আমার বর্ষাকাল

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

২০০৪ সালের কথা। সাত দিন ধরে টানা বৃষ্টি। ঘর থেকে কেউ বের হতে পারছে না। আমি তখন ছোট। আমাদের ছোট্ট একটা খাবারের দোকান আছে। বৃষ্টির কারণে সেটা বন্ধ। ঘরে বসে আব্বুর সঙ্গে গল্প করছি বর্ষাকাল নিয়ে।
আম্মু রান্না করছিল দুপুরের খাবার। মসজিদের মাইকে আজান শুনে বুঝলাম, বেলা একটা বাজে।
আম্মু বলল, এখনো গোসল করোনি?
বৃষ্টিতে কলের পানিতে গোসল করতে মন চায় না! ছুটে গেলাম মাঠে। বন্ধুদের সঙ্গে ভিজলাম ইচ্ছামতো। বাসায় ফিরে বকাও খেতে হলো। খাবার টেবিলে সবাই বসেছি খাব বলে। এমন সময় এক লোক এসে হাজির।

ঘরের দুয়ারে এসে বলল, ‘ও মা! আমি খুব ক্ষুধার্ত। কিছু খেতে দাও।’
আমি লোকটির দিকে তাকিয়ে দেখি, থরথর করে কাঁপছে।
আব্বু লোকটিকে ঘরে নিয়ে এলেন। আম্মুর মুখে দেখি চিন্তার ছাপ।
বাবাকে বললেন, ‘হিসাব করে রান্না করেছি। লোকটিকে খাবার দেব কীভাবে?’
চটপট সহজ সমাধান দিলেন আব্বু।
বললেন, ‘আমরা সবাই এক-দুই মুঠ করে দিলেই হয়ে যাবে।’
আম্মু বললেন, ‘তা-ই করো।’ বৃদ্ধ দাদুটি আমাদের সঙ্গে খেলেন।
আমার এখনো তাঁর কথা খুব মনে পড়ে।

পরদিন বিকেলের দিকে আকাশ কিছুটা পরিষ্কার। তবে সকালে বৃষ্টি হয়েছিল।
সবাই ঘরের বাইরে, আমিও। একি অবস্থা! সবাই জাল হাতে রাস্তায়।
চারদিকে পানি আর পানি। আর রাস্তায়ই ভেসে এসেছে মাছ। সবাই মাছ ধরতে ব্যস্ত।
আমার ছোট ভাইও ছুটে এসেছে ধরতে। তার হাতেও জাল।
এরপর দুই ভাই মিলে মাছ ধরলাম। আমি কিছু ছোট চিংড়ি ধরেছি।
ছোট ভাইটা কালবাউশ, সিলভার কার্প ধরতে পেরেছিল।
সেদিন ওগুলো দিয়েই হয়েছিল রাতের খাবার।
এদিকে বর্ষার পানিতে আমাদের দোকানের অবস্থা খারাপ।
শুনলাম, বন্যায় অনেকের ঘর ডুবে গেছে। আমাদের দোকানেও পানি উঠেছে।
ক্ষতিও হয়েছে অনেক। বর্ষাকাল এলে সত্যিই মানুষের অনেক কষ্ট হয়।
বিদ্যুৎ ছাড়া থাকা যায়, কিন্তু পানির ওপর থাকা যায় না।
মানুষের যে কষ্টটা দেখলাম, ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।