তখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি

প্রথম আলোর ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে লেখকছবি: সংগৃহীত
সবার পত্রিকা পড়া হয়ে গেলে আমি পত্রিকাটা হাতে নিতাম। পত্রিকা হাতে নিয়েই ছবি, ফিচার আর কার্টুনগুলো দেখতাম। তখন কার্টুন কিংবা ফিচার কোনো কিছুরই অর্থ বুঝতাম না। কেবল চোখের সৌন্দর্যের জন্যই দেখতাম।

আজ থেকে প্রায় ১২ বছর আগের কথা। তখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ি। শৈশবের বড় একটা অংশ কেটেছে নানাবাড়ি ধর্মপাশা উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে। প্রতি বৃহস্পতিবার বিকেলে নানাভাইয়ের হাত ধরে হাঁটে যাওয়া, সমবয়সীদের সঙ্গে গোল্লাছুট, কানামাছি আর বর-বউ খেলে সারা দিন পার করতাম। আমি ছিলাম ভীষণ দুরন্ত আর পাগলাটে। সারা দিন টো-টো করে ঘুরে বেড়াতাম এপাড়া-ওপাড়া। একমাত্র ছেলে হিসেবে আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে আম্মু-আব্বু হয়তো ভীষণ উদ্বিগ্ন হতেন। তখন বুঝতাম না, এখন বুঝি।

প্রথম আলোর সঙ্গে আমার পরিচয় যখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি। আব্বু চাকরি করতেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। অফিসে পত্রিকা রাখা হতো। প্রতিদিন বিকেলে আনিস চাচা শত বছরের পুরোনো একটা সাইকেলে করে অফিসে পত্রিকা রেখে যেতেন। আনিস চাচার সঙ্গে আমার পরিচয় নেই। উনি কারও সঙ্গে কথা বলতেন না। আসতেন, এসে চুপচাপ পত্রিকা রেখে চলে যেতেন। সবার পত্রিকা পড়া হয়ে গেলে আমি পত্রিকাটা হাতে নিতাম। পত্রিকা হাতে নিয়েই ছবি, ফিচার আর কার্টুনগুলো দেখতাম। তখন কার্টুন কিংবা ফিচার কোনো কিছুরই অর্থ বুঝতাম না। কেবল চোখের সৌন্দর্যের জন্যই দেখতাম। পুরোনো পত্রিকার খেলার অংশ থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়দের ছবি কেটে ঘর সাজাতাম। ভাতের আঠা দিয়ে ব্যাটে লাগিয়ে রাখতাম প্রথম আলোতে প্রকাশিত হওয়া খেলোয়াড়দের ছবি। এভাবেই আস্তে আস্তে আমার প্রথম আলোর সঙ্গে একটা গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

বড় হতে থাকি আর ধীরে ধীরে সংবাদপত্রের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে। তখন কাটাকুটি আর কার্টুন দেখার মধ্যেই আবদ্ধ থাকি না। প্রতি সাপ্তাহে আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় থাকি কখন ‘রস+আলো’ ম্যাগাজিনটি বের হবে। ভীষণ আগ্রহ নিয়ে ‘রস+আলো’, খেলার খবর, অন্যচিন্তা পড়তাম। মূলত তখন থেকেই পত্রিকা পড়ার যাত্রা শুরু।

২০১৩ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে ওঠার পর থেকে আমার মধ্যে নতুন বিষয়ে জানা এবং জ্ঞান আহরণের অন্য রকম এক পিপাসার সৃষ্টি হয়। পিএসসি পরীক্ষা দেব। জীবনের প্রথম বোর্ড পরীক্ষা। এ নিয়ে আগ্রহ আর কৌতূহলের সীমা নেই। স্কুল, কোচিং এবং প্রাইভেটে পড়ার পাশাপাশি প্রস্তুতির জন্য আব্বু প্রতিদিন প্রথম আলোর ১২ নম্বর পৃষ্ঠার ‘পড়াশোনা’ পাতাটা নিয়ে আসতেন। আমি প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রথম আলো পত্রিকার ১২ নম্বর পৃষ্ঠা থেকে এমসিকিউগুলো সমাধান করার চেষ্টা করতাম এবং সাজেশনগুলো সংগ্রহ করা শুরু করি। প্রতিদিন নিয়মমাফিক প্রথম আলোর পড়াশোনা অংশ থেকে প্রস্তুতি নিতে নিতে প্রতিটি বই আমার কাছে সহজ হয়ে ওঠে। এভাবেই বিভিন্ন সময় এ পাতা থেকে অসংখ্যবার সহায়তা ও দিকনির্দেশনা গ্রহণ করি।

ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময় মানবিক কাজের প্রতি প্রবল আগ্রহ জন্মে। তখন ফেসবুক ব্যবহার শুরু করেছি নতুন। ফেসবুকের কল্যাণে অনেক মানুষের সঙ্গে যুক্ত হই। একদিন বিকেলে নিউজফিড দেখতে দেখতে হঠাৎ চোখে পড়ে বৃক্ষরোপণের একটি কর্মসূচি। বন্ধুসভার ‘একজন বন্ধু দুটি গাছ’ কর্মসূচি। আগ্রহ বাড়ে বন্ধুসভা নিয়ে। আগ্রহ প্রকাশ করে মেসেজ করি সিলেট বন্ধুসভার রাহিদুজ্জামান রাজিবকে। তিনি আমার মামা। সিলেট বন্ধুসভার বন্ধু। রাজিব মামা আমাকে কিশোরগঞ্জ বন্ধুসভায় যুক্ত হতে বললেন। পরে কিশোরগঞ্জ বন্ধুসভা খুঁজতে গিয়ে পরিচিত হই প্রথম আলোর কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি তাফসিলুল আজিজ ভাইয়ের সঙ্গে। পথচলা শুরু বন্ধুসভার সঙ্গে। আস্তে আস্তে কিশোরগঞ্জ বন্ধুসভাকে আপন করে নিতে থাকি। বন্ধুসভা আমাকে গ্রহণ করে ক্ষণজন্মা সন্তানের মতোই। আবিষ্কার করি নতুন এক আমিকে।

এখন ২০২৩, প্রথম আলো সাফল্যের ২৫তম সিঁড়ি পেরিয়ে সগৌরবে ২৬ বছরে পা দিয়েছে। ছাপা পত্রিকা থেকে শুরু করে অনলাইন পাঠকসংখ্যা—সব দিক থেকে প্রথম আলো আজ বাংলাদেশের শীর্ষে। প্রথম আলোর ওয়েবসাইটটি শুধু সংবাদমাধ্যম হিসেবে নয়, বাংলা ভাষায় সব ধরনের ওয়েবসাইটের মধ্যে গোটা পৃথিবীতে প্রথম স্থান দখল করে রেখেছে। অনলাইন প্রযুক্তি আর নতুন নতুন উদ্যোগ নিয়ে ছাপা পত্রিকার গণ্ডি ছাপিয়ে প্রথম আলো এখন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ‘গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান’, যা সত্যি সত্যি আমাদের সবার জন্য অনেক গর্বের।

বাংলাদেশের লাখো-কোটি মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে ‘প্রথম আলো’ আলো ছড়াচ্ছে অন্ধকারে। হারবে না বাংলাদেশ, যত দিন আলো দেখাবে ‘প্রথম আলো’৷

সাংগঠনিক সম্পাদক, কিশোরগঞ্জ বন্ধুসভা