বাংলাদেশে একটি কথা প্রচলিত আছে, ‘সুখী হতে টাকাপয়সা লাগে না।’ আসলেই কি তা–ই?
প্রত্যেকটি মানুষ আলাদা। তবে সবারই কিছু মৌলিক চাহিদা রয়েছে, যা পূরণ করতে টাকার দরকার। মানুষের জীবনের মৌলিক চাহিদা, যেমন খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান— সুখে থাকতে হলে এ তিনটি জিনিস অবশ্যই থাকা চাই। তারপর প্রশ্ন আসে, সুখী হতে টাকা লাগে কি লাগে না?
সত্যিকারের সুখ মূলত একধরনের অভ্যাস, যা পেতে হলে আপনাকে প্রতিদিন কাজ করতে হবে। যদি আপনি টাকা ছাড়া সুখী না হতে পারেন, তাহলে টাকা থাকলেও আপনি সুখী হতে পারবেন না। আপনার যা আছে, সেটা নিয়েই সুখে থাকতে পারাটা বড় ব্যাপার।
কিছু জিনিস রয়েছে, যা অর্থ দিয়েও কিনতে পারবেন না; যেমন পরিবার ও বন্ধু। তাই আজ আলোচনা করব, টাকা ছাড়াও কীভাবে সুখে থাকা যায়।
শরীরচর্চা
নিয়মিত শরীরচর্চা করলে মানবদেহে সুখের হরমোন নিঃসরণ হয়। এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। এর জন্য আপনাকে টাকা খরচ করে কোনো জিমে ভর্তি হতে হবে না। জিমে যাওয়া ছাড়াও কীভাবে শরীরচর্চা করা যায়, এ ধরনের অসংখ্য ভিডিও ইউটিউবে সার্চ করলেই পাওয়া যাবে। সেগুলো দেখে নিজের জীবনে কাজে লাগাতে পারেন।
সপ্তাহে সর্বোচ্চ দু-তিন দিন শরীরচর্চা করলেই মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। সব সময় ভালো মুডে থাকা যায়। রাতে ভালো ঘুম হয়। শরীরের এনার্জি লেভেল বৃদ্ধি পায় এবং হতাশা কমায়।
রাতে পর্যাপ্ত ঘুম
সুস্বাস্থ্য এবং সুখে থাকার জন্য রাতে পর্যাপ্ত ঘুম খুবই জরুরি একটি বিষয়। সবচেয়ে ভালো হয় যদি অন্তত আট ঘণ্টা ঘুমানো যায়।
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বিরক্তি, উদ্বেগ ও বিষণ্নতা বেড়ে যায়। হিপোক্যাম্পাসের কাজ হলো স্মৃতি ধরে রাখা। সেটি বাধাগ্রস্ত হয়।
অন্যদিকে ভালো ঘুম হলে জীবনের সঠিক পদক্ষেপের দিকে এগিয়ে যেতে মনোযোগ বাড়বে। মন ও মেজাজ ভালো থাকবে এবং অতীতের সুখের সুন্দর মুহূর্তগুলো আরও সহজে মনে থাকবে।
কৃতজ্ঞতাবোধ জাগ্রত করা
যখন নিজের মধ্যে কৃতজ্ঞবোধ জাগ্রত করবেন, দেখবেন টাকা ছাড়াই খুব সহজে সুখে থাকতে পারছেন। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের জন্য সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকুন। এমনকি অতীতে কোনো খারাপ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেলে, সেটির জন্যও। কারণ, ওই খারাপ অভিজ্ঞতাই আজকের আপনাকে আপনার হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে।
প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে সারা দিন কী কী কাজ করেছেন এবং আপনার জীবনে কী কী ঘটেছে, সব লিখে রাখুন। দেখবেন জীবন কত সুন্দর।
খোলা আকাশের নিচে হাঁটুন
সবুজ প্রকৃতি ও খোলা আকাশের নিচে এমন কিছু রয়েছে, যা আপনার মনের শান্তির জন্য খুবই উপকারি। অথবা কোনো নদী কিংবা লেকের পাশে কিছুক্ষণ থাকলে উদ্বেগ কমে যায় এবং মন পরিষ্কার হয়। মন ও মস্তিষ্ককে শান্ত রাখার অন্যতম সেরা উপায় বাইরে হাঁটতে বের হওয়া।
কাছের মানুষদের সঙ্গে ভালো সময় উপভোগ করুন
আপনার কাছে অর্থ থাকুক কিংবা না থাকুক, অবশ্যই কাছের মানুষদের সঙ্গে ভালো সময় কাটাতে হবে। পরিবার, বন্ধু ও আত্মীয়দের সঙ্গে সময় কাটালে মন ভালো থাকে, নিজেকে সুখী অনুভব করবেন। তাঁদের সঙ্গে বাইরে কোথাও ঘুরতে যেতে পারেন। অনেক সময় কিছু সময়ের খোশগল্পও মানসিক স্বাস্থের জন্য উপকারি।
যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা
এই মুহূর্তে আপনার কাছে যা আছে কিংবা যে অবস্থায় আছেন, মনে করুন মুহূর্তটিতে এমনটাই থাকার কথা ছিল। বিষয়টা মেনে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা। দেখবেন মন খারাপ ভাবটা আর থাকবে না। যা আছে সেসব থেকে যদি সুখ খুঁজে নিতে পারেন, আপনাকে আর কোনো কিছুই অসুখী করতে পারবে না।
তবে এর মানে এই নয় যে জীবনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন কিছুর চেষ্টা না করা। অবশ্যই জীবনের উন্নতির জন্য চেষ্টা করে যেতে হবে।
অন্যের উপকার করা
মানবিক মানুষ হতে হবে এবং সেই মানবিকতা চারদিকে ছড়িয়ে দিতে হবে। অসংখ্য মানবিক কাজ রয়েছে, যেগুলো করতে টাকা লাগে না। যেমন রাস্তা পারাপারে কাউকে সাহায্য করা, অন্যের কাজে সহায়তা করা, অসুস্থ রোগীকে রক্ত দান করা, কারও প্রশংসা করা ইত্যাদি। যেকোনো স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমও এর আওতায় পড়ে।
মানবিক কাজ করলে এটি যেমন অন্যকে খুশি করে, তেমনই নিজের মধ্যেও একটা সুখী ভাব থাকে।