বাবা চাইতেন, আমি যেন সেরাদেরও সেরা হই

বাবা চাইতেন, আমি যেন সেরাদেরও সেরা হইছবি: বন্ধুসভা

মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য হওয়ার কারণে বাবার সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই খুব বেশি বন্ধুত্ব ছিল না। একটা দেয়াল বরাবরই রয়েই যেত। বিষয়টা নিয়ে গোপন অভিমান সব সময়ই ছিল। বড় হয়ে বুঝতে পারলাম, বাবার ভালোবাসা আড়ালেই থেকে যায়। আমার ভালো রেজাল্টে বাবার চোখে আনন্দের অশ্রু কিংবা আমার অসুখে তাঁর ঘুমাতে না পারা, আমার সেই গোপন অভিমান ভুলিয়ে দিত।

বাবা অনেকটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘অপরিচিতা’ গল্পের বিনু দাদার মতো। চমৎকার কে বলেন চলনসই। স্কুলের উপস্থিত বক্তৃতায় প্রথম হয়েছি। সবার কাছে প্রশংসা পাচ্ছি। বাবা বললেন, ‘তোমার এই এই শব্দগুলো ভুল ছিল, আরেকটু ভালো করতে পারতে।’ এক মুহূর্তে সব প্রশংসা যেন মলিন হয়ে গেল। পরে বুঝেছিলাম, বাবা চাইতেন, আমি যেন সেরাদেরও সেরা হই।

বাবার এখন বয়স হয়েছে। সব সময় শুনে এসেছি, মানুষ বুড়ো হয়ে গেলে বাচ্চা হয়ে যায়। সেই সময়টা বাবা এখন পার করছেন। আর আমি হয়ে ওঠেছি বাবার বৃদ্ধ বয়সের ছোট বাবা। এখন বাবা প্রায়ই অসুস্থ হন। রাতে তাঁর শরীরের তাপমাত্রা বাড়ার সমানুপাতে আমার চিন্তাও বেড়ে যায়; এই বুঝি মাথায় ছায়া দেওয়া শতবর্ষী গাছটা হঠাৎ আসা দমকা হাওয়ায় ভেঙে যায়। এই দ্বিধায় চোখের ঘুম হারিয়ে যায়। তখন বুঝতে পারি, বাবারা সন্তানদের ভালোবাসেন, নিজেকে উজার করে ভালোবাসেন। শুধু সেই ভালোবাসা বুঝতে দিতে চান না।

লালবাগ, রংপুর