প্রচণ্ড গরমে কি গাছ লাগানো যায়? বৃক্ষরোপণের উপযুক্ত সময় কখন

দিনাজপুর শহরে ও পুনর্ভবা নদীর তীরে দিনাজপুর বন্ধুসভার বৃক্ষরোপণফাইল ছবি: প্রথম আলো

সেদিন অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে পুরো রাস্তায় গুমোট গরম বাতাসে যখন হাঁসফাঁস করছিলাম, হুট করেই বিজয় সরণির রাস্তায় এসে অদ্ভুত শীতলতা অনুভব করলাম। সিগন্যাল পেরিয়ে সিএনজি লেক রোডে প্রবেশ করতেই শীতল প্রশান্তির মাত্রা বেড়ে গেল বহুগুণে। কারণটা নিশ্চয়ই পাঠকেরা আঁচ করতে পারছেন! ওই এলাকায় কিছুটা হলেও গাছের অস্তিত্ব রয়েছে।

গাছ মূলত তার শিকড়ের মাধ্যমে মাটি থেকে অধিক পরিমাণে পানি শোষণ করে এবং পরবর্তী সময়ে অতিরিক্ত পানি গাছ তার পাতার মাধ্যমে বাষ্প আকারে পরিবেশে ছড়িয়ে দেয়। যে অঞ্চলে কিছুটা হলেও গাছের আধিক্য রয়েছে, সেই জায়গাজুড়ে বাতাসটা বেশ শীতল অনুভূত হয়। নির্দিষ্ট সময় পর পাতার মাধ্যমে বেরিয়ে আসা এই জলীয় বাষ্প বৃষ্টিপাত ঘটাতেও সাহায্য করে।

এবারের গ্রীষ্মে আমরা যে প্রচণ্ড দাবদাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছি, তার অন্যতম কারণ রেকর্ডসংখ্যক হারে গাছের পরিমাণ কমে যাওয়া! সূর্যের প্রখর রোদ আর শুষ্ক গরম বাতাস থেকে মুক্তির একমাত্র উপায়, আমাদের চারপাশটা গাছগাছালির সবুজে ভরিয়ে দেওয়া।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ট্রেন্ডে গা ভাসিয়ে এই মৌসুমে গাছ না লাগালেই ভালো। এখন গাছ লাগালে সেই চারা তো বাঁচবেই না, উল্টো শ্রম, সময় এবং অর্থ—সবটাই লসের খাতায় চলে যাবে। গাছের চারা মাটিতে শক্ত হয়ে নিজের অবস্থান ধরে রাখা এবং পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত আবহাওয়া। সাধারণত বর্ষাকাল; অর্থাৎ জুন-জুলাই মাস হচ্ছে গাছের চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। প্রকৃতিপ্রদত্ত বৃষ্টির পানি, আর্দ্র আবহাওয়া, অনুকূল তাপমাত্রা—সব মিলিয়ে বর্ষা মৌসুমে গাছের চারাগুলো সুন্দরভাবে প্রকৃতির মধ্যে বেড়ে ওঠে।

গ্রাফিকস: শাকিব হাসান

উপযুক্ত মৌসুমে গাছের চারা রোপণের পাশাপাশি তাদের অনবরত পরিচর্যাও জরুরি। তা না হলে গাছের চারা টিকিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব। বাংলাদেশের প্রকৃতিতে গাছের সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখার লক্ষ্যে প্রথম আলো বন্ধুসভা বেশ কয়েক বছর ধরে ‘বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি’ নামে কার্যক্রমটি বাস্তবায়ন করে আসছে। উক্ত কার্যক্রমে দেশব্যাপী বন্ধুসভার বন্ধুরা প্রথম ধাপে উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করে গাছের চারা রোপণ করেন এবং পরবর্তী সময়ে এক বছর ধরে সেই চারাগুলোর প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে বৃক্ষে পরিণত হতে সহায়তা করেন।

বন্ধুসভার বন্ধুরা বিগত ৫ বছরে দেশজুড়ে আড়াই লক্ষাধিক গাছের চারা রোপণ ও সুষ্ঠু পর্যবেক্ষণ করেছেন। প্রতিবছরের মতো এ বছরও বর্ষাকালে আবারও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মহাযজ্ঞে মেতে উঠবে। এ ছাড়া অধিকাংশ বন্ধু এই কর্মসূচির বাইরেও নিজ উদ্যোগে নিজেদের ছাদবাগান কিংবা রাস্তার ডিভাইডার সবুজে রাঙিয়ে দিচ্ছেন নানা জাতের দেশি গাছ লাগানোর মাধ্যমে।

আমরা যদি এখনো সচেতন না হই, তবে আগামী বছর তাপমাত্রা সবকিছু ছাড়িয়ে ৪৫-৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে গিয়ে ঠেকলেও খুব একটা অবাক হব না। যদি এই দাবদাহ থেকে বাঁচতে চাই, একটু স্বস্তির নিশ্বাস নিতে চাই, তাহলে আসুন উপযুক্ত মৌসুম ও স্থানে দেশি গাছের চারা লাগাই এবং সেগুলোর সঠিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রকৃতিকে অসংখ্য বৃক্ষ উপহার দিই। রিটার্ন গিফট হিসেবে আমরা পাব সুশীতল বাতাস, ছায়া আর বিশুদ্ধ অক্সিজেন।

গবেষণা সহযোগী, আরণ্যক ফাউন্ডেশন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