রোমান্স ও রোমহর্ষ পল্লিজাত চলচ্চিত্র ‘কাঠবিড়ালি’

‘কাঠবিড়ালি’ চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্যসংগৃহীত

‘কাঠবিড়ালি’ নামকরণের মধ্যে স্পষ্ট যেমন এক অবয়ব আছে, বেশ ঘোলাটে একটা ধাঁধাও আছে। পরিচালক নিয়ামুল মুক্তার বুদ্ধিদীপ্ত এবং সাহসী গল্পকাহিনি প্রেম ও প্রতিহিংসাকে একই মুদ্রার এপিঠ–ওপিঠ করে মানবমনের জটিল রহস্য মনস্তাত্ত্বিক ধাঁধাকে খোলাসা করে তুলেছেন ক্রমে। যৌবনের চাওয়া-পাওয়া, হতাশা-ব্যর্থতা, উড়ু উড়ু মনের কল্পনার সঙ্গে বাস্তবের চরম সংঘাত, অবদমিত কামনা–বাসনার বহিঃপ্রকাশ, সর্বোপরি পরিবেশ পরিস্থিতি এবং সামাজিক ব্যবস্থার সঙ্গে চূড়ান্ত দ্বন্দ্ব চলচ্চিত্রটির পরতে পরতে উঠে এসেছে। প্রথম ছবি বানাতে এসে পরিচালনা এবং মোচড় দেওয়া কাহিনির গুণে পরিচালক নজির সৃষ্টি করলেন।

শুরুতে গ্রাম্য দুই যুবক-যুবতীর মিষ্টি প্রেমের সঙ্গে সুন্দর দৃশ্য বুনন হৃদয় ছুঁয়ে যায়। প্রণয় দৃশ্যে বাউল সফি মন্ডলের কণ্ঠে ‘নয়া গাঙের পাড়ে গো বিরিক্ষ (বৃক্ষ)/ বিরিক্ষের চিরল চিরল পাতা, কে তুমি সুন্দর কন্যা, তোমার/ মুখে নাই কেন কথা?’ গানটা অসাধারণ লাগে। অর্চিতা স্পর্শিয়া এই ছবিতে সাক্ষাৎ যেন একটি সূর্যমুখী ফুল। তাঁর হাসিতে মুক্তা ঝরে। লজ্জাবতী পাতার মতো মানবিক স্পর্শে গুটিয়ে যাওয়ার পাত্রী সে নয়। আলোর চোখে চোখ রেখে কথা বলে। সূর্যের নরম ও তেজি আলোর লাবণ্য স্নিগ্ধ পাপড়ির সতেজ বর্ণচ্ছটা ছড়িয়ে দিয়েছেন। অর্চিতার পাশে আসাদুজ্জামান আবীরও এই ছবিতে এক তরুণ জাদুকর।

ছবির শুরুতে এখানেও লেখা থাকে ‘এই চলচ্চিত্রটির গল্প ও সব চরিত্র কাল্পনিক’। গল্পের ভেতরে গিয়ে আমরা দেখি এই কল্পনা বাস্তবেরই ব্যঞ্জনাজাত, চরিত্রগুলো আমাদের অদেখা বা অপরিচিত, তা নয়। পরিচালক নতুন গল্পে নতুন করে দেখিয়ে ভাবনার খোরাক জুগিয়েছেন। শুরুতে গ্রামের টুম্পা নামের গরিব পরিবারের এক মেয়ে খুন হয়। আনিস এসে বন্ধু হাসুকে এই খবর দেয়। গ্রামে পুলিশ আসে। চেয়ারম্যানের পাশে তদন্ত করতে আসা পুলিশকে আমরা দেখি। কথাবার্তায় বোঝা যায়, চেয়ারম্যানের ছেলে আজগরের সঙ্গে খুনের মামলা জড়িয়ে যাচ্ছে। চেয়ারম্যান আড়ালে পুলিশ অফিসারকে নিয়ে গিয়ে ঘুষের বিনিময়ে মামলা পাল্টে দেয়। পুলিশ নিজের ছোট্ট সন্তানের ছবি দেখিয়ে তার ভবিষ্যতের কথা ভেবে মাথা গোঁজার জন্য বাড়ি করবে বলে জমি ঘুষ চায়।

সুন্দর এই ছবির কলাকুশলীরা হলেন সাঈদ জামান শাওন, শিল্পী সরকার অপু, শাহরিয়ার ফেরদৌস সজীব, হিন্দোল রায়, তানজিনা রহমান তাসনিম, একে আজাদ সেতু এবং আরও অনেকে। ক্যামেরায় ছিলেন আদিত্য মনির। রং বিন্যাস করেছেন রাশাদুজ্জামান সোহাগ ও লিওন রোজারিও। শব্দ গ্রহণ রিপন নাথের, সংগীত পরিচালক ইমন চৌধুরী এবং শিল্প নির্দেশনায় ছিলেন আদেল ইমাম অনুপ। সফি মন্ডল ছাড়াও গানগুলোতে কণ্ঠ দিয়েছেন দিলশাদ নাহার কণা, ফকির সাহেব ও ইমন চৌধুরী। কবি নয়ান চাঁদ ঘোষ, সেলিম আল দীনের লেখা গান ব্যবহার করা হয়েছে।

এই ছবিতে প্রেমের মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের পাশে প্রেমের আগুন, কামের আগুন, প্রতিহিংসার আগুনের স্ফুলিঙ্গ যথাযথভাবে ফুটে উঠেছে। রহস্য গল্পে গোয়েন্দাদের টিকটিকি বলা হয়। অধিকাংশ রহস্যগল্প আবার শহরকেন্দ্রিক হয়। রোমান্স ও রোমহর্ষ পল্লিজাত এই চলচ্চিত্রে কাঠবিড়ালিও রূপক, সাংকেতিক হয়ে রইল।

হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত