ক্ষুধা
পৃথিবীতে সবচেয়ে নির্মম ক্ষুধা না–খাওয়ার ক্ষুধা। প্রেম, রোমান্স, শিল্প—সবই যেন বিলাসিতা হয়ে দাঁড়ায়, যখন পেট খালি থাকে। পকেটে এক টাকাও না থাকলে পূর্ণিমার চাঁদ আর আলো দেয় না, বরং মনে হয়, যেন চালের গুঁড়ায় বানানো এক নিস্তেজ রুটি, যা খেয়েও ক্ষুধা মেটে না।
‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়’ কথাটিই বাস্তবের মুখোমুখি হলে রক্তমাংসের মতো সত্য বলে মনে হয়। চাঁদের আলো তখন আর কাব্যকথা নয়, নিছক প্রহসন। দারিদ্র্য কাউকে মহৎ করে না। প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে এ বিষয়ে ঠিক একমত হতে পারিনি। দারিদ্র্য আমাদের নিঃস্ব করে, হীন করে, প্রশ্নবিদ্ধ করে মানবিকতা। পেটে ক্ষুধা থাকলে বোঝা যায়, কেন চোর চুরি করে। তখন আর নীতিনৈতিকতার পাঠ চলে না, চলে শুধু বেঁচে থাকার সংগ্রাম। বোঝা যায়, কেন স্বামীহারা সেই মা তাঁর কোলের শিশুকে নিয়ে সমাজের কাছে হাত পাততে বাধ্য হন।
কে বলে লজ্জা, পাপের বোধ চিরস্থায়ী; ক্ষুধা পেলে মানুষ মনুষ্যত্বের সীমারেখা ছাড়িয়ে যায়। জীবন এক নির্মম শিক্ষক। না চাইলেও সে শেখায়, শেখায় কষ্ট দিয়ে, অনাহারে রেখে, অপমান সয়ে। বারবার বুঝিয়ে দেয়, এই পৃথিবীর নিয়ম বড় বৈষম্যমূলক। কেউ দুই বেলা ভাত পায় না, কেউ একটা কলার জন্য লাখ টাকা খরচ করে। এই বৈপরীত্য সভ্যতা নয়, বরং আমাদের অমানবিকতার মুখোশ খুলে দেয়। এই জীবন, এই পৃথিবী যতই সুন্দর বলে প্রচার হোক, প্রকৃত সৌন্দর্য ক্ষুধার্ত মানুষের চোখে ধরা পড়ে না। সেখানে সৌন্দর্য মানে শুধু একমুঠো ভাত, কিছুটা শান্তি।
ম্যাগাজিন সম্পাদক, ড্যাফোডিল বন্ধুসভা