দক্ষতা
কীভাবে গ্রাফিকস শিখব
লেখাটি ২০২৪ সালের জুনে প্রকাশিত বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের ‘তারুণ্য’ ম্যাগাজিনের দশম সংখ্যা থেকে নেওয়া।
প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে তরুণসমাজ বিভিন্ন জিনিস তৈরি করছে। শিখছে বিভিন্ন কাজও। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পেশায় আনছে পরিবর্তন। চাকরির পাশাপাশি কেউ করছেন ফ্রিল্যান্সিং, কেউবা কনটেন্ট ক্রিয়েটর। কেউবা শিখছেন গ্রাফিকস, ছবি পরিবর্তন বা নকশা তৈরি। গ্রাফিকসের মাধ্যমে যেন জাদু ছড়াচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে এআই। তাই নিজেকে আপটুডেট রাখতে তরুণরাও শিখছেন নতুন নতুন টুলসের কাজ।
শখের বসে কিংবা কাজের জন্য শিখে নিতে পারেন গ্রাফিকস। গ্রাফিকস ডিজাইন বর্তমানে অন্যতম একটি পেশা। যাতে যুক্ত আছেন লক্ষাধিক তরুণ। অফলাইন এবং অনলাইন—দুভাবেই কাজ করে যাচ্ছেন তরুণরা। ঘরে বসে গ্রাফিকস ডিজাইন সেক্টরে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রা আনছেন দেশে। বাড়ছে বৈদেশিক আয়। একটি কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট কানেকশনের মাধ্যমে ঘরে বসে করা যায় ফ্রিল্যান্সিং।
গ্রাফিকস শেখার বিভিন্ন টুলস রয়েছে। শেখার জন্য দুটি মাধ্যমও রয়েছে। একটি অফলাইন এবং অন্যটি অনলাইন। যেকোনো উপায়ে শিখতে পারেন শখের গ্রাফিকস কিংবা ভবিষ্যতে অফিসের কাজের উদ্দেশে। বর্তমানে তরুণদের মধ্যে গ্রাফিকস শেখার আগ্রহ বাড়ছে। কারণ, কনটেন্ট ক্রিয়েট। কনটেন্ট ক্রিয়েট করতে গেলে থাম্বনেইল ডিজাইন বা ছবি সংশোধন করা প্রয়োজন। যার জন্য তরুণরা শিখে নিচ্ছে গ্রাফিকস। সরাসরি সফটওয়্যার এবং কিছু ওয়েবসাইটের মাধ্যমে করা যায় এই কাজগুলো।
গ্রাফিকসের দুইটা পার্ট:
১. স্টিল গ্রাফিকস
২. মোশন গ্রাফিকস
স্টিল গ্রাফিক: যে ডিজাইন প্রিন্ট হয় বা অনলাইনে ব্যবহৃত হয় তবে তা চলাচল (মুভ) করে না তাকে মূলত স্টিল গ্রাফিকস বলে। যেমন পোস্টার ডিজাইন, ব্যানার ডিজাইন, ফেস্টুন ইত্যাদি।
আমরা স্টিল গ্রাফিকস নিয়ে কথা বলব। কারণ, মোশন গ্রাফিকস শিখতে হলে ভালো কনফিগারেশনের একটি কম্পিউটার দরকার। কম দামি বা ব্যবহৃত (সেকেন্ড হ্যান্ড) কম্পিউটার দিয়ে মোশন গ্রাফিকস শেখাটা দুষ্কর বা অসম্ভব।
শেখার জন্য ইউটিউবের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। বিভিন্ন পেইড কোর্সও রয়েছে। অথবা শেখা যায় ভালো কোনো ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে। যেখান থেকেই শেখার চেষ্টা করো না কেন, সেই প্রতিষ্ঠান বা ট্রেইনার সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিতে হবে, তিনি কতটা দক্ষ ব্যক্তি।
ইউটিউব বা কোনো কোর্স কিনে শেখার আগে যেকোনো ভালো প্রতিষ্ঠান থেকে ট্রেনিং গ্রহণ করা উত্তম। প্রাথমিক অবস্থায় অনেকেই জানে না কীভাবে শিখবেন। কেমন করে বা কোথা থেকে শুরু করবেন। সেক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নিলে তাদের একটি সিলেবাস আছে, যেখান থেকে নতুন শিক্ষার্থীরা একটি গাইডলাইন পেতে পারেন।
খুব কমসংখ্যাক প্রতিষ্ঠানই আছে, যারা খুব ভালো কাজ শেখায়। তবে প্রাথমিক ধারণা কমবেশি সব প্রতিষ্ঠানই দেয়। প্রাথমিক ধারণাটুকু নিয়ে এরপর ইউটিউবের মাধ্যমে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি ভালো কোর্সগুলো ক্রয় করা যেতে পারে নিজেকে দক্ষ করার ক্ষেত্রে।
প্রথমেই ইউটিউব থেকে শেখার কথা বলব না। কারণ, শিখতে গিয়ে শেখার চেয়ে অন্য দিকে খেয়াল চলে যেতে পারে।
ল্যাপটপ বা ডেস্কটপে কাজ শেখা এবং করা যায়। ধরা যাক, কেউ অফলাইনে গ্রাফিকস শিখতে চান এবং কম্পিউটারে সফটওয়্যার ব্যবহার করেই কাজটি করতে চান। সে ক্ষেত্রে তিনি শিখতে পারেন এডোবি ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর, ইনডিজাইন, কোয়ার্ক এক্সপ্রেসসহ অন্যান্য সফটওয়্যারগুলো।
