দত্তক থেকে জমিদারিতে সোনালি দস্তখত

ময়মনসিংহের ত্রিশালের কানিহারী গ্রামে অবস্থিত জমিদার বাড়িছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহের ত্রিশালের কানিহারী জমিদার বংশের জমিদার কালীকিশোর চক্রবর্তী। তাঁর জন্ম ১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা ১২৬২ বঙ্গাব্দে এক ব্রাহ্মণ পরিবারে। কালীকিশোর চক্রবর্তী কানিহারীতে আসেন দত্তক হিসেবে। কানিহারীর ভূম্যধিকারী হরকিশোর কালীকিশোরকে ‘দত্তক’ পুত্র গ্রহণ করেন যখন, তিনি তখন নিতান্তই বালক।

ময়মনসিংহের রাজপরিবারের মধ্যে অন্যতম জমিদার কানিহারী জমিদার বংশ। জমিদারি শাসনব্যবস্থাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে এই বংশের প্রয়াস ছিল দৃশ্যমান। ময়মনসিংহ শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম পাশ ঘেঁষে কানিহারী গ্রাম। বর্তমানে এটি ত্রিশাল থানার অন্তর্ভুক্ত।

নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর আমল থেকেই এখানে চক্রবর্তী বংশীয় ব্রাহ্মণদের জমিদারি প্রতিষ্ঠিত হয়। কানিহারীর প্রখ্যাত জমিদার হরকিশোর চক্রবর্তীর পঞ্চম ঊর্ধ্বতন পুরুষ মুর্শিদকুলি খাঁর দরবারে সভাপণ্ডিত ছিলেন। তিনি হিন্দুশাস্ত্র ও সংস্কৃত ভাষায় বিশেষ পাণ্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন। তাঁর পাণ্ডিত্যে মুগ্ধ হয়ে নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ তাঁকে ময়মনসিংহের তাপ্পেরন ভাওয়াল পরগনার ১০ হাজার একর জমি লাখেরাজ করে দেন।

হঠাৎ করে হরকিশোরের আকস্মিক মৃত্যু হলে তাঁর স্ত্রী কাশীশ্বরী দেবী এস্টেট পরিচালনার ভার গ্রহণ করেন। হরকিশোরের মৃত্যুতে আমলা–নায়েবসহ নিকটাত্মীয়রা এই বিধবার জমি গ্রাস করার নিমিত্তে ষড়যন্ত্র শুরু করেন। এ সময়ে শ্রীযুক্ত কাশীশ্বরী দেবী স্বামীর এস্টেট নিজ হাতে তুলে নেন। কালীকিশোর তখনো নাবালক। কাশীশ্বরী দেবী নিজ বুদ্ধিমত্তা, প্রজ্ঞা ও সাহসের বলে একটি ধ্বংসমুখী পরিবারকে টিকিয়ে রাখতে সমর্থ হন। কাশীশ্বরী দেবীর মৃত্যুর কিছু আগে তিনি তাঁর দত্তক পুত্র কালীকিশোরের বিয়ে দেন ময়মনসিংহের ‘কিতিলা গ্রামের স্যার চন্দ্র অট্টাচার্যি মহাশয়ের বিদুষী কন্যার সঙ্গে। ভট্টাচার্যি মহাশয় ছিলেন বিখ্যাত তান্ত্রিক সাধক পুরাননন্দের উত্তরসূরি ও অধীন পুরুষ। দত্তক মায়ের মৃত্যুর পর কালীকিশোর এস্টেটের অধিকর্তা হন। তখনো তিনি যুবক। জন্ম ও উত্তরাধিকার সূত্রে কালীকিশোরের জমিদার হওয়ার কথা না থাকলেও ভাগ্যই তাঁকে জমিদারি শাসনব্যবস্থায় টেনে এনেছে। কপালে রাজটীকা দিয়েই জমিদারি শাসনব্যবস্থায় তিনি ‘সোনালি দস্তখত’ রাখেন।

পরবর্তী সময়ে দেশ বিভাজনের পর এ বংশের বেশির ভাগই দেশ ছেড়ে ভারতে পাড়ি জমান। তবে এখনো তাঁদের অধীন দু–একজন এখানে বসবাস করছেন।

সাবেক সভাপতি, ময়মনসিংহ বন্ধুসভা