ফেলোশিপ ও বৃত্তি

ফেলোশিপ ও বৃত্তিছবি: সংগৃহীত

আমরা নিত্যদিনের জীবনে একটি সাধারণ চক্রের মধ্যে আটকে থাকি। পড়াশোনা, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কর্মজীবনের চক্রে নিজেরা বন্দী থাকি। একঘেয়ে জীবনে দক্ষতা বিকাশ কিংবা অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ফেলোশিপের মাধ্যমে নিজেকে সামনে এগিয়ে নেওয়া যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজজীবনে তারুণ্যের সময় এমন অভিজ্ঞতা পৃথিবীকে জানতে ও চিনতে শেখায়। একটু ইন্টারনেটে নজর রাখলেই ফেলোশিপ বা বৃত্তির খোঁজ মিলবে।

নানা ধরনের ফেলোশিপ ও বৃত্তি
সাধারণ অর্থে বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য বৃত্তি পাওয়ার সুযোগ মেলে। এ ছাড়া কয়েক সপ্তাহের কোনো কোর্সের জন্যও বৃত্তির সুযোগ আছে। এই বৃত্তির মধ্যে যাতায়াত ও থাকা-খাওয়ার সব অর্থ যুক্ত। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রশিক্ষণের জন্য বৃত্তি ও ফেলোশিপ লাভের সুযোগ আছে। যাঁরা পেশাজীবী কিংবা কোনো বিশেষ বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করছেন, তাঁরা ফেলোশিপ লাভ করতে পারেন। ফেলোশিপ যাঁরা পেয়ে থাকেন, তাঁদের ফেলো হিসেবে সম্মান দেওয়া হয়। এ ছাড়া অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ও নানা রকম বৃত্তি দেয়, তবে সেগুলো বেশির ভাগই শুধু টিউশন ফি মওকুফের জন্য। পূর্ণ বৃত্তি পেলে পুরো বেতন, থাকা-খাওয়ার ভাতা, চিকিৎসা বিমা ও বিমানে আসা-যাওয়ার টিকিট, এমনকি ভিসা আবেদনের খরচসহ সবই স্কলারশিপ কর্তৃপক্ষ বহন করে।

বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে বৃত্তি ও ফেলোশিপ নিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জনের দারুণ সুযোগ আছে। সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা বিনিময় থেকে শুরু করে নেতৃত্ব বিকাশ, সামাজিক উদ্যোগবিষয়ক বিভিন্ন ফেলোশিপ ও বৃত্তি আছে। সাংবাদিকতা বিষয়ে দক্ষতা বিকাশ, সামাজিক ব্যবসা ও প্রতিযোগিতা, তরুণ নেতৃত্বের বিকাশ, পরিবেশবিষয়ক সম্মেলনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আন্তর্জাতিক নানা ফেলোশিপ কর্মসূচি চালু আছে। যুক্তরাজ্যে পড়ার জন্য কমনওয়েলথ ও শেভনিং স্কলারশিপ, যুক্তরাষ্ট্রে ফুলব্রাইট, সুইডেনে সুইডিশ একাডেমি, ইতালি ও ফ্রান্সে ইরাসমাস মুন্ডাস কিংবা এডিবি-জাপান উল্লেখযোগ্য।

ফুলব্রাইট স্কলারশিপ
বিশ্বের অন্যতম সম্মানজনক বৃত্তি ফুলব্রাইট ফরেন স্টুডেন্ট প্রোগ্রাম। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সিনেটর জেমস উইলিয়াম ফুলব্রাইট ১৯৪৬ সালে এই প্রোগ্রাম চালু করেন। এখন পর্যন্ত ফুলব্রাইট বৃত্তি পাওয়া ৫৪ গুণী ব্যক্তি বিভিন্ন ক্ষেত্রে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন আর পুলিত্জার পেয়েছেন ৮২ জন। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ফুলব্রাইট স্কলারশিপ পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যান। বিস্তারিত: foreign.fulbrightonline.org

ব্রিটিশ শেভনিং স্কলারশিপ
যুক্তরাজ্য সরকার শেভনিং স্কলারশিপ প্রদান করে। যুক্তরাজ্যের ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিস বা এফসিও ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন এই বৃত্তির জন্য অর্থায়ন করে থাকে। বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে মেধাবী ও নেতৃত্বের যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরাই এ স্কলারশিপের আওতায় যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন। ব্রিটেনের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে যেকোনো বিষয়ে এক বছরের মাস্টার্স ডিগ্রি নিতে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারেন।

কেন ফেলোশিপ প্রয়োজন
ভিন্ন সংস্কৃতির স্বাদ আর ভিন্ন চোখে দুনিয়া দেখতে বিভিন্ন ফেলোশিপ ও বৃত্তি অনন্য একটি উপায়। সাধারণভাবে বিভিন্ন দেশে ঘুরতে বেশ অর্থ ব্যয় করতে হয়। ফেলোশিপ বা বৃত্তির মাধ্যমে একদিকে যেমন দেশভ্রমণের সুযোগ মেলে, তেমনি মেলে নতুন বন্ধু ও অভিজ্ঞতা। সামাজিক নেটওয়ার্ক ও পেশাজীবীদের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে এ ধরনের সুযোগ তৈরি করতে হবে।

যেভাবে বৃত্তি-ফেলোশিপের জন্য তৈরি হতে হবে
সারা বছরই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, প্রতিযোগিতা, সম্মেলন ও অনুষ্ঠান উপলক্ষে ফেলোশিপ ও বৃত্তির সুযোগ মেলে। যদিও আবেদনের জন্য একটু মনোযোগ ও সময় দিতে হয়, তবু লেগে থাকতে হয়। সাধারণত অনলাইনে আবেদন করতে হয়। আবেদনের সময় নিজের পরিকল্পনা, আগ্রহ ও ভাবনার কথা লিখতে হয়। ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা থাকা বেশ জরুরি। আইএলটিএস বা টোয়েফলের মতো ভাষাদক্ষতাবিষয়ক সনদও অনেক ক্ষেত্রে জমা দিতে হয়। এ ছাড়া সুপারিশপত্র বা রিকমেন্ডেশন লেটারও সংগ্রহ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা আলোচিত কোনো ব্যক্তিত্বের কাছ থেকে সুপারিশপত্র জোগাড় করতে হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের সনদ এ ক্ষেত্রে বেশ কাজে দেয়। কখনো কখনো অনলাইনে ভিডিও সাক্ষাৎকারও দিতে হয় ফেলোশিপ ও বৃত্তি লাভের জন্য।

যেসব ওয়েবসাইটে নজর রাখতে হবে
বৃত্তিসংক্রান্ত খবর পাওয়া যায়, এমন বেশ কিছু ওয়েবসাইট আছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ওয়েবসাইটেও নিয়মিত বৃত্তির খবর পাওয়া যায়। ইন্টারনেটে শিক্ষা ও দক্ষতাবিষয়ক বিভিন্ন ওয়েবসাইটে চোখ রাখতে হবে। সারা বছরই যেহেতু বৃত্তি ও ফেলোশিপের সুযোগ মেলে, তাই সব সময়ই নজর রাখতে হবে। যেসব ওয়েবসাইটে নিয়মিত বৃত্তি ও ফেলোশিপের খোঁজ মিলবে তার মধ্যে অন্যতম হলো—
বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়: <www.moedu.gov.bd>
স্বপ্ন নিয়ে, প্রথম আলো: prothomalo.com/shapno
ভারতীয় হাইকমিশন, ঢাকা: <www.hcidhaka.gov.in>
চীনা দূতাবাস, ঢাকা: bd.china-embassy.org
মার্কিন দূতাবাস, ঢাকা: bd.usembassy.gov
ইয়ুথ অপরচুনিটিস: youthop.com

লেখক: ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্ট ফেলো। ২০১৬ সালে মার্কিন সরকারের অর্থায়নে প্রফেশনাল এক্সচেঞ্জ ফেলোশিপে অংশগ্রহণকারী।

প্রথম আলো বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের প্রকাশনা ‘তারুণ্য’, সপ্তম সংখ্যা, আগস্ট ২০১৮ থেকে নেওয়া।