পর জলপ্রপাতের শব্দ। শব্দ শুনে চোখেমুখে প্রফুল্লের হাসি। সুন্দর একটি ঝরনার দেখা পেলাম। তবে খুবই ছোট। কোথা থেকে এই পানি আসছে, তা আবিষ্কার করতে পারলাম না। স্বচ্ছ পানি আর পাথর গিয়ে মিশেছে নদীর সঙ্গে।

সকাল থেকে দুপুর কাটিয়েছি ঝরনার সঙ্গে। এদিকে সময়ও ফুরিয়ে আসছে, ফিরতে হবে। শেষ বিকেলে সুনামগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের দিকে রওনা হই। তবে দুর্ভাগ্যবশত সুনামগঞ্জ পর্যন্ত আমরা যেতে পারিনি। বন্যার কারণে আমাদের একটি গুচ্ছগ্রামে নেমে যেতে হয়। গুচ্ছগ্রাম থেকে সুনামগঞ্জ যাই সিএনজিতে। রাত ১১টায় ঢাকার উদ্দেশে গাড়ি ছাড়ে। ৭ অক্টোবর সকাল ছয়টায় ঢাকা এসে পৌঁছাই।

সাধারণ সম্পাদক, কেরানীগঞ্জ বন্ধুসভা