কদিন থেকেই ভাবছি একটা গল্প লিখব। অনেক জটিলতা মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। লেখালেখিতে যতবার গুরুত্ব দিতে গিয়েছি, ততবার মনে হয়েছে রবীন্দ্রনাথের মতো আমার বাবার অঢেল সম্পদ নেই। সুতরাং লেখালেখির থেকে একটা চাকরি পাওয়া আমার জন্য বেশি জরুরি। পড়াশোনাটা ভালোভাবে করা দায়িত্বের মতো। একদিকে মানসিক টান, অন্যদিকে বাস্তবতা। এই দুই নিয়ে যখন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি, তখন কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে রেললাইনের রাস্তা ধরে হাঁটছি আর ভাবছি জীবনের জটিলতা সম্পর্কে।
কিছুক্ষণ হাঁটার পর একটু বসলাম। একটা ছোট ছেলে, বয়স তেরো বা চৌদ্দ হবে; কাছে এসে বলল, ‘দিদি বাদাম নেবেন?’ আমি বললাম লাগবে না। পরক্ষণেই ছেলেটার দিকে নজর পড়ল। গায়ের রং কালো, পাতলা গড়ন, চোখ দুটো বেশ মায়াবি, পরনে ছেঁড়া শার্ট, পায়ে জুতা নেই। মলিন মুখে ফিরে যাচ্ছিল সে। দেখে খুব মায়া হলো। পেছন থেকে ডাক দিলাম।
ছেলেটি খুশি হয়ে দ্রুত আবার এল। বলল, ‘দিদি বাদাম লাগবে?’ আমি ওকে কাছে ডাকলাম, ওর মাথায় হাত রাখতেই খেয়াল করলাম সে কিছুটা অপ্রস্তুত এমন ব্যবহারে। বললাম, আমার বাদাম লাগবে না। এই টাকাটা তুমি রাখো কিছু খেয়ে নিয়ো। ‘দিদি আমার টাকা লাগবে না’। ওর আত্মসম্মানবোধ দেখে বিস্মিত হলাম। টাকাটা ওকে দিতে বেশ জোরাজুরি করতে হলো। ওর চোখ ততক্ষণে জলে ভরে গেছে। চোখের জল আড়াল করতেই সম্ভবত দ্রুত চলে গেল এখান থেকে।
আর কিছু ভাবতে ভালো লাগছে না। এক নিমেষেই যেন আমার সব না পাওয়ার কষ্ট ওই ছেলেটার চোখের মধ্যে হারিয়ে গেল। বিড়বিড় করে বলতে লাগলাম, হে ঈশ্বর! আমার আর কিছু চাই না। আমি সুখী, খুব সুখী...
নবাবগঞ্জ, দিনাজপুর