সৈয়দ শামসুল হকের ‘গল্পের কলকব্জা’

সৈয়দ শামসুল হক

গল্পের ভেতরেও গল্প থাকে। প্রতিটি লাইনে থাকে একটা ভাব, একটা ঘটনার ইঙ্গিত ও উপাদান। সাধারণ পাঠক তা হয়তো ধরতে পারে না বা ধরলেও তা বিলম্বে। কিন্তু যাঁরা লেখক, তাঁরা বই পড়ার সময় গল্পের প্রতিটি লাইন নিয়ে ভাবেন, প্রতি অনুচ্ছেদে মূল লেখকের লেখার প্রকৃত উদ্দেশ্য খুঁজেন। লেখকের সৃষ্টি গল্প সাধারণ না অসাধারণ, তা বোঝা যায় বিশ্লেষণের মাধ্যমে। তবে এই বিশ্লেষণ সবার দ্বারা সম্ভব নয়। অধিক পড়ে, লেখে ও ভালো জ্ঞান আছে এমন ব্যক্তিই চুলচেরা বিশ্লেষণ করে গল্পের প্রকৃত রহস্য, কৌশল বের করতে পারেন।

সৈয়দ শামসুল হকের ‘গল্পের কলকব্জা’ বইটিও এই বিশ্লেষণের প্রতীক। এখানে লেখক চারজন লেখকের চারটি গল্পের বিশ্লেষণ করেছেন। আমরা সাধারণ পাঠকেরা শুধু গল্প পড়ি, গল্প তৈরির কৌশলগত দিক খুঁজি না। লেখক এখানে সেটাই খুঁজেছেন তাঁর অর্জিত জ্ঞান দিয়ে। বিশ্লেষণ করেছেন গল্পের কৌশলগত দিক, চরিত্র, সময়, মূলভাবনা ও কল্পনার সংমিশ্রণ।

খালি চোখে যেমন একটা গাছকে দেখলে তার ডাল, লতাপাতা, ফুল, ফল ও রংটাই চোখে পড়বে। কিন্তু বিশ্লেষণ করলে এর ঔষধি গুণসহ নানা উপকারী ও অপকারী দিক বেরিয়ে আসবে। সৈয়দ শামসুল হকের ‘গল্পের কলকব্জা’ বইটিও ঠিক সে রকম। লেখকের লেখায় আগে ও পরে তিনি কী চিন্তা করেছেন, গল্পের সত্যতা রক্ষার প্রয়োজনে কীভাবে কী কী উপাদান রেখেছেন, কৌশল অবলম্বন করে গল্পকে প্রকৃতিগত বলে উপস্থাপন করেছেন, লেখকের অন্য সব গল্প ও অন্যদের গল্প থেকে ভিন্ন ও যে স্বতন্ত্র কৌশল ব্যবহার করেছেন ইত্যাদি বিশ্লেষণগুলো বইয়ের সার্থকতা এনে দিয়েছে।

রবীন্দ্রনাথের ‘নিশীথে’, প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা’, জগদীশ গুপ্তের ‘দিবসের শেষে’ আর মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ভয়ংকর’ গল্পের বিশ্লেষণে এই বই হয়ে উঠেছে গল্পের গবেষণাগার।

একনজরে
বই: গল্পের কলকব্জা
লেখক: সৈয়দ শামসুল হক
প্রকাশনী: ঐতিহ্য
প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ
মুদ্রণ: ঐতিহ্য মুদ্রণ শাখা
প্রথম প্রকাশ: মাঘ ১৪২৯