এডোবি ফটোশপ শিখে অনেক কাজ করা যায়। উল্লেখযোগ্য হলো— ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভাল, ক্লিপিং পাথ, কালার কারেকশন, পুরাতন ছবি থেকে নতুন ছবি তৈরি, ম্যানুপুলেশনসহ আরও অনেক ধরনের কাজই করা যায় এডোবি ফটোশপ শিখে। এ ছাড়াও তৈরি করা যায় সুন্দর সুন্দর ডিজাইন।
কেউ যদি ইলাস্ট্রেটর শেখে, তবে সহজেই তৈরি করতে পারবে বিজনেস কার্ড, ফ্ল্যায়ার, লিফলেট, ব্রুশিয়ার, ক্যালেন্ডার, ডাইরিসহ প্রেস প্রিন্টের কাজগুলো।
ইনডিজাইন শিখলে করা যাবে প্রকাশনী সংস্থার কাজগুলো। যেমন বই, ম্যাগাজিন, পত্রিকা ইত্যাদির কাজগুলো সহজেই করা যাবে এই সফটওয়্যার শিখে।
কোয়ার্ক এক্সপ্রেসের কাজগুলোও ইনডিজাইনের মতোই। এই সফটওয়্যারেও প্রকাশনী সংস্থার কাজগুলো সহজেই করা যাবে।
কেউ যদি অনলাইনে কাজ করতে চান, তবে তিনি ক্যানভাতে কাজ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে সুবিধা আছে অনেক। ক্যানভাতে অনেক রকমের টেমপ্লেট দেওয়া আছে। যার যা কাজ, সেই অনুযায়ী টেমপ্লেট নির্বাচন করে তৈরিকৃত শেপ, আইকন এবং লেখা বসিয়ে সহজেই ডিজাইন তৈরি করা যায়।
তবে যে কাজই শিখুন না কেন, আপনাকে অভিজ্ঞ হতে হবে নির্ধারিত কাজের ওপর। সব কাজ করতে পারার থেকে নির্দিষ্ট কাজ দক্ষতার সঙ্গে করতে পারাটা জরুরি। তাই যে কেউই দক্ষ জনবল চায় তার কাজের জন্য। হোক না সেটা নিজের কাজ।
গ্রাফিকস শিখে কী করা যায়
গ্রাফিকস শিখে অনেক কিছু করা যায়। যেমন অফলাইনে বা লোকাল জব করা, অনলাইনে বা ফ্রিল্যান্সিং করা। পাশাপাশি কনটেন্ট ক্রিয়েটররা নিজেদের কাজগুলো নিজেরা করতে পারে গ্রাফিকস শিখে।
দেশের বাজারে চাকরি বা অফলাইনের কাজ
গ্রাফিকসের কাজ শিখে সহজেই দেশের চাকরির বাজারে ঢুকে যাওয়া যায়। ফটোশপের কাজ জানা থাকলে স্টুডিও বা যাঁরা ছবি নিয়ে কাজ করেন তাঁদের কাছ থেকে চাকরি পাওয়া যায়। আবার ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর জানা থাকলে প্রিন্টিং প্রেস এবং অফিশিয়াল চাকরিও করা যায়। অধিকাংশ অফিসেই গ্রাফিকস ডিজাইনার থাকে। আবার ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর এবং ইনডিজাইন জানা থাকলে যেকোনো প্রকাশনী, পত্রিকা বা ম্যাগাজিনে চাকরি পাওয়া সহজ হয়ে যায়।
অবশ্যই মনে রাখতে হবে, কাজে অভিজ্ঞ না হলে অনলাইন বা অফলাইন কোনো কাজই করা যাবে না, বা কেউ কাজ দেবে না।
অনলাইন বা ফ্রিল্যান্সিং কাজ
ফ্রিল্যান্সিং এখন অনেক বড় একটি পেশায় পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশে এক্সপোর্ট, রেমিট্যান্সের পরই ফ্রিল্যান্সিং থেকে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। অনেকেই তাই ফ্রিল্যান্সিংকে ফুলটাইম হিসেবে নিয়েছে। গ্রাফিকস শিখে আপনি হতে পারেন ফ্রিল্যান্সার। অথবা আপনি যে কাজটি করছেন, তার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন; যদি আপনি গ্রাফিকসের কাজে দক্ষ হন।
ফ্রিল্যান্সিংয়ে যদি নির্দিষ্ট কোনো কাজে দক্ষ হন, তবে সেটি দিয়েও আপনি যা আয় করতে পারবেন, তাতে আপনার দেশীয় বাজারে চাকরি করলে যে টাকা সম্মানি পেতেন তার থেকে অনেকগুণ বেশি আয় করা যায় ফ্রিল্যান্সিং থেকে।
যাঁরা ফ্রিল্যান্সিং করতে চান তাঁদের জানা দরকার, ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য যোগাযোগমাধ্যম খুব জরুরি। যোগাযোগমাধ্যম বলতে এখানে ভাষাগত দক্ষতাকে বোঝানো হয়েছে। কেউ যদি ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে চান, তবে তাঁকে ভাষাগত দিক থেকে অবশ্যই দক্ষ হতে হবে। তাই গ্রাফিকস ডিজাইনে ফ্রিল্যান্সিং করতে চাইলে কাজ শেখার পাশাপাশি ভাষা শেখাও শুরু করে দিতে হবে।